আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সভ্যসমাজে এটা ঘটতে পারে না



সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ চললে দেশ অসহিষ্ণু ও সংঘর্ষের দিকে এগিয়ে যাবে। কোনো সভ্য সমাজে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে না। গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য এটা ভয়াবহ ক্ষতিকর। এ ঘটনা মানবাধিকারবিরোধী। হামলাকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ঘুষ গ্রহণ সম্পর্কিত রিপোর্ট প্রকাশ করায় আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে রাস্তায় বের হতে না দেয়ার হুমকি, বিশেষ সংবাদদাতার গাড়িতে বোমা হামলা এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে আমার দেশ-এর কপি পোড়ানোর প্রতিক্রিয়ায় এসব মন্তব্য করেছেন দেশের প্রখ্যাত আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিকরা। ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেন, বর্তমানে যেভাবে দেশ চলছে তাতে এ ঘটনায় আমি মোটেই আশ্চর্য নই। পত্রিকায় কোনো ভুল বা অসত্য রিপোর্ট করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। কিন্তু এ ধরনের ভয় দেখানো সভ্য সমাজের কাজ নয়। গণতান্ত্রিক সমাজে এটা চলতে পারে না।

এটি মানবাধিকারবিরোধী। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী এই প্রতিবেদককে পাল্টা প্রশ্ন করেন, বর্তমানে দেশ যেভাবে চলছে তাতে এই ঘটনায় কী আপনি আশ্চর্য হয়েছেন? না জবাব পেয়ে তিনি বলেন, সুতরাং এখন সবার কাজ হওয়া উচিত এ ধরনের ঘটনার প্রতিবাদ জানানো। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এ ধরনের হামলা, হুমকি, পত্রিকা পোড়ানো কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। অতীতের সরকারগুলোও এ ধরনের কাজ করে ঘৃণার পাত্র হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে কোনো সংবাদ ছাপা হলে তার প্রতিবাদ করা যেতে পারে।

বোমা ছুড়ে বা পত্রিকা পুড়িয়ে তো সংবাদ চাপা রাখা যাবে না। এ ধরনের প্রবণতা অশুভ। তিনি বলেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ চললে দেশ অসহিষ্ণু ও সংঘর্ষের দিকে এগিয়ে যাবে। খবর বের হবেই। এ খবর মিথ্যা হলে প্রতিবাদ পাঠানো যেতে পারে কিংবা পাল্টা খবর দেয়া যেতে পারে।

সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ বিপজ্জনক ইঙ্গিত। প্রবীণ সাংবাদিক-সাহিত্যিক ফয়েজ আহমেদ বলেন, আওয়ামী লীগ তো ক্ষমতায় এসেই লাঠি হাতে নিয়েছে। লাঠি দিয়েই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর হামলা চরম নিন্দনীয়। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর এমন কোনো কার্যক্রমের সঙ্গে সরকার বা রাষ্ট্রের সম্পর্ক থাকা বাঞ্ছনীয় নয়।

আমার দেশ-এর ওপর সাম্প্রতিককালে নানা প্রকার নির্যাতন নেমে এসেছে। পত্রিকাটি যা ন্যায়নিষ্ঠ বলে মনে করে তাই প্রকাশ করছে। এটা তো অপরাধ হতে পারে না। সংবাদপত্রের কোনো ভুল হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ বলেন, সুস্থ চিন্তার কোনো লোক এ কাজ করতে পারে না।

সংবাদপত্রের ওপর এ ধরনের হামলার কথা ভাবতেও কষ্ট হয়। এ ধরনের অসিষ্ণুতা চলতে পারে না। মানবাধিকার কমিশনও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছে। এই হামলা দুর্ভাগ্যজনক। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ সরকার একদলীয় বাকশাল গঠন করে ৪টি বাদে সব সংবাদপত্র বন্ধ করেছিল।

এই হামলা আবার সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধের প্রয়াস কীনা? এই প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক মোজাফফর বলেন, তখনকার পরিস্থিতির সঙ্গে এ ঘটনা মেলানো যাবে না। তবে অসহিষ্ণুতাই বড় কথা। এ ধরনের ঘটনা গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য খুব ক্ষতিকর। আগামী দিনগুলোতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। প্রখ্যাত আইনজীবী ড. এম জহির বলেন, যে কোনো সরকারের উচিত গণমাধ্যমকে হামলার হাত থেকে রক্ষা করা।

কারণ, সবাই চায়, দেশে স্বাধীন গণমাধ্যম থাকুক। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর চেয়ারম্যান এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, কোনো সভ্য সমাজে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে না। এটা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। তিনি বলেন, হামলা খুবই খারাপ বিষয়।

পত্রিকার কোনো রিপোর্ট নিয়ে আপত্তি থাকলে প্রতিবাদ করা যেতে পারে। কিন্তু এজন্য সংবাদপত্রের ওপর হুমকি-ধমকি-হামলা মেনে নেয়া যায় না। এটা গুরুতর অপরাধ। যারা করেছে তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ড. শাহদীন মালিক এ হামলা ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান।

তিনি বলেন, কোনো পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট যদি অসত্যও হয় তবে তা প্রতিকারের আইনগত বহু রাস্তা খোলা আছে। আইনের পথে না গিয়ে বেআইনি পথে চলতে থাকলে শুধু অপরাধই হয় না গণতন্ত্রেরও ধ্বংস ডেকে আনে। সবার মতো আমিও আশা করি, গণতন্ত্রের ন্যূনতম যে শর্ত অপ্রিয় সমালোচনা মেনে নেয়ার মনমানসিকতা, সবারই থাকতে হবে। গণতন্ত্রের ধ্বংস আমরা কেউই চাই না। Click This Link


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.