.... তবুও আমি স্বপ্ন দেখি ... (স্বপ্ন, বাস্তব এবং ব্লগের সর্বস্বত্ব ব্লগার কতৃক সংরক্ষিত)
জেমস ক্যামেরনের নুতন সায়েন্স ফিকশন মুভি এ্যাভাটার আজ ১৮ ডিসেম্বর বিশ্বব্যাপি মুক্তি পেয়েছে। এর আগে গত ১৬ ডিসেম্বর থেকে পৃথিবীর কিছু সীমিত সংখ্যক সিনেমায় মুভিটা দেখানো হচ্ছিল। সৌভাগ্যবশত আমি যে সিনেমার আনলিমিটেড মেম্বার, সেখানেও দুদিন আগেই মুক্তি দেয়া হয়েছিল মুভিটা। প্রথম দিন কাজের চাপের কারণে দেখতে পারিনি। তবে দ্বিতীয় দিন আর কিছুই আমাকে আটকে রাখতে পারেনি।
সকাল থেকেই ঠিক করে রাখি আর যাই করি, এ্যাভাটার আমাকেই দেখতেই হবে। গত এক বছর এটা এক নুতন যন্ত্রণা হয়েছে আমার। নামকরা নুতন ছবি রিলিজ হবার প্রথম দিনে দেখতে না পারলে একটা অন্যরকম অস্বস্তি কাজ করতে শুরু করে। যাইহোক, ইনকাম ট্যাক্স সংক্রান্ত কিছু কাজ ছিল। সেগুলো শেষ করেই দৌড় দিলাম সিনেওয়ার্ল্ড এর দিকে।
ক্ষিদের জ্বালায় পেট চো-চো করছে তখন। সে দিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। মন বলছে এ্যাভাটার কলিং!
এ্যাভাটারের দুটো ভার্সন রয়েছে। থ্রিডি এবং টুডি। টিকেট কাউন্টারে একটা নুতন মেয়ে বসেছিল।
তার বাঁকা হাসিকে অগ্রাহ্য করে ছোঁ মেরে থ্রিডি-এর টিকেট কেটে ছুটলাম স্ক্রিনের দিকে। অত দ্রুত যাওয়ার যদিও দরকার ছিল না। শুরু হতে তখনও আরও ত্রিশ মিনিটের মত বাকি। এদিক-সেদিক হাটাহাটি করে সময় কাটিয়ে এক সময় ঢুকলাম মুভি দেখতে। ধীরেধীরে চোখে তুলে নিলাম গ্লাস।
প্রবেশ করলাম জেমস ক্যামেরনের তৈরী করা নুতন ভূবন - প্যান্ডোরায়।
এ্যাভাটারকে এক শব্দে ব্যাখ্যা করা খুব কঠিন। তবুও সেটা করতে হলে আমি বলবো, “মহাকাব্যিক”। শুধু ছবির কাহিনী নয়, এর প্রতিটা পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে মহাকাব্যিক রুপকথা। আজ ২০০৯ সনের ডিসেম্বরে যে মুভিটা মুক্তি পেলো, সেটার পরিকল্পনা হয়েছিল ১৯৯৬ সনে।
কিন্তু তখন মুভিটা বানানো সম্ভব হয়নি কেননা পৃথিবীর টেকনলজি জেমস ক্যামেরনের কল্পনাকে রুপালী পর্দায় রুপ দেয়ার মত পরিপক্ক ছিল না। পরবর্তিতে যখন সেটা আবিষ্কার হয়েছে, তখনই এই মুভি বানানো হলো। উল্লেখ্য যে এই মুভিতে কম্পিউটার বিজ্ঞানের এনিমেশন বিভাগের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ করা হয়েছে।
এতো গেলো প্রযুক্তির কথা। আর শিল্প? সেখানে মুভিটা চলে গিয়েছে অন্য এক অনবদ্য অবস্থানে।
সায়েন্স ফিকশনকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে একটা ভিন্ন মাত্রায়। এলিয়েন বলতে আমরা বুঝি বাইরের গ্রহ থেকে আসা প্রানী। কিন্তু এই এলিয়েন উপাধিটা আমাদের জন্যও প্রযোজ্য হতে পারে, তাই দেখানো হয়েছে এই মুভিতে। অনেকটা যেন পাঁচশ বছর আগের গল্প পাঁচশ বছর পরের সময়ের ফ্রেমে দেখানো হয়েছে। ঠিক যেভাবে এক সময় ইউরোপিয়ানরা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে উপনিবেস স্থাপন করেছিল, সেখানকার অভিবাসীদের উপর অকথ্য অত্যাচার এবং হত্যার স্টিমরোলার চালিয়েছিল, সেভাবেই এবার পৃথিবীর মানুষ প্যান্ডোরায় যায় উপনিবেস স্থাপনের জন্য।
প্যান্ডোরা হচ্ছে পৃথিবী থেকে ৪.৩ আলোকবর্ষ দূরে, পৃথিবীর সবচেয়ে নিকটবর্তি নক্ষত্র আলফা সেন্টুরাইয়ের কক্ষপথে অবস্থান করা পলিফেমাস গ্রহের জঙ্গলে পরিপূর্ণ তিনটা উপগ্রহের একটা। মজার ব্যাপার, পৃথিবী এগিয়ে গিয়েছে, সময় এগিয়ে গিয়েছে। অথচ আজও মানুষের অবস্থান একই রয়েছে। আজও মানুষ স্বার্থের কাছে বন্দি। প্যান্ডোরাতে এমন এক মৌল রয়েছে যা পৃথিবীতে এনে বিক্রি করলে অকল্পনীয় লাভ করা সম্ভব।
আর সেই মৌলের লোভেই অনেকটা ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানীর মতই একটা কোম্পানী যায় সেখানে বানিজ্য করতে। সাথে ছিল অত্যাধুনিক সামরিক বহর। আর তাদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য সেখানে কারা ছিল? তির-ধনুক হাতে দাড়ানো স্থানীয় প্রতিপক্ষ না'ভি।
যে মৌলের সন্ধানে সেখানে মানুষ গিয়েছিল, সেই মৌলের সবচেয়ে বড় খনি ছিল না'ভিদের গ্রামের ঠিক নিচে। ফলে তাদের সেখান থেকে উচ্ছেদ করাটা জরুরী হয়ে পড়েছিল।
তবে উচ্ছেদের প্রাথমিক পর্যায়ে মানুষ একটা ডিপলোমেটিক সলিউশনের চিন্তা করে। তারা না'ভি এবং মানুষের জিনের সমন্বয়ে এক ধরণের এ্যাভাটার তৈরী করে যা মূলত একেকজন মানুষ নিয়ন্ত্রন করে। উল্লেখ্য যে এ্যাভাটার ইয়াহু ম্যাসেঞ্জার বা ফার্মভিলেও ব্যবহৃত হয়। ধারণাটা হুবাহু একই। এ্যাভাটার একটা বাহ্যিক রুপ যার পেছন থেকে একজন নিয়ন্ত্রন করে সেটাকে।
এভাবে যখন ধীরেধীরে না'ভিদের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করতে থাকে মানুষ, তখন একজন বিজ্ঞানী মারা যায় যার এ্যাভাটার তৈরী হচ্ছিল প্যান্ডোরাতে। ফলে তার পঙ্গু মেরিন অফিসার জমজ ভাই জ্যাককে তার স্থানে পাঠানো হয়। এর মূল কারণ আর কিছুই নয়, তাদের জেনেটিক কোডিং এর মিল।
জ্যাকের এ্যাভাটার তৈরীর পর জ্যাককে ট্রেনিং দিতে জঙ্গলে নিয়ে গেলে সেখানে সে হারিয়ে যায় এবং পরবর্তিতে দূর্গম জঙ্গলে তার সাথে নাটকীয় ভাবে পরিচয় হয় জঙ্গলের রাজকন্যার সাথে। রাজকন্যার সাহায্যেই জ্যাক প্রবেশ করে না'ভিদের দলে।
আর এখান থেকেই মূলত শুরু হয় গল্পের। জ্যাককে ব্যবহার করে মানুষ জয় করতে চায় না'ভিদের। কিন্তু সেই জ্যাকই ধীরেধীরে বিশ্বাসঘাতকতা করতে শুরু করে স্বগোত্রের সাথে। ফলে ধীরেধীরে শুরু হয় অসম দুই প্রতিপক্ষের মাঝে এক মহাকাব্যিক যুদ্ধের।
আচ্ছা, এ্যাভাটার কিসের গল্প? উত্তরটা একটু কঠিন।
কল্পবিজ্ঞান? ভালোবাসা? নাকি মানবতার? সম্ভবত শেষেরটা, কিম্বা তিনটারই! কল্পবিজ্ঞানের মাঝে অসম ভালোবাসা এবং সর্বপরি মানবতার প্রতিষ্ঠা। প্রায় তিন ঘন্টার এই মুভি যেন একবিংশ শতাব্দির এক নুতন মহাকাব্য। জেমস ক্যামেরন আগেও দিয়েছে অসাধরণ কিছু মুভি - এলিয়েন, টারমিনেটার ১, ট্রু লাইস, টারমিনেটার ২ এবং টাইটানিক। এবার দিল এ্যাভাটার। দেখার বিষয় এই মুভি আগের সেই অসাধারণের লিস্টে প্রবেশ করতে পারে কি না।
১৮ ডিসেম্বর ২০০৯
ডাবলিন, আয়ারল্যান্ড।
বি.দ্র. - একটা ভুল ছিল লেখাটায়। ছবিটার পরিকল্পনা করা হয় ১৯৯৬ সনে। দৌড়ের উপরে ছিলাম লেখার সময়। তাই ১৯৯৬ এর পরিবর্তে ২০০৬ লিখে ফেলেছিলাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।