আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মরণ কামড় !!!(ধারাবাহিক-৫ম ও শেষ পর্ব)।

আমি এখন আছি তবে থাকবো কিনা জানি না। "কবি'র কবিতা সে তো পাঠকেরই ঋণ। "

৫ম পর্ব: রিফাতের নারী কাহিনী অফিসে অন্যান্যদের কাছে নিছক ছেলেমানুষি,বা কলিগের সথে সম্পর্ক খারাপ হবে বিধায় চেপে যাওয়া....সব কিছুই একটা সহ্যের ভিতরে, কিন্তু এ ব্যাপারগুলো স্ত্রী হিসাবে ভাবী'র মেনে নেওয়া এক কথায় অসম্ভব। তারপর ও বাঙালী রমণীর হৃৎপিন্ড তো দশটা...হয়তো পৃথুলা'র দিকে তাকিয়ে মেনে নিতে পারতো........। ভাবী, বাপের বাড়ী থেকে রিফাতকে কনট্রোল করার ব্যার্থ চেষ্টা করতেছিলো...কিন্তু রিফাত নিজস্ব ট্র্যাকেই চলছিলো..।

তবে তার আকুলতা দেখেছি মেয়েকে নিয়ে..। আমরা যখন তাকে পৃথুলা'র কথা মনে করিয়ে দিতাম সে কাহিল হয়ে পড়তো, আমরা তাকে আশ্বস্থ করতাম আর বলতাম আপনি মেয়ের দিকে তাকিয়ে সব ভুলে যান, ভাবীকে নিয়ে আসেন...। সে বলে....কী যে বলিস ?...তোরা আসল খবর জানিস না....রিজু(রিজোয়ানা) বলেছে......স্টাম্পে লিখিত দিতে হবে,আলাদা বাসা নিতে হবে,এ চাকরি ছেড়ে দিতে হবে....। এবার বল, স্টাম্পে সাইন দিয়ে সংসার করব নাকি !আমি আমার অসুস্থ মাকে ছেড়ে কোথাও যাব না, বিয়ের সময় দেনমোহরে ৫ লাখ টাকা ছিলো,আমি ওগুলো যোগার করতেছি...। সেদিন আমার মেয়েটাকেও আমাকে দেখতে দেয় নাই...।

ফোনে কথা বলতে চাইলাম ..লাইন কেটে দিল। অনেক দিন মেয়ের সথে কথা বলতে না পেরে সে গিয়েছিলো শ্বশুর বাড়ীতে মেয়েকে দেখতে..। বাড়ীর বাইরে দাড়িয়ে ও শ্যালিকাকে ফোন দিল....দারোয়ান সহ পৃথুলা বের হয়ে আসল,সাথে পৃথুলা'র কিছু কাপড়চোপর। রিফাতের আর বুঝতে বাকী থাকল না...সে পৃথুলাকে বাসায় নিয়ে আসে। প্রথম দিন ঘুম থেকে জেগেই নাকি আম্মু'র জন্য কান্না করেছিল।

তারপরে ফুপী শায়লা'র সাথে শোয়...এখন মোটামুটি মানিয়ে নিয়েছে..তবে রিফাত অফিস থেকে ফিরলেই সে আম্মুর কাছে যাবে, নানু বাড়ী যাবে..কান্নাকাটি করে.। গতকাল সন্ধ্যায় বেশ জোড় করলে রিফাত প্রথম বারের মতো মেয়েকে মারে..পৃথুলা শায়লা'র আঁচলে গিয়ে লুকায়..। মেয়ের গায়ে হাত তুলে রিফাত, মনে ভীষন ব্যাথা পাই...বাসার ছাদে ওঠে বেশ কিছুক্ষন কান্না করে.। এ কদিন ভাবী একবার ও ফোন দেয় নাই। রিফাত সকালে মেয়েকে ঘুম থেকে তুলে দাত ব্রাশ করিয়ে,গোসল করিয়ে অফিসে আসতো।

সে শায়লার হাতেই ভাত খাই। ঐ দিকে ভাবী ডিবোর্স পেপার রেডি করতে থাকে ,রিফাতকে ফোন দিয়ে ডিবোর্সের ব্যাপারে হুমকী ও নারী নির্যাতন আইনে কেইস ফাইল করা হবে বেল জানান দেয়। রিফাত তার বড় ভাই,আপাদের পরামর্শ শুনে চুপ করে থাকে...। মেয়েকে বেশিদিন রাখতে পারে না রিফাত। মেয়েটা তো ছোট, এ সময়ে বাচ্চারা মা'র সাথে থাকতে বেশী পছন্দ করে....পৃথুলা'র কান্নাকাটিতে রিফাত তাকে তার মার কাছে দিয়ে আসে....।

পারিবারিক পর্যায়ে মিটিং বসে,কিন্তু ভাবীদের পরিবার আর কোন সুযোগ দিতে রাজী নয়,ফলে বৈঠক কোন কাজে আসল না..বরং রিফাত আর ও বেপোরোয়া হয়ে উঠল...। পরিবারের সবাই কী করবে ভেবে পাচ্ছিল না....একদিন তার বড়বোন এসে বললেন, তার শ্বশুর , শ্বাশুরী এই বছর ওমরাহ করবে বলে নিয়ত করেছে..রিফাতের তো ইন্টারন্যাশানাল পাসপোর্ট আছে..সে সহ যাক। ওখানে গেলে হয়তো আল্লাহর অশেষ রহমতে রিফাত আর রিজুর মধ্যে সমস্যা দুর হয়ে যাবে.......। শেষ পর্ব: রিফাত ওমরাও করে দেশে আসার পরের দিনই অফিস জয়েন করে। চকলেট নিয়ে আসে সবার জন্য,অফিসের মুরুব্বীদেরকে তসবি গিফট করে।

ঐ দিন লান্স পিরিয়ডে সবাই মিলে ওখানের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলাম.....। সে বলা শুরু করল...." তোরা মনে করিস আমি খুব খারাপ মানুষ, ছাত্র জীবনে আনেকের হাত পা ভেঙ্গেছি, ফাইপগান আর এলজি চালাতে চালাতে হাতের তালু শক্ত হয়ে গেছে তার পর ও আল্লাহ আমার উপর মেহেরবান আছেন। খোদ মক্কায় থেকে আল্লাহর ঘর খুলতে অনেকে দেখে না ..আমি দেখেছি সেই স্বর্ণের দু্য়ার খুলতে..সৌদি রাজপরিবারের লোকরা ঝারু দিতে.....জানিস আমি কয়েক মিনিট স্তম্ভিত ছিলাম...শুধু আল্লাহ আল্লাহ করে শোকর গুজার করতে ছিলাম ......"। রিফাত ওখানকার অনেক ছবি তুলে আনল,সে মোটামুটি অল্পবয়সে ওমরাহ করেছে বলে ওখানকার স্থানীয়রা তাকে বেশ সম্মান করেছিল। এমন কী ওখানে একটা বিয়েতে ও সে দাওয়াত পায়,তার তোলা বেশ কিছু ছবি ও ভিডিও দেখলাম..।

তখন ছিলো রমজান,ওমরাহ করার পর রিফাতের মাঝে পরিবর্তন আসে , মাথায় সবসময় টুপি থাকতো,নিয়মিত ওয়াক্তে নামাজ পড়া আর তার সাথে কেউ দেখা করতে আসলেই সে মক্কা মদিনার কথা বলতো। অফিসের সবাই বলতে লাগলো আল্লাহ'র অশেষ রহমতে রিফাত এবার সুখী হবে। শরতের রোদেলার মতো ভাবী ও ফিরে আসলো...ঈদের আগে ভাবীকে ত্রিশ হাজার টাকা দেয় ঈদ শপিং এর জন্য। ঈদের পর ভাবী বেশ কিছুদিন ছিল রিফাতের বাসায়। তবে রিফাতের প্রাত্যহিক কাজে কিছুটা পরিবর্তন আসলেও তার নারী প্রীতি টিকে রইল।

রিজওয়ানা একদিন রিফাতের মোবাইলে মেসেইজ ইনবক্সে কিছু 'এস এম এস' দেখে রিফাতের সাথে ভীষন এক ঝগড়া লাগাই......। পরের দিনই সে আবার বাপের বাড়ী চলে যায়..। বেশ কিছুদিন কেটে গেল। রিফাত ও কিছুদিনের জন্য আবার ছুটি নিল ঢাকার কোন এক বন্ধুর বাসায় বেশ কিছুদিন থেকে আসল। অফিসে আমরা খুব টেন্সড ছিলাম তার ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে.।

একদিন রিফাত মেয়েসহ অফিসে আসল। পৃথুলা আগের থেকে বেশ লম্বা দেখাচ্ছিল। সবাই বলতে শুরু করল ..আরে রিফাত ভাই আপনি তো তারাতারি বেয়াই হয়ে যাবেন..মেয়েতো তো বড় হয়ে গেছে...। রিফাত বললো ,"আর বলিস না..ওকে বাইকে নিয়ে গত ঈদে বেড়াচ্ছিলাম...যে দেখলো সে বললো এই মেয়েটা কে? এটা যে আমার মেয়ে কেউ বিশ্বাস করে না."। রিফাত আমার ডেস্কে তার মোবাইল দুইটা রেখে পাশে ডিরেক্টর স্যারের সাথে দেখা করতে গেল।

পৃথুলা আমার পাশেই বসা,আমি তার সাথে মজা করতে ছিলাম তার আম্মু'র কথা জিজ্ঞেস করছিলাম.. শুধু হাসে আর বলে আমি গেইম খেলবো আংকেল। আমার পিসিতে 'জারদিন'(একটা গেইম) ডাউনলোড করা ছিলো সে সেটা খেলতে লাগল। এমন সময় রিফাতের মোবাইলে ফোন আসে,আমার সম্মুখে হওয়াতে কলারের নামটা ও বেশ চোখে পড়ল..স্ক্রীনে.নামটা দেখে একটু কেমন লাগল.!!নিয়মিত বিরতিতে একই ফোন বার বার আসতে লাগলো...। আমি জরুরী মনে করে পিওন দিয়ে রিফাত ভাইকে ডেকে পাঠালাম.। সে স্যারের রুম থেকে বের হয়ে আমার এগিয়ে দেওয়া ফোনটা রিসিব করলো মোবাইলের স্ক্রীনটা একটু দেখে., হ্যালো , কী বলবে বলো তাড়াতাড়ি , আমি স্যারের সাথে মিটিংয়ে আছি, কী (উত্তেজিত)! আবার বলো ? ডিবোর্স লেটার পাঠিয়েছ.......!! বেয়াদপ..............বলে ফোনটা ফ্লোরে ছুড়ে ফেলে সে হনহন করে অফিস থেকে বের হয়ে গেল।

বাবা'র এই রুদ্রমু্র্তি দেখে পৃথুলা কাঁদতে লাগল ...আমরা তাকে শান্ত করার চেষ্টা করতে লাগলাম। জানেন,মোবাইল স্ক্রীনের কলার আই ডিতে ভেসে উঠেছিলো যে নামটা সে টা হচ্ছে .................... "মরণ কামড়"!!!!!!!!!!!!!!!!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।