আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘অখণ্ড’ থেকে ছিটকে পড়ার বেদনার নাম ‘জিজ্ঞাসা’

benjinkhan06@yahoo.com

ভাবনামা : ১ আমার আসলে নতুন কিছুই বলার নেই। মানুষ আদৌ নতুন কিছু বলে কি না সেখানেও আমার রয়েছে ঢের সন্দেহ। সে কারণে ‘সৃষ্টি’ ও ‘সম্পাদনা’ শব্দদ্বয়ও আমার কাছে থতমত অবস্থায় আছে। মানুষ কি আদৌ সৃষ্টি করে? নাকি সম্পাদনা করে? মানুষ কি উৎপাদন করে নাকি পুনঃউৎপাদন করে? মানুষ কি জ্ঞান দ্বারা চালিত হয় নাকি পরিপার্শ্ব’র পুঞ্জীভবন জ্ঞানরূপে মানুষে প্রকাশিত হয়? মানুষযে প্রকৃতির সংজ্ঞা দেয়, বিচার-বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা দেয় তাতে কি মানুষ প্রকৃতি থেকে পৃথক হয়ে যায় নাকি প্রকৃতি স্বয়ং আপনি উপস্থাপিত হয়? প্রকৃতি, কার সামনে উপস্থাপিত হয় এবং কেনইবা? জগৎ-প্রকৃতির এতসব মহিমা যে ‘মানুষ’ ব্যক্ত করে সে কীভাবে বিচ্ছেদ্য প্রকৃতি থেকে? এখানেই কি এক শাশ্বত কর্তা সত্তার উপস্থিতি! আর যদি তাই-ই হয় তবে কর্তা সত্তার কারণ কী? অতঃপর ‘মানুষ’ ও ‘কর্তা’ সত্তার পরস্পর সম্পর্ক কী? মানুষ কি কর্তার কারণ না কর্তা মানুষের! এ জিজ্ঞাসার কি সমাধান মিলেছে? আদৌ কি সমাধান মিলবে? আদৌ কি এ কোনো জিজ্ঞাসা? নাকি ধাঁধা? জিজ্ঞাসাই বলি আর ধাঁধাই বলি এ শব্দদ্বয়ের উপস্থিতিই প্রমাণ করে তা অস্তিত্ব। আমার বিবেচনায় ‘মানুষ’-এর কাছে এতো সব কোনো জিজ্ঞাসাই নয়, বরং তা জিজ্ঞাসা ‘ব্যক্তির’ জন্য।

কেননা ‘মানুষ’ অখণ্ড আর ‘ব্যক্তি’ খণ্ড। খণ্ডের অখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বেদনায় ‘জিজ্ঞাসা’। আর এ বেদনা থেকে মুক্তির পথ আমার বিবেচনায় ‘অখণ্ড’। আর তার বাহন বিদ্যা। কেননা অ-বিদ্যাই খণ্ডের হোতা আর বিদ্যা অখণ্ড।

কিন্তু বিদ্যা কোথায় অবস্থান করে? আমাদের ধারণা, মৃত কাগজে কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে তা অবস্থান করে জীবন্ত গ্রন্থে। আর সে গ্রন্থ হলো ‘জগৎ-প্রকৃতি’। যুগে যুগে ব্যক্তি তার বেদনাকে প্রকাশ করেছে ভাষায়-গানে-ছবিতে, বর্ণমালার মালায়, সাদা কাগজ আর কালো কালির সামরিক শৃঙ্খলায়। এ সামরিক শৃঙ্খলা যাকে, আমি বলি ‘বই’ বা ‘গ্রন্থ’। এ (বই) বড়জোর আমাদের ইশারা দিতে পারে কিন্তু প্রকৃত বেদনার অবসান জীবন্ত গ্রন্থে; মানুষ-প্রকৃতিতে।

আমাদের পাঠ করা উচিত ‘মানুষ’, মানুষের দ্রোহ, জগৎ-প্রকৃতি ও তার গতিবিধি। আর পাঠ করা উচিত খণ্ডের অখণ্ডেলীনের কাফেলা। কেননা, এ জগৎ-প্রকৃতি, এ আয়াত, এ নিদর্শন মানুষকে বিষ্ময় দান করে। জগৎ-প্রকৃতি বনে যায় অনন্ত গতিময় বিশালত্বের সীমাহীন কিনারা হীন আয়তন; আর একই সাথে আপনি (অহম) ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হতে হতে হতে নিঃশ্ব-লীন-সীমানা হীনে বিলিন। অর্থাৎ অখন্ডেলীন।

আর তখনই শান্ত হয়, খান্ত হয় জিজ্ঞাসার গতি-- আমি কে? তুমি কে? সে কে? কোত্থেকে আসি কোথায় যায়! কে আমার জনক! কি বা তার সম্পর্ক!! যেমন এ বিষ্ময়, এ ধাঁধা, এ জিজ্ঞাসা থেকে মুক্ত অদেখা-অধরা-অনাদি-দয়াময়-প্রভুনিরঞ্জণ। শান্ত-ধির-ঠান্ডা আর জিজ্ঞাসার বেদনা মুক্ত ‘আমি’ তখন শুধুই প্রকাশমান, বিকাশমান। ‘ওহি’ আর ‘বহি’ আমাদের সেই অনন্ত নিত্যানন্দের কাফেলায় শরিক হতে ইশারা দেয়। কথাপ্রকাশের বহি মেলায় এই ওহি নাজেল হয়--আমার আমি, দেহ আর দেহি লীলা করে এক হয়। মুক্তির খেয়া যদি সে ইশারা আত্মস্থকরে তবেই ধন্য আমাদের ‘আমি’, অনন্ত-অশান্ত-উত্তাপ্ত-ভঙ্গুর আত্মা।

১৪ সেপ্টেম্বর ০৯, ঢাকা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।