আমি এখন আছি তবে থাকবো কিনা জানি না। "কবি'র কবিতা সে তো পাঠকেরই ঋণ। "
কিছু কথা:
এই ছোট্ট পৃথিবীতে একটা বস্তু'র উপর আমার কোন কতৃত্ব নাই.সেটা হচ্ছে আমার মন...অসম্ভব গোঁয়ার। কোন কিছু বুঝতে চাবে না,সে চলবে নিজের মনে..তার জন্য কোন বাধায় বাধা না। তার যুক্তি অখন্ডনীয়।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে সে দুনিয়া মাতিয়ে তুলে, অন্যথায় গুমরে মুষরে যাবে তবুও কম্প্রোমাইজে আসে না। সবাই পরামর্শ দেয় এই বলে " কনট্রোল ইউরসেলফ".......শুনে আর হাসে আমার মন.....বলে রিফাতের বাপের ও সাধ্য নাই তাকে বাঁধে.......।
প্রথম পর্ব:
সেলুনে দাঁড়িয়ে বামহাতে মাথার সামনে থেকে পিছনের দিকে হাত বুলাচ্ছে রিফাত ,আর ভাবছে...চুল কখন উঠবে..আহা আগে কী সুন্দর চুল! এই বলে হঠাৎ স্তম্ভিত হয়ে বলে "আস্তাগফিরুল্লাহ" এবং দুইহাতে তওবা খায়। মনে মনে আল্লাহ আল্লাহ বলে মাফ চাইতে লাগলো। সে সদ্য ওমরাহ করেছে।
ওমরাহ করতে গেলে হজের প্রায় সব নিয়মই পালন করতে হয়। কিছুটা আনমনা রিফাত...তার ,মনটা তখন পবিত্র মক্কা শরীফের বাতাসে..। ডাক পড়লো তার..। সেইভ চলছে। চৌকস ছেলেটা ফোম লাগাচ্ছে সারা মুখে...কপালে যখন লাগাতে গেল...তখন রিফাত বলে"ওখানে লাগাস না"।
পাশের আরেকটা চেয়ারে এক কিশোর চুল কাটছে। কিশোরের নির্দেশনা মতো মাথার কোন দেশে কী পরিমান চুল থাকবে তা নিয়ে নাপিতের কাঁচির এক অসম যুদ্ধ, পরিবেশটাকে অসহ্য করে তুলল। সেইভের রিফাত সেদিকে একটু তাকালো...বিরক্তির সুরে বলল "শালা, এবার গান শুনি"।
পকেট থেকে মোবাইলটা নিয়ে মিউজিক প্লেয়ারটা অন করে দিল..। গান চলছে..সেইভের স্পিড টাও কিছুটা বেড়ে গেল।
তারপর ও পাশ্ববর্তি নাপিতের কাঁচির আত্মচিৎকার তার কানে আসতে লাগলো..। সে ভাবতে লাগলো, চাইলে সে ও তার জীবনে অনেক কিছু এভাবে ছেঁটে দিতে পারে.....হঠাৎ গান বন্ধ হয়ে ফোনে রিং হতে লাগলো.......মোবাইলে পরিচিত নাম ভেসে ওঠে....একটু দেখেই ডিসকানেক্ট করে দেয়...। আবার ফোন আসে....সে পুনরায় কেটে দেয়...। তৃতীয় বার ধরেই একটা ধমক..কী সমস্যা, বলছি না আমার আসতে দেরী হবে....তুমি একা চলে যাও...এই বলে রিফাত লাইনটা কেটে দেয়........
সেইভ শেষ। পকেট থেকে ৩০ টাকা দিয়ে সে বেড়িয়ে পড়ে....গলির মুখ থেকে একটা রিক্সা ডেকে নেয়.....।
মোবাইল আবার বেজে ওঠে। এখানে বলে রাখা ভালো, রিফাতের মোবাইল দুটি। রিলেশনসিপের বিভিন্নতায় দুটি মোবাইলেই ফোন আসে সংক্ষিপ্ত বিরতিতে...অনেক সময় দুটিতে একসাথেই আসে....কলার এর গুরত্ব অনুসারে সে কল রিসিভ করে...।
ফোন রিসিভ করে বলে মিশু কী খবর,জামাই বাসায় আছে.......ওক্কে ..আমি নামাজ পড়ে তোমাকে কল দিব সোনা ..বাই............।
২য় পর্ব :
নামাজ শেষ করে রিফাত মিশুকে ফোন দেয় আর হারিয়ে যায় রোমান্টিকে ফনোজগতের বাক্যালাপে।
তাদের কথোপকথনের সময় ঠোঁঠ যুগলের সংকুচিত স্ব-শব্দ সংযত আচরন পার্শ্ববর্তী তৃতীয় ব্যাক্তিকেও কৌতুহলী করত.। মিশুর সাথে রিফাতের পরিচয় মাস দুয়েক হবে..। আগ্রাবাদ এলাকায় একটা আই এস পিতে কাস্টমার কেয়ারে রিফাতের বদন্যতায় চাকরি পায় মিশু। সেটার সূত্র ধরে তাদের মধ্যে একটা মধুর সম্পর্ক গড়ে ওঠে........মিশুর এক ছেলে.. বয়স দেড় কী দুই ....স্বামী সহ সুখের সংসার তারপর ও কালের হাওয়া........অথবা বাধ্য হয়ে ।
রিফাত এ মানব জগতের এমন একটা চরিত্র যে কোন কিছুই গায়ে মাখে না....।
তার অনেক ভালো বন্ধু দেখেছি তবে মাস্তান মার্কা বন্ধুর ভিরে সে প্রায় নিজেকে কেমন যেন মানিয়ে নেয়। অফিস পাড়াতে এ নিয়ে তার যথেস্ট সুখ্যাতি আছে..। একসাথে চাকরি করি বলে দেখেছি..সে অফিসে টাইমলি কখনো আসে নাই ,আবার চারটা বাজলেই বলে আজ একঘন্টা অফিস বেশি করে ফেললাম.....। অফিসের এনভাইরনমেন্টটা নিয়ে সবাই প্রশ্ন তুলতে পারেন...। অফিসে রিফাত নিজেকে পরিচয় দেয় এনটারটেইনমেন্ট অফিসার হিসাবে,দুপুরে লান্স পিরিয়ডে মেয়েরা যখন একুরিয়ামে(কাঁচের ঘর বিধায়) ঢুকে..তার উপস্থিতি সেখানে অবধারিত হয়....বিশেষ করে মেয়েদের ব্যাপারে তার উৎসাহের কোন কমতি আমার চোখে পড়ে নাই...।
অফিস টা একটা লোকাল পিএসটিএন । সবার আগে মার্কেটে আসলেও অপরিণামদর্শী,অদক্ষ ব্যবস্থাপনায় খো্ড়াইয়া খোড়াইয়া চলে বিল্ডিংয়ের উপরে বিশাল টাওয়ার নিয়ে কোন রকমে এই বৈশ্বয়িক আর্থিক মন্দা ঠেকাচ্ছে ।
তার বিবাহিত জীবন সম্পর্কে যা জেনেছি তা মোটেও সুখকর কিছু নয়.। একটু এলোমেলো টাইপের ছেলে হওয়াতে সংসারে তার প্রভাব সতত প্রকাশ পেত। সরকারী সিটি কলেজে পড়ার সময় ভাবীর সাথে তার পরিচয়...ভাবী সুন্দরী।
তবে পয়সাওয়ালা ফ্যামিলি'র মেয়ে বলে বেশ কতৃত্ববাজ..রিফাত অনেকটা যু্দ্ধ করে রাজকন্যাকে জয় করলেও ঐ রাজত্বে তার এ বীরত্বকে যথেষ্ট হেয় করে দেখে সে প্রথম থেকে। এককথায় রিফাত শ্বশুর বাড়ীতে গিয়ে শান্তি পায় নাই। ওর শ্বাশুরী ও একমাত্র শালিকা ব্যাপারটা কোন রকম মেনে নিলেও ওর শ্বশুর কখনো মেনে নেয় নি....।
তার শ্বশুরের নাম জহির আহম্মদ। চট্টগ্রামের রেয়াজুদ্দিন বাজার মালিক সমিতির সভাপতি,উনার বাজারে তিনটে দোকান ও একটা বেশ বড় ফলের আড়ত আছে.. রিফাত শ্বশুর বাড়ীতে বেড়াতে গেলে ও উনার সামনে তেমন আসতো না।
একবার হঠাৎ সামনা সামনি পড়াতে রিফাত সালাম দেয়..। জহির সাহেব সালামের জবাব না দিয়ে মুখ ফিরিয়ে নেয় ..এতে সে চরম মাইন্ড করে....যার পরিপ্রেক্ষিতে ,সিটিকলেজের কিছু ষন্ডা মার্কা পোলাপান দিয়ে সে তার শ্বশুরকে বাজারে তার আড়তের সামনেই ধাক্কা ধাক্কি মতো ঘটনা ঘটায়...।
রিফাত তার সব বীরত্বপূর্ন কাজ অফিসে মেয়েদের সামনে জাহির করে বেশ জোর গলায়..আমাদের সামনেই সে এই জয়গাথার এক বয়ান দিচ্ছিল...। আমরা তাকে ভৎসনা সহ নিবৃত্ত করার ব্যার্থ চেষ্টা করেছিলাম...।
উপরোক্ত ঘটনায় শ্বশুর ও বুঝতে পারেন যে এ হেন কাজ তার মহামান্যবর জামাইয়ের দ্বারাই সম্ভব ..অত:পর রিফাতের সংসারে ইহা গার্মেন্টস গুদামের আগুনের মতো পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটায়...।
ভাবী বেশ কোমর বেঁধে ঝগড়া করে বাপের বাড়ী চলে যায়.......।
চলবে..........।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।