আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাতিয়ার দুঃখ ভাঙন যাতায়াত বিদ্যুত্ : শহর সরানো হয়েছে দু’বার : জোয়ার-ভাটায় নির্ভর যাতায়াত : ডিজেল জেনারেটরে হয় স্বল্প বিদ্যুত্



মেঘনার ভাঙন, যাতায়াতে জোয়ার-ভাটানির্ভরতা হাতিয়াবাসীর নিয়তির সঙ্গেই যুক্ত। দ্বীপবাসীর জীবন সংগ্রামে এ দুই দুঃখের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিদ্যুত্ সমস্যা। এখানে ডিজেলের বরাদ্দ বাড়লে বিদ্যুত্ উত্পাদন বাড়ে। আর ডিজেলের দাম বাড়লে কমে যায় বিদ্যুত্ উত্পাদন। তিন দুঃখ নিয়ে দিনযাপনকারী মানুষগুলোর জীবনকে একটু গতিময় করতে রয়েছে অনেক দাবি, অনেক আকুতি।

কিন্তু দ্বীপের মানুষের এসব আর্তনাদ সরকারের কানে খুব একটা পৌঁছায় না বলে অভিযোগ দ্বীপবাসীর। খরস্রোতা মেঘনা নদী তিন দিক থেকে হাতিয়াকে ভেঙে চলেছে দীর্ঘকাল থেকে। উত্তর-পূর্ব এবং পশ্চিমের ভাঙনে হাতিয়া প্রতি বছর হারাচ্ছে শত শত একর ঘনবসতিপূর্ণ জনপদ। দু’বার দ্বীপটির মূল শহর স্থানান্তর হয়েছে। বর্তমান হরনি ও চানন্দি ইউনিয়নে জেগে ওঠা চরাঞ্চল ছিল হাতিয়ার আদি শহর।

সেটি মেঘনায় হারিয়ে যাওয়ার পর বাতানখালী ছিল হাতিয়ার মূল শহর। এ শহর ভাঙনের কবলে পড়লে ১৯৮৬ সালে বর্তমান উচখালীতে হাতিয়া শহর স্থাপিত হয়। এছাড়া ভাঙনে তিন দিকের মানুষকে প্রতিনিয়ত বসত স্থানান্তর করতে হচ্ছে। জানা যায়, ভাঙনের কবলে পড়া সামর্থ্যবানরা ঢাকা এবং চট্টগ্রামে বাসস্থান তৈরির পাশাপাশি হাতিয়ার নতুন শহরেও বসত তৈরি করে। আর দরিদ্র অসহায় মানুষ আশ্রয় নেয় নতুন চরে।

এমনও অনেক পরিবার রয়েছে যারা নদী ভাঙন এলাকার কূলে কূলেই থাকে। মানুষ যে ভিটা ছেড়ে যায় সে ভিটাতেই তারা ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে। খরস্রোতা মেঘনার কবল থেকে উত্তর এবং পূর্বের ভাঙন রোধ করা সম্ভব না হলেও দ্বীপটির পশ্চিমের ভাঙন ঠেকানো সম্ভব হতো। কিন্তু এ নিয়ে কোনো উদ্যোগ নেই উচ্চ মহলে। ফলে এ অঞ্চলের মানুষের সব সময় বিকল্প বসবাসের চিন্তা অবধারিত হয়ে আছে।

এদিকে নোয়াখালীর মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে খরস্রোতা মেঘনাই হাতিয়াকে বিচ্ছিন্ন করে রাখায় নৌপথ ছাড়া যাতায়াতের কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু উত্তাল মেঘনা পাড়ি দেয়ার কোনো বাহন নেই এ পথে। জানা যায়, নোয়াখালী হয়ে প্রধানত যাতায়াত করে থাকে এ দ্বীপের মানুষ। চেয়ারম্যান ঘাট থেকে হাতিয়ার নলচিরা ঘাট, তমরুদ্দি ঘাট, চরচ্যাঙ্গা ঘাট ও জাহাজমারা কাঁটাখালী ঘাটে সি-ট্রাক বা লঞ্চ ভিড়ে জোয়ার-ভাটার সঙ্গে মিল রেখে। তবে ৫ লাখ মানুষের এ দ্বীপে যাতায়াতের জন্য বিআইডব্লিউটিসির সি-ট্রাক আছে মাত্র দুটি।

জোয়ার-ভাটা হিসাব করে সারা বছরই চলতে পারে সরকারি এ দুটি যান। এতে ৩০০ মানুষের ধারণক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু দিনে দুবারের বেশি যাতায়াতের সুযোগ নেই এতে। তাছাড়া শীত মৌসুমে ৩/৪ মাসের জন্য যাতায়াত করে ব্যক্তি মালিকানাধীন দুটি লঞ্চ। যাতে ধারণক্ষমতা মাত্র দুশ’।

যাতায়াত নিয়ে হাতিয়াবাসীর এ দুর্ভোগ লাঘবের কোনো উদ্যোগ নেই। যাতায়াতের ঘাটগুলোরও চরম দুর্দশা। যাতায়াতের ঘাট ছাড়াও মালামাল ওঠানামার জন্য রয়েছে বাংলাবাজার, কাজীর বাজার, সূর্যমুখী ও রহমত বাজার ঘাট। এসব ঘাটেরও দৈন্যদশা। চট্টগ্রাম থেকে প্রধানত মালামাল পরিবহন হয়ে থাকে।

হাতিয়াবাসীর যাতায়াতে বড় লঞ্চ দেয়ার দাবি দীর্ঘদিনের, যাতে বর্ষা মৌসুমেও নিরাপদ যাতায়াত সম্ভব হয়। কিন্তু তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেই কোনো সংস্থার। জাতীয় বিদ্যুত্ গ্রিডের সঙ্গে হাতিয়ার সংযোগেও বাধা খরস্রোতা নদী মেঘনা। ফলে স্থানীয়ভাবে ডিজেলচালিত জেনারেটর দিয়ে উত্পাদন হয় বিদ্যুত্। বর্তমানে এখানে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে এক মেগাওয়াট।

কিন্তু ডিজেল দিয়ে উত্পাদন চলছে মাত্র ২০০ থেকে ২৫০ কিলোওয়াট। ’৯৪ সালে ৪টি জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুত্ উত্পাদন শুরু হলেও তা এখন অকেজো প্রায়। একটি সম্পূর্ণ বন্ধ আছে। অপর তিনটিতে উত্পাদন চলে ঝুঁকি নিয়ে। জানা যায়, ভোলা জেলায় গ্যাস দিয়ে বিদ্যুত্ উত্পাদন শুরুর পর সেখানকার জেনারেটরটি হাতিয়ায় দেয়ার প্রস্তাব ঝুলে আছে দু’বছর ধরে।

কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। এদিকে বর্তমান জেনারেটরে বিদ্যুত্ উত্পাদনে প্রয়োজন ৪৫ হাজার লিটার ডিজেল। কিন্তু বরাদ্দ দেয়া হয় ৪০ হাজার লিটার। এছাড়া ডিজেলের দাম বেড়ে গেলে এ বরাদ্দও কমে যায় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। জানা যায়, হাািতয়া শহরে সকাল ৯টা থেকে ২টা এবং বিকালে ৪টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত রেশনিং করে বিদ্যুত্ দেয়া হয়।

বিকালের বিদ্যুত্ গ্রামাঞ্চলের এলাকা জাহাজমারা, সাগরিকা, চৌমুহনী, খবির মিয়া বাজার, তমরুদ্দি, আফাজিয়া, খাসেরহাট ও নলচিরায় দু’ঘণ্টার জন্য রেশনিং করে দেয়া হয়। ফলে বিদ্যুত্ নিয়ে হাতিয়ার মানুষের ক্ষোভ দিনে দিনে বাড়ছে। স্থানীয়ভাবে কেউ ক্ষুদ্র শিল্প স্থাপন করতে আগ্রহী হলেও বিদ্যুতের অভাবে উদ্যোগ থেকে পিছু হটে যায়। হাতিয়ার এ বিদ্যুত্ সঙ্কট নিয়ে জানতে চাইলে আবাসিক প্রকৌশলী মোঃ কামাল উদ্দিন বলেন, চাহিদার আলোকে সরবরাহ না থাকায় কর্মকর্তাদের সবসময়ই মানুষের রোষের শিকার হতে হচ্ছে। বিদ্যুত্ সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন প্রস্তাব বাস্তবায়ন করলে এবং পর্যাপ্ত জনবল দেয়া হলে হাতিয়ায় ক্ষুদ্র শিল্প গড়ে উঠবে বলে তিনি জানান।

বিদ্যুত্ চাহিদা মেটাতে ভোলা থেকে চরাঞ্চল দিয়ে হাতিয়ায় বিদ্যুত্ সংযোগ হলেই কেবল এ দ্বীপে বিদ্যুত্ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.