আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাগরকন্যা নিঝুম দ্বীপসহ হাতিয়ার দক্ষিণের বন উজাড় নদী ও বনাঞ্চল দখলে বেপরোয়া মুন্সিয়া বাহিনী



সাগরকন্যা নিঝুম দ্বীপসহ হাতিয়ার দক্ষিণের বনাঞ্চল উজাড় এবং বনভূমি ও নদী দখলে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে দুর্ধর্ষ মুন্সিয়া বাহিনী। বনের গাছ কাটতে বাধা দেয়ায় সে জ্বালিয়ে দিয়েছে বন বিভাগের আলাদি বাজার বিট। উজাড় করে চলেছে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। বনভূমি দখল করে প্রতিবিঘা বিক্রি করেছে ১২ হাজার টাকায়। নদীতে প্রতি ‘হার’ বিক্রি করছে আড়াই লাখ টাকা।

হাতিয়া থানার কাছাকাছি এলাকায়ই অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে চলে মুন্সিয়া বাহিনীর মহড়া। কিন্তু পুলিশ তাদের খুঁজে পাচ্ছে না। বছরখানেক আগেও হাতিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে মুন্সিয়া চোর হিসেবেই পরিচিত ছিল। স্থানীয় সোনাদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা ইয়াসির আরাফাত কানুর চাচা ও মুন্সিয়া চোরার আসল নাম আবদুল মালেক। স্থানীয়রা জানায়, দেশে জরুরি অবস্থার সময় মুন্সিয়া চোরা দস্যুসম্রাট বাশার মাঝির আশ্রয়ে বিভিন্ন চরে পালিয়ে থেকেছে।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মুন্সিয়া নিজ এলাকায় আস্তানা গড়ে এবং থানা পুলিশের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। সশস্ত্র বাহিনী তৈরি করে প্রভাব বিস্তার শুরু করে নিঝুম দ্বীপ, দমার চর, চর কালাম, চর ওসমান, চর কমলা ও পার্শ্ববর্তী মেঘনা এবং শাখা নদী এলাকায়। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় এসব এলাকায় গাছকাটা ও চাঁদাবাজির বিস্তার ঘটায় মুন্সীয়া। গত তিন মাসে এ বাহিনীর বেপরোয়া তাণ্ডবে স্থানীয় জনসাধারণ এবং বন বিভাগ দিশেহারা হয়ে পড়ে। গত ২ নভেম্বর বন উজাড়ের খবর পেয়ে বন বিভাগের কর্মীরা চর কালামের তবলখালী এলাকায় অভিযান চালালে পাল্টা ধাওয়া করে আলাদি বাজার বনবিট ভেঙে জ্বালিয়ে দেয় মুন্সীয়া বাহিনী।

আহত করে বিট কর্মকর্তাদের। পরদিন তারা কেটে ফেলে ৪ হাজার গেওয়া গাছ। এ দুটি ঘটনায় মুন্সীয়াকে প্রধান আসামি করে দুটি মামলা করেছে বন বিভাগ। কিন্তু ধরা পড়েনি মুন্সীয়া। মুন্সীয়া এখন এসব এলাকায় তাঁবু দিয়ে আস্তানা তৈরি করেছে।

বনের গাছ কেটে প্রতিবিঘার দখল ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করছে। গত দুই মাসে গাছকাটা এমন বেপরোয়া হয়েছে, এখন জাহাজমারাসহ দক্ষিণের বনাঞ্চল এবং নিঝুম দ্বীপের অভয়ারণ্য হুমকিতে পড়েছে। চিত্রা হরিণগুলো বনের নিরাপত্তা হারিয়ে লোকালয়ে চলে আসছে। প্রতিরাতেই মুন্সীয়া বাহিনী গুলি ছুড়ে এলাকায় আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। ম্যানগ্রোভ বনায়ন প্রকল্পে সৃজিত ৭ হাজার একর বনের গাছ অধিকাংশই নিঃশেষ করে দিয়েছে।

গত কয়েক মাসে মুন্সীয়া বাহিনী সংরক্ষিত বনের জায়গায় দুই থেকে তিন হাজার লোককে দখলে বসিয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে হাতিয়ার দক্ষিণ ও পশ্চিমে মেঘনা এবং শাখা নদীতে মাছ ধরার স্থানগুলো খুঁটি দিয়ে দখল করে নিয়েছে মুন্সীয়া বাহিনী। চার খুঁটি দিয়ে দখল করা জায়গাকে বলা হয় ‘হার’। প্রতিটি হার জেলেদের কাছে আড়াই লাখ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। যেসব জেলে চাঁদা দিতে পারছে না, তারা এবার মাছ ধরার সুযোগ পাচ্ছে না।

জানা যায়, স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সঙ্গে মুন্সীয়া বাহিনীর সখ্যের কারণে প্রশাসন এ বাহিনীর তাণ্ডব নিয়ে বেশি উচ্চবাচ্য করছে না। থানা সদরের ৬ কিলোমিটারের মধ্যে মুন্সীয়ার বাড়ি এবং চরচেঙ্গা বাজারে তাকে সবাই প্রকাশ্যে দেখতে পায়। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার কারণেই মুন্সীয়া এমন বেপরোয়া বলে জানা গেছে। জামাল মাঝি এখন মুন্সীয়ার সেকেন্ড ইন কমান্ড এবং নাজিম, মোশাররফ, আনোয়ার, আশরাফ, বাহার, মোজাহার, হাসান মাঝি, আক্তার ও হেলাল মুন্সীয়ার সশস্ত্র ক্যাডার হিসেবে সক্রিয় বলে স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়। এ বিষয়ে হাতিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যাপক ওয়ালীউল্লাহর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দল বদলকারী আওয়ামী লীগ নামধারীরা দস্যুদের আশ্রয় দিচ্ছে।

আসল আওয়ামী লীগ অপকর্মের সঙ্গে নেই। দস্যু মুন্সীয়া থানার ওসিকে কালিজিরার চালসহ বিভিন্ন উপঢৌকন নিয়মিত পাঠিয়ে থাকে। তবে হাতিয়া থানার ওসি রতন দাশগুপ্ত এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মুন্সীয়াকে গ্রেফতারের জন্য তিনি অভিযান অব্যাহত রেখেছেন। মুন্সীয়া এখন পলাতক বলে তিনি জানান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ হারুন অর রশিদ বলেন, চর এবং বনের দস্যুরা ভয়ঙ্কর।

তাই এদের পাকড়াও করতে হলে সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ করতে হবে। হালকা অভিযানে নদী ও বনের দস্যু দমানো সম্ভব নয়। Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।