আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যাঁর স্বপ্নে সকলের ঠাঁই

পৃথিবীর প্রত্যেক মানুষই বলতে পারে, ‘আমার একটি স্বপ্ন আছে। ’ কিন্তু একটি স্বপ্নের মধ্যে সব মানুষের স্বপ্নকে ধারণ করা, সে মহামনীষীর কাজ। বর্ণবাদবিরোধী আমেরিকান নেতা মার্টিন লুথার কিং যখন ঠিক ৫০ বছর আগে উচ্চারণ করলেন, ‘আমার একটি স্বপ্ন আছে’, সবারই মন যেন এক সুরতরঙ্গে বেজে উঠল। ওয়াশিংটনের লিংকন মেমোরিয়াল চত্বরে দীর্ঘ পদযাত্রা শেষে সমবেত হয়েছে আড়াই লাখ মানুষ। টেলিভিশনের সাত কোটি দর্শক অপেক্ষা করছে।

হোয়াইট হাউসে টেলিভিশনের সামনে বসে আছেন প্রেসিডেন্ট কেনেডি। সহমর্মীরা অপেক্ষা করছে একটি মহৎ কবিতা শোনার জন্য। বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গরা তক্কে তক্কে আছে, এই বুঝি মার্টিন লুথার কিং তেজস্ক্রিয় বক্তৃতা দিয়ে দাঙ্গা বাধিয়ে দেবেন। সেই দৃশ্য দেখার জন্য নিউইয়র্ক টাইমস আকাশে উড়িয়েছে ভাড়া করা হেলিকপ্টার। অন্যদিকে, হলিউড থেকে এসেছেন বিশ্বখ্যাত ১৭ জন তারকা, যাঁদের মধ্যে ছিলেন অভিনেতা মার্লোন ব্র্যান্ডো, চার্লসটন হেস্টন, পল নিউম্যান, হ্যারি বেলাফন্টে ও সংগীতশিল্পী জোয়ান বায়েজ প্রমুখ।

ওয়াশিংটনে সেদিন রুদ্ধশ্বাস প্রতীক্ষা সবার। ১৯৬৩ সালের ২৫ মার্চ। আমেরিকার কালো মানুষের নেতা রাজধানীতে হাজির হয়েছেন লাখো মানুষের মিছিল নিয়ে। সাদা মানুষের সমান মর্যাদা চায় তাঁর জনগোষ্ঠী—আফ্রিকান আমেরিকানরা। একটু পরই তিনি বলবেন, আমরা খালি হাতে ফিরে যাব না।

বলবেন, আমার সন্তানেরা যেন তাদের গায়ের রং দিয়ে নয়, তাদের চরিত্র দিয়ে মূল্যায়িত হয়। এই একটি বক্তৃতা তাঁকে তুলে আনবে আমেরিকার প্রতিষ্ঠাতা পিতা লিংকন ও জেফারসনদের সমপর্যায়ে। তাঁকে করে তুলবে আমেরিকানদের নৈতিক অধিপুরুষ। জীবনের মহত্তম জনসভায় দাঁড়িয়ে, অর্ধেক পড়া লিখিত বক্তৃতা সরিয়ে মনের গহন থেকে তুলে আনবেন অমোঘ সেই বাক্য: ‘আমার একটি স্বপ্ন আছে। আমি স্বপ্ন দেখি, একদিন এই জাতি জেগে উঠবে...’ বক্তৃতার একটি বাক্যাংশ দিয়ে কিং উঠে এলেন ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ আলোড়ন-জাগানিয়া ব্যক্তিদের সারিতে।

ইতিহাস বদলে গেল। এর কিছুদিন পরই কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটাধিকার ও নাগরিক অধিকারের আইন পাস হলো। এটাই সেই সূচনা, যার ধারাবাহিকতায় আজ বারাক ওবামা নামের একজন কৃষ্ণাঙ্গ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। সেদিন জনসভায় কোনো উত্তেজনা হয়নি, কাউকে গ্রেপ্তার করতে হয়নি পুলিশকে, অথচ এফবিআইয়ের তালিকায় মার্টিন লুথার কিংয়ের নাম উঠে এল ১ নম্বর জাতীয় শত্রু হিসেবে, কমিউনিস্টদের বন্ধু হিসেবে। কিন্তু যে ইতিহাসের চাকা একবার ঘোরা শুরু করেছে, তাকে আর থামাতে পারেনি রক্ষণশীল মার্কিন রাষ্ট্রযন্ত্র।

তবুও মুক্তির মূল্য তাঁকে দিতে হয়েছিল জীবন দিয়ে। ১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল আততায়ীর গুলিতে তিনি নিহত হন। তত দিন বিশ্ববাসী তাঁকে জেনেছে নয়া জামানার গান্ধী হিসেবে। নোবেল শান্তি পুরস্কার যাঁদের কণ্ঠে শোভিত হয়ে ধন্য হয়েছে, তিনি তাঁদের একজন। ১৯৬৪ সালে অহিংস উপায়ে বর্ণবাদী বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য তাঁকে পৃথিবীর সবচেয়ে নামী পুরস্কারটি দেওয়া হয়।

অথচ লিংকন মেমোরিয়ালের সেই ঐতিহাসিক দিনে কিং জানতেন না কী বক্তৃতা দেবেন। আগের রাত জেগে কয়েকজন মিলে খেটেখুটে একটা পাণ্ডুলিপি খাড়া করেছিলেন বটে, কিন্তু সেটা তাঁর মনে ধরছিল না। তার পরও ১৮ জন বক্তার মধ্যে ১৬তম জন হিসেবে সেই পাণ্ডুলিপি নিয়েই তিনি জনতার সামনে দাঁড়ালেন। বক্তৃতা চলছে, এর মধ্যেই বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধর্মগীতি গায়িকা মাহালিয়া জ্যাকসন চিৎকার করে উঠলেন, ‘স্বপ্নের কথাটা ওদের বলো, মার্টিন। ’ যেন কোনো দৈবী সংকেত ছিল সেটা।

সেই সংকেতেই মার্টির লুথার কিংয়ের রাজনৈতিক বক্তৃতা হয়ে উঠল এক বিষণ্ন শোকগাথা; যেন কোনো ধর্মগ্রন্থ থেকে উচ্চারণ করছেন তিনি, ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম। ’ বললেন সেই স্বপ্নের কথা, যার শেকড় পোঁতা আছে আমেরিকার মুক্তির স্বপ্নের গভীরে। যে স্বপ্নের কথা শত শত বছর জুড়ে গেয়ে এসেছে কালো দাসমানুষেরা।  কথা বলে উঠলেন সেই ভাষায়, যে ভাষা শত্রুকেও বন্ধু ভাবায়। কালো মানুষের নেতা কথা বলে উঠলেন কালো-সাদানির্বিশেষে নিখিল মানবের প্রতিনিধি হয়ে।

বললেন, ‘এই স্বতঃসিদ্ধে আমরা আস্থা রাখি যে সব মানুষ সমান। ’।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.