আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

@ ধর্ম ও বিজ্ঞানের দৌড়

জন্মোপার থেকে পৃথিবী হয়ে অনন্তে >>> ©www.fazleelahi.com

ব্লগার মনির হাসান তার "ধর্মগুলোর ভবিষ্যত কি......." বিষয়ক একটি পোষ্টে আলোচনার জন্য কিছু সম্পূরক বিষয় প্রশ্নাকারে তুলে ধরেছিলেন। পড়ার পর মন্তব্য দেয়ার বাসনায় লিখতে শুরু করি, অবশেষে দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পাওয়ায় লেখাটি পোষ্ট আকারে প্রকাশের প্রয়াস পাই। ১. ধর্ম কি আদৌ টিকে থাকবে? -সব ধর্মের কথা বলতে গেলে অনেক কথা টেনে আনতে হবে, তাই যে ধর্ম টিকে থাকার সম্ভাবনা শতভাগ বলে আমি মনে করি, সে সম্পর্কে কিছু কথা বলতে পারি। তা হলো- ইসলাম ধর্ম। কেননা, মানুষ তার মূল খুঁজবেই।

আর "তার মূল-এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা যত সূক্ষ্মই হোক না কেন, সেই সূক্ষ্ম-এর স্রষ্টা কে?"-এ জিজ্ঞাসা মানব মনে থাকবেই। এদিকে বিজ্ঞানের এ যাবৎ উন্নতি কিংবা ভবিষ্যৎ কল্পনা থেকেও "সেই মূল"-এর সন্ধান আজো পায়নি এবং পাওয়ার কোন সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। সুতরাং মানব মনের চিরন্তন এ প্রশ্নই মানুষকে ধর্মে টিকিয়ে রাখবে। বলাবাহুল্য যে, ধর্মে টিকে থাকতে হলে ধর্মে বর্ণিত বিশ্বাস ও বিধানাবলীর অনুসরণও করতে হবে। তাছাড়া ইসলামের মূলনীতিসমূহ ও ইসলামের মূল দু্'টি উৎসের কোনরূপ বিলুপ্তি না ঘটা এবং প্রায় দেড় সহস্র কাল যাবৎ বিজ্ঞানের এ জয় জয় সময়গুলো পার করার পরও যে ধর্ম শুধুমাত্র তার স্বমহিমাতেই নয়; বরং প্রচুর উন্নতি ও অগ্রগতি সাধন করতে পেরেছে, পৃথিবীর ভবিষ্যৎ পরিবর্তন ও বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে সে ধর্মের বিলুপ্তি ঘটার চিন্তাটা মোটেই বৈজ্ঞানিক বলে আমি মেনে নিতে পারছি না।

অতএব, ইসলাম পৃথিবীর শেষ পরিণাম পর্যন্ত থাকবে বলে আশা করাটা মোটেই অতিরঞ্জন নয়। ২. টিকে থাকলে কিভাবে? এখানে আমি ইসলামের টিকে থাকার বিষয়টি তুলে ধরতে চেষ্টা করবো। - মানব জীবনে দু'টি দিক- আত্মা ও শরীর। কিংবা মনোজগত ও বাহ্যজগত। আত্মিক অশান্তি হলে মানুষ শারিরিক প্রয়োজনকে উপেক্ষা করে।

যেমন প্রিয়জনের বিয়োগে আমরা খানাপিনা ছেড়ে দেই কিংবা অখাদ্য খেয়ে নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেই, হাজারো ঐশ্বর্য্য থাকা সত্ত্বেও বলতে শোনা যায়- মনে শান্তি নেই। অন্যদিকে শরীর অসুস্থ হলে আত্মার উপর সে প্রভাব পড়তে থাকে এবং শরীরের পতনে আত্মাও একসময় শরীরকে ত্যাগ করে চলে যায়; যাকে আমরা মৃত্যু বলে অভিহিত করি। ইসলাম মানুষকে এ দু'টি দিক সম্পর্কে সম্যক অবগত করেছে এবং এ দু'টি মৌলিক দিকের ভাল-মন্দ, প্রয়োজন-নিষ্প্রয়োজন, শুরু-শেষ, পরিণাম তথা সাফল্য-ব্যর্থতা সম্পর্কে বিধি বিধান দিয়েছে। মানুষ যত বৈজ্ঞানিক কিংবা যন্ত্র নির্ভরই হোক না কেন, তার আত্মাকে কোনদিন যান্ত্রিক বানাতে পারবে না। তার প্রমাণ প্রাগৈতিহাসিক কালের কোন প্রেম কাহিনী আর বর্তমানের কোন প্রেম কাহিনীর সাথে তুলনা করলেই মিলে যাবে।

মানুষের মনের ভাব, আবেগ, ইচ্ছে ঠিক তেমনি রয়ে গেছে; কিছুই পরিবর্তন আসেনি তাতে। এসেছে কেবল উপাদানে। তাই বিজ্ঞান কখনোই মানুষের আত্মিক চাহিদাকে বিনষ্ট বা বিকৃত করতে সক্ষম হবে না। শারিরিক ভাবে হলেও হতে পারে। আর আগেই বলেছি যে, মানুষ কেবলমাত্র শরীর নয়; বরং আত্মা ও শরীরের সমন্বয়।

অতএব, আত্মিক প্রয়োজনেই মানুষ ধর্মের প্রয়োজন বোধ করবে। অনেক বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতেও এ বিষয়টি তুলে ধরতে দেখা গেছে যে, যন্ত্রের উন্নতিতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শারিরিক সুখের চরম অবস্থানে চলে গেছে কিন্তু তার আত্মা অশান্ত! সে আত্মিক শান্তির অনুসন্ধান করে ফিরছে...! বাকী থাকে শারিরিক প্রয়োজনের জন্য কিংবা মানবের বাহ্যিক ব্যবস্থাপনা পরিচালনার জন্য বিধি-বিধান তথা জাগতিক বিধি-বিধান। বলাবাহুল্য যে, সে ক্ষেত্রে ধর্ম তথা আমার আলোচ্য ইসলাম ধর্ম হয়তবা সবসময় সব ক্ষেত্রে নেতৃত্বে থাকতে নাও পারে; তবে সাফল্য না পাওয়ার কারণে যদি কেউ জাগতিক বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে ইসলামকে দুর্বল কিংবা অসম্পন্ন মনে করে, তবে ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞানতার দোষ তার উপর নির্দ্বিধায় আরোপ করা যেতে পারে। নেতৃত্বই এক্ষেত্রে কেবলমাত্র মাপকাঠি নয়, কেননা কম্যূনিজম নেতৃত্ব পেয়েও মানুষের মন থেকে ধর্মকে মুছে দিতে পারেনি; বরং চরম ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তাই ধর্ম সম্পর্কে কেবল মুখের কিংবা কলমের জোরে বলে ফেললেই চোখের সামনে থাকা বস্তু যাদুর মত হাওয়া করে ফেলা যায় না আর গেলেও সে সত্য ছাইচাপা আগুন মাত্র, জ্বলে উঠবেই।

বাদ-মতবাদের সাথে তুলনায় বলবো যে, পৃথিবীতে যতদিন মানুষের মধ্যে নীতিবোধ অবশিষ্ট থাকবে, ততদিন ধর্মের প্রয়োজন থাকবে। কেননা, কম্যূনিজম মানুষকে তাদের কর্মকাণ্ড দিয়ে বিশ্বাস করাতে পারেনি যে, তারা সাম্যের জন্য লড়াই করছে। বরং তাদের সাম্যের লড়াই একদা যখন মানবতাকে ল্যাঙ মেরে বসেছিল, তখন তাদের স্বরূপ বিশ্ববাসী অবলোকন করেছিল। এবং যুদ্ধ নামক ভূকম্পন ছাড়াই তাদের "সাম্যবাদ" নামক ইমারত ধ্বসে পড়েছিল। পূঁজিবাদ মানবতার প্রতি কখনোই সুবিচার করতে পারেনি; এক্ষেত্রে সে পুরোপুরি অন্ধ।

তাই একটি অন্ধ ঘোড়ায় চড়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর বাসনা সেই ধনী ব্যক্তিই করতে পারে যার চাকর-নোকর ঘোড়াটিকে টেনে টেনে তার কাংখিত গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছে। বাকি বিশাল শ্রমজীবি মানবগোষ্ঠী তা কোনদিনও মেনে নেবে না; বরং পৃথিবীর বর্তমান অবস্থা বিদ্বগ্ধজনের কানে কানে যেন বলছে যে, সে ঘোড়াটিকে হত্যা করার সামান্যতম সুযোগও পূঁজিবাদে পিষ্ঠ মানুষেরা হাতছাড়া করবে বলে মনে হচ্ছে না। এছাড়া নিজস্ব সংস্কৃতি, শিক্ষা পদ্ধতি, অর্থনীতি, বিচার ব্যবস্থা ইত্যকার যাবতীয় দিক ও বিভাগে যে ধর্ম স্বয়ং সম্পন্ন, সে ধর্ম সম্পর্কে নিঃসঙ্কোচে এ বাক্য উচ্চারণ করা যায় যে, আর কেউ টিকে থাকুক বা না থাকুক; আগামী দিনের ধর্ম হিসেবে ইসলাম টিকে থাকবেই। ৩. না টিকে থাকলে সেই শূন্যস্থান পূরন হবে কিভাবে ? -এখানে উত্তর যদিও অপ্রয়োজনীয়, তবু কিছু কথা থেকে যায়। তা হলো, অতীতে এবং আজো যেমন পুরো মানবগোষ্ঠীকে ধর্মসমূহ কিংবা কোন একটি ধর্ম নিয়ন্ত্রণ করেনি ও এখনো করে না, তেমনি ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।

এ পার্থক্যটা ঘটতে থাকবে মানুষের চিন্তাগত ব্যবধানের কারণেই। তাই ধর্ম যেমন হঠাৎ করে বা ধীরে ধীরে উধাও হয়ে যাবেনা, তেমনি সারা বিশ্বের মানুষেরাও এক প্লাটফর্মে এসে দাঁড়াবে না; ব্যবধান থাকবেই আর ব্যবধান থাকলে সেখানে ধর্ম ও অধর্মও থাকবে। সেক্ষেত্রে, বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে যেসব ধর্ম বিশ্বাসে পরিবর্তন আসবে বা বিলুপ্তি সাধন ঘটবে সেসব ছাড়াও ইসলামের মত ধর্মবিশ্বাস নিঃসন্দেহে থাকবে। কেননা, ইসলাম ইতিপূর্বে তার প্রমাণ পেশ করেছে। এছাড়াও মানুষ তার অন্তরাত্মা থেকে কোনদিনও বিচ্ছিন্ন হতে পারবে না, আর অন্তরাত্মার বর্তমানে উপরোল্লেখিত মৌলিক প্রশ্নাবলীও চিরকাল থাকবে।

৪. যদি ধর্মের মূল রূপ পরির্তিত হয় .. তবে সে পরিবর্তিত রূপ'টা কেমন হবে? -এক্ষেত্রে বিস্তর আলোচনার দাবী রাখে। এ পোষ্টে বিস্তারিত লিখতে চাই না। এখানে অন্যান্য ধর্মে অতীত কাল থেকেই প্রচুর ও পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তন সাধিত হয়ে এসেছে। ইসলামেও সেরূপ কিছু কিছু পরিবর্তন নয়; বরং ভুলবুঝাবুঝির ফলে কিছু উপদলের সৃষ্টি হয়েছে। কেননা, ইসলামের মৌলিক ধারায় শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত আজো কোনরূপ পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগেনি।

চর্চার পদ্ধতিসমূহে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেলেও এটাকে যদি কেউ মৌলিক পরিবর্তন বলে চালিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা চালান তবে তিনিও ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতার দোষে দোষী হবেন। অন্যান্য ধর্মের পরিবর্তিত রূপ কেমন হবে, সে ধারনা আমি না হয় নাইবা করলাম, কিন্তু ইসলাম যেহেতু দেড় হাজার বছর পরেও সে-ই প্রাথমিক পরিপূর্ণরূপে ও অবিকৃত অবস্থায় বহাল রয়েছে, তাই আশা করতেই পারি যে, আগামীর বৈজ্ঞানিক যুগেও ইসলাম তার স্বমহিমাতেই থাকবে। ৫. মানুষের চরম অসহায় মূহুর্তে ধর্ম'আশ্বাস (মিথ্যে হোক আর যাই হোক) তাকে কিছুটা হলেও শান্তি দেয় .. এই শান্তি'টার বিকল্প কি হবে ? -বিজ্ঞান আজো পর্যন্ত এ ক্ষেত্রে চরম অসহায়। বিজ্ঞান মানুষের অসহায় মুহূর্তে তাকে রক্ষা বা সাহায্য করার চেষ্টা চালাতে পারে। কিন্তু পরিণাম নির্ধারণের ক্ষমতা কোনভাবেই বিজ্ঞান জব্দ করতে পারেনি আজো।

তাই বিজ্ঞানও সেই আক্রান্ত ব্যক্তির মত নিদারুন অসহায় এক্ষেত্রে। আর চারদিকে এমন থৈ থৈ অসহায়ত্ব দেখে মানব মন যত কঠোর ধর্মবিদ্বেষীই হোক না কেন, গলে যায় এবং সন্ধান করে ফেরে এমন কোন শক্তির যা এসব জাগতিক শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে তথা যিনি "কাজের পরিণাম নির্ধারণের ক্ষমতা রাখেন", তাঁকে। এভাবেই বিজ্ঞান তথা নিছক বিজ্ঞানবাদীরা সত্য ধর্ম তথা ধর্মবাদীদের কাছে হেরে যেতে থাকবে। কেননা, আত্মার স্বরূপ যতদিন না উদ্ঘাটিত হচ্ছে, ততদিন বিজ্ঞানের পক্ষে সেই মহাশক্তিধর নিয়ন্ত্রকের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হবে না এবং তার থেকে "কাজের পরিণাম ক্ষমতা"ও ছিনিয়ে নিয়ে আসা সম্ভব হবে না। বলাবাহুল্য যে, আত্মার স্বরূপ সন্ধানের বিষয়টি বিজ্ঞানের কাছে আজো এক মহা প্রশ্নবোধক চিহ্ন "?" হয়েই আছে।

৬. ইত্যাদি ইত্যাদি । -এবং ইত্যাদি ইত্যাদি হয়ত ভবিষ্যতে আরো লেখা হবে ইনশাআল্লাহ্। তবে বিজ্ঞানের উন্নতি কোনভাবেই ইসলামকে রুখে দিতে পারবে না; বরং ধীরে ধীরে বিজ্ঞানই হয়ে উঠবে ইসলাম প্রচারে একজন সুযোগ্য দা'য়ী বা ইসলামের প্রতি আহ্বানকারী শক্তি। আজকের যুগে যতটুকু এসেছে, তাতেই বিজ্ঞান ইসলামের প্রচার-প্রসারে বিশাল ভূমিকা রাখছে কোনরূপ সংঘর্ষ ছাড়াই। মূলত: ইসলাম বিজ্ঞানকে স্রষ্টার দেয়া চিন্তা, শ্রবণ, ঘ্রাণ, দৃষ্টি শক্তিসমূহ, আলো, বাতাস, পানি ইত্যাদির মত একটি নে'আমত মনে করে; যা মানুষের চেষ্টার মাধ্যমে মানুষেরাই পেয়েছে।

পৃথিবীর অধিবাসী হবার সুবাদে ধর্মানুসারীরাও মানুষ, তাই এ সম্পদ, এ পাওনা সবার এবং তাদেরও। কিন্তু চূড়ান্ত কৌতুক ঠেকে যখন দেখা যায় এক শ্রেণীর নাস্তিক বৈজ্ঞানিক উন্নতিকে তাদের পৈত্রিক উত্তরাধিকারের তুল্য মনে করতে থাকে। তারা ভুলে যায় যে, স্বল্পকতক ছাড়া বিশাল সংখ্যক বিজ্ঞানী ও গবেষক সর্বকালেই ধর্মবিশ্বাসী ছিলেন..... ইত্যাদি ইত্যাদি। বি.দ্র.: আজকাল ব্লগে নিয়মিত নই, এছাড়া কিছু বিবেচনা বোধশক্তি খোয়া ব্লগার নাম দেখেই তাদের স্বরূপ তুলে ধরে অশ্রাব্য ভাষায়; যেসবের সুযোগ দেয়া লেখা ও লেখকের জন্য শোভনীয় নয়। সেজন্যে মন্তব্য পর্যবেক্ষনে রাখলাম; দুঃখিত।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।