আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সত্যবাদিতা ও আমানতদারী



সত্যবাদিতা ও আমানতদারী ছিল বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)'র চরিত্রের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য৷ তিনি কখনও মিথ্যা বলেছেন বলে কেউ শুনে নি এবং এমনকি তাঁর চরম শত্রুরাও কখনও রাসূল (সাঃ)কে মিথ্যাবাদী বলে অপবাদ দিতে পারে নি৷ তিনি সত্যবাদী ও আমানতদার ছিলেন বলে শুধু তাঁর এ গুণের প্রভাবেই অনেক মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন৷ বিশ্বনবী (সাঃ)যখন মহান আল্লাহর নির্দেশে মানুষের কাছে ইসলাম ধর্ম ও তাওহীদের দাওয়াত দিতে চেয়েছিলেন তখন তিনি প্রথমেই সাফা পর্বতের একটি উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে জনগণকে তাঁর কাছে আসার আহবান জানান৷ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে প্রথমেই বিশ্বনবী (সাঃ) তাঁর সত্যবাদিতার বিষয়ে জনগণের সাক্ষ্য শুনতে চান৷ তিনি বলেন, হে জনগণ! তোমরা কি এ পর্যন্ত আমাকে মিথ্যা বলতে শুনেছ? আমি যদি এখন তোমাদের কাছে বলি শত্রুরা সকালে অথবা সন্ধ্যার সময় হঠাৎ করে তোমাদের ওপর হামলা শুরু করবে তাহলে কি তোমরা আমার এ কথা বিশ্বাস করবে? সবাই সমস্বরে জবাব দিয়েছিলঃ হ্যা! কারণ, আপনি আপনার জীবনে কখনও মিথ্যা বলেন নি৷ বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এরপর বললেন, "আমি হচিছ সেই পর্যবেক্ষকের মতো যে দূর থেকে শত্রুদের লক্ষ্য করে এবং নিজ জাতিকে শত্রুদের বিপদ সম্পর্কে অবহিত করে৷ এ ধরণের ব্যক্তি কি কখনও নিজ জাতির কাছে মিথ্যা বলে?" মহানবী (সাঃ)'র জীবনের এই ঘটনা থেকে বোঝা যায়, অন্য সব ক্ষেত্রের মতো মহান আল্লাহর বাণী পৌঁছানোর ক্ষেত্রেও সাহসিকতার পাশাপাশি সত্যবাদিতা ও সততা বজায় রেখেছেন৷ যিনি সব সময় সত্য কথা বলতে অভ্যস্ত এবং যিনি আমানতদার হিসেবে পুরোপুরি বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য তিনি ধর্মের বাণী পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রেও যে সৎ থাকবেন, তা যে কোনো বিবেকসম্পন্ন ব্যক্তিই স্বীকার করবেন৷ মদিনার অধিবাসী আবদ ইবনে সালাম বলেছেন, যেদিন আল্লাহর রাসূল (সাঃ) হিজরত করে মদিনায় এলেন, সেদিন জনগণ তাঁর দিকে ছুটে গিয়েছিল৷ আমিও সেদিন জনতার সাথে ছিলাম এবং তাঁদের মতো আমিও রাসূলে খোদা (সাঃ)কে দেখতে চেয়েছিলাম৷ যখন আল্লাহর রাসূলের (সাঃ) চেহারা দেখলাম তখন অনুভব করেছিলাম যে তিনি একজন সত্যবাদী ও সত্যভাষী৷ ঠিক এ বিষয়টি আমাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল৷ মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, যাঁরা নৈতিক বা চারিত্রিক দিক থেকে সাহসী তাঁরা কখনও মিথ্যা, প্রবঞ্চনা ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে নিজ চরিত্রকে কলুষিত করেন না৷ অন্যদিকে যাদের চিত্ত দূর্বল, অক্ষম বা যারা হতাশাগ্রস্ত ও ভীরু তারাই মিথ্যার আশ্রয় নেন৷ ডক্টর এলেক্সিস কার্ল বলেছেন, " মিথ্যা বা প্রবঞ্চনা মানসিক উন্নতির পথে প্রধান বাধা৷ কারণ, মানুষের মন মিথ্যা ও দূর্নীতির মধ্যে কখনও বিকশিত হয় না৷" মানুষের প্রকৃতি সত্য ও সত্যবাদিতাকেই পছন্দ করে৷ মানুষ যদি এই প্রাকৃতিক বা স্বভাবগত পথ থেকে বিচ্যুত না হয় তাহলে সে অনেক উন্নত গুণাবলীর অধিকারী হয় এবং এভাবে কলুষতা ও পাপাচার থেকেও দূরে থাকতে পারে৷ প্রকৃত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের অভাবে এবং কখনো বা অসুস্থ পরিবেশের প্রভাবে মানুষের ইতিবাচক গুণাবলী বিকশিত হতে পারে না৷ ফলে তার মধ্যে নেতিবাচক ও অপরাধমূলক স্বভাব বিকশিত হয়৷ সত্য কথার মতো সত্যবাদী মানুষও সমাজে সম্মান অর্জন করে৷ বিভিন্ন ঝগড়া বিবাদসহ আমাদের পারিবারিক, সামাজিক ও আচরণগত অনেক সংকটের মূল হচেছ মিথ্যার আশ্রয় নেয়া বা সততার অভাব এবং ব্যক্তিগত ও সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পারস্পরিক অবিশ্বাস তথা সত্য থেকে দূরে থাকা৷ যে ব্যক্তি বন্ধুদের প্রতি বিশ্বস্ত এবং বন্ধুত্বের দাবীগুলো পূরণ করে ও সেইসাথে বন্ধুদের ভুলগুলো ক্ষমা করে দেয় সে ব্যক্তি সংকটে বা বিপদের সময়ও সহানুভূতিপূর্ণ বা দয়ালু সাহায্যকারী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে৷ আর এ ধরনের আন্তরিক বা সত্যিকারের সুসম্পর্কই সমাজের স্থিতিশীলতা বা স্থায়ীত্বকে রক্ষা করে৷ অন্যকথায় মানুষের মধ্যে আন্তরিক সম্পর্ক এবং তাদের পারস্পরিক বিশ্বাসই সামাজিক সুস্থতা রক্ষার চাবিকাঠি৷ সত্য কথা বা সততার সুফল সম্পর্কে বিশ্বনবী (সাঃ) বলেছেন, সত্য হলো প্রশান্তির মাধ্যম এবং মিথ্যা হলো দুশ্চিন্তা বা ভয়ের উৎসমূল৷

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।