আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডিজিটাল সার্ভিস/ আকাশ



অফিসের একটা জরুরী কাজে খুলনা যেতে হবে। একটা জুট মিলের ডাইরেক্টর এর সাথে মিটিং । মঙ্গলবার বিকাল ৫ টায়। আমার সাথে আমার এমডি সাহেব ও যাবেন। আমি মঙ্গলবার সকাল ৭:১০ এর ২টি টিকেট কাটলাম।

সোহাগ পরিবহন স্ক্যানিয়া। টিকেটের মুল্য ১০৫০. টাকা। যে গরম পড়েছে টিকেটটা পেয়ে মনে হল এবার একটু আরামেই যাওয়া যাবে। ঘুমানোর আগে ভোর ৫টায় এলার্ম দিয়ে রাখলাম যাতে গাড়ি মিস না করি। ঘুম থেকে সময় মত উঠে ফ্রেশ হয়ে না¯তা করতে বসেছি, এরই মধ্যে সোহাগ পরিবহন এর কাউন্টার থেকে ফোনে জানানো হলো ‘গাড়ি দের ঘন্টা লেট হবে।

উত্তরা-আব্দুল্লাহপুর আসতে ৯ টা বেজে যাবে, আপনারা ৮:৪৫ এ মধ্যে অবশ্যই কাউন্টারে থাকবেন। ’ মনটা খারাপ হয়ে গেল। আমি সাইফুল ভাইকে জানিয়ে দিলাম গাড়ি লেট হবে। বাসা থেকে ৮:৩০ এ বের হয়ে সাইফুল ভাই কে নিয়ে কাউন্টারে পৌছাতে ৮:৫০ বেজে গেল। কাউন্টারে ভেতরে পর্যাপ্ত বসার জায়গা নেই।

ছোট একটা রুমে ২০-২৫ জন গাদাগাদি করে বসে আছেন। আমি কাউন্টারে বসা একজন কে খুলনা গšতব্যের গাড়ি কখন আব্দুল্লাহপুর পৌছাবে তা জিজ্ঞেস করতেই বল্ল ‘ ভাই গাড়ি বাড্ডাতে’। আমার মত অনেকেই কাউন্টারের ভদ্রলোক কে গাড়ির কথা জিজ্ঞেস করছিল এবং তাতে ঐ ভদ্রলোক খুবই বিরক্ত হচ্ছিল। এরই মধ্যে বিদ্যুৎ চলে গেল। আমি ফ্যান এর দিকে তাকিয়ে রইলাম কিন্তু কোন ফ্যানই চলেনা।

জিজ্ঞেস করতেই জানা গেল এখনে কোন জেনারেটর বা আই.পি.এস নেই। শুধু কম্পিউটারে আই.পি.এস এর লাইন দেওয়া আছে। গাড়ি যখন আব্দুল্লাহপুর তখন প্রায় ১০.৪০ বাজে। ৯টা-- ১১ টা এক অসহ্য গরমের মধ্যে কাউন্টার-বাহির, বাহির-কাউন্টার করতে করতে কেটে গেল। এত বড় একটা নামকরা গাড়ির কাউন্টারে এ.সি নেই ! এমন কি জেনেরেটর বা আই.পি.এস নেই!! যাইহোক গাড়িতে চেপে বসলাম।

একটু পর গাইড ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম ‘গান-বাজনা, টিভি এগুলো ঠিক আছেতো ? গাইড মুচকি হেসে বললো ‘সার, গান-বাজনা, টিভি সব ঠিক আছে। ’ আমি সাইফুল ভাই কে বল্লাম ‘ভাইযান, ওরা গরমে কষ্ট দিয়েছে এবার গান-বাজনাদিয়ে পুশিয়ে দেব। আশুলিয়া পৌছাতেই একটা নাটক চালানোর চেষ্টা করল কিন্তু ৫ মিনিট যেতে না যেতেই শো শো শব্দ হয় কোন কথা শোনা যায় না। বুঝতেই পারছেন মেজাজ কতটা খারাপ হতে পারে। খুলনা পৌছাতে আমাদের প্রায় সন্ধ্যে ৭টা বেজে গেল।

মিটিং টা চেন্জ করে বুধবার সকাল ১০টায় দেওয়া হলো। এই হচ্ছে আমাদের ভলভো/স্ক্যানিয়া গাড়ির মান। এবার ফেরার পালা! যেহেতু সোহাগ পরিবহন এর সার্ভিস সম্পর্কে ভাল ধারনা পেয়েছি এবার টিকেট করলাম গ্রিন-লাইন স্ক্যানিয়া । ‘সার্ভিস খুবই ভাল, এসি ঠিকমত কাজ করে, গান-বাজনা, টিভি সবই ভাল’। কথাগুলো কাউন্টারে বসা লোকের।

আমরা আশ্ব¯ত হয়ে টিকেট করলাম। সময় বুধবার রাত্র ৯টা। যথারিতি আমরা হোটেল থেকে চেক-আউট করে ৯ টার মধ্যেই কাউন্টারে এসে দেখলাম সামনের রা¯তায় একটা ভাঙ্গাচোড়া গাড়ি দাড়ানো আছে। সাইফুল ভাই গাড়ির দিকে তাকিয়ে বলল ‘আকাশ, এই ভাঙ্গা গাড়িই মনে হয় আমাদের কপালে পরবে’। আমি কপাল কুচকে বললাম ‘আপনি খামাখা মন খারাপ করা কথা বলছেন।

আমাদের টিকেটতো গ্রিন-লাইন স্ক্যানিয়া গাড়ির। ফাটাফাটি গাড়ি! এটা মনে হয় এমনি দাড়িয়ে আছে। ’ আমি কাউন্টারে বসা একজন কে জিজ্ঞেস করলাম ‘৯ টার ঢাকাগামী গাড়ি কোনটা ?’ ভদ্রলোক কম্পিউটারের মনিটর থেকে মুখ ফিরিয়ে বললেন ‘সামনে দাড়ানো’। আমারতো মাথাখারাপ অবস্থা। আমি পকেট থেকে টিকেট বের করে লোকটার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললাম ‘ভাই আমারতো স্ক্যানিয়া গাড়ির টিকেট কিন্তিু এটাতো অনেক পুড়ানো ভলভো।

’ ভদ্রলোক বললেন ‘আপনার কথা ঠিক আছে। স্কেনিয়াতে একটু প্রবলেম হয়েছে তাই ঢাকা থেকে এই গাড়িটা পাঠিয়েছে। অসুবিধা নেই এটা অনেক ভাল গাড়ি। ’ আমি কোন কথা না বলে সাইফুল ভাইকে নিয়ে গাড়িতে বসলাম। ভেতরে গুমোট গন্ধ, মনে হচ্ছে কেও বমি করেছে, ঠিকমত পরিস্কার করা হয়নি।

গাড়ি নির্দিষ্ট সময়ে কাউন্টার ত্যাগ করল। এখন দেখাগেল এ.সি ঠিকমত কাজ করেনা। গাইড কে জানানো হলে তার উত্তর ‘কাউন্টারে জানান’। সাইফুল ভাই বললেন পানির বোতল দিতে। গাইড বিরক্ত মুখে জানালো পানি যশোর কাউন্টার থেকে দেবে।

পেছনের সিটে বসা ভদ্রলোক বেশ জোড়ে বললেন ‘এই ব্যাটা, আমার পানি দরকার এখন আর তুই দিবি যশোর থেকে, ফাইজলামি পাইছস, যা পানি নিয়ে আয়। ’ গাইড কিছু না বলে সামনের দিকে হাটা দিল। পেছনের ভদ্রলোক আবার বললেন ‘গান ছাড়’। আবার একটু পর বললেন ‘গান না তুই নাটক চালা। নাটক দেখতে দেখতে যাই।

’ গাইড বলল ‘ভাই গাড়ির টি.ভি নষ্ট, গান বাজে না। ’ মেজাজ এই পরিমান খারাপ হলো শালারে লাথি দিয়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেই। আমাদের কিছুই করার নেই শুধু মনে মনে কথা বলা। গাড়ি তার নিজের গতিতেই চলতে লাগলো। মনে হলো আমরা ঘোড়ার গাড়িতে যাচ্ছি।

গাড়ি হেলে দুলে যাচ্ছে, মাঝে মাঝে বিকট শব্দ হচ্ছে, শ্যালো মেশিনের শব্দ। উপরে তাকিয়ে দেখি এ.সি মেসিন আমাদের মাথার উপরে, তাই বিকট শব্দ হচ্ছে। আমি মনে মনে আল্লাহ্ কে স্বরণ করলাম, ঠিকমত বাসায় পৌছাতে পারব কি না। যেখানে আমার জন্য অপেক্ষা করছে আমার প্রিয়জনেরা। যে যার মত ব্যবসা করছে।

বলছে স্কেনিয়া-ছাড়ার সময়ে ভাঙ্গা ভলভো। এ মধু মাসে বাজার থেকে কোন ফল কিনে খেতে সাহস পাচ্ছিনা, এই বুঝি ফরমালিন দিয়েছে। তারপরেও দিন চলে যায় রাত আসে, আমরা নতুন করে স্বপ্ন দেখি, স্বপ্ন দেখি আর স্বপ্ন দেখি । Engr. Zubaydur Rahman Aakash

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.