আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চৌহাট্টা থেকে জিন্দাবাজার রোডে ভেজা কাক, ভেজা কোকিল, ভেজা দোয়েল সব দাড়িয়ে গেছে !

আমরা শুধু আপন মানুষ খুঁজি, আপন মানুষদের খুঁজতে হয় না, তারা পাশেই থাকে !! মেঘে মেঘে কিছু ভেজা পাখির দল। মেঘ হারিয়ে নীল হারিয়ে খুঁজে বাংলাদেশ। সিলেটের চৌহাট্টা শহীদমিনারের পিচঢালা রাজপথ টুপটাপ বৃষ্টি আর হারকাঁপানো বাতাস। তবু শ্লোগান দিতে চলে এসেছে তরুনেরা। এদের থামানো যায় না।

প্রকৃতির ত্রাশ কিংবা মৌলবাদি সন্ত্রাস কেউ থামাতে পারে না। ছুটে আসে দেশের জন্য বারবার। নজরুলের চল চল চল। গীটারে যেন বন্দুক, ড্রাম যেন গ্রেনেড। দ্রাম দ্রাম।

উর্ধ গগনে বাজে মাদল !! এই দিনে সারাদিন ক্লাশ বা পরীক্ষা দিয়ে বিকালটায় হলের শক্ত তোশকে দেহটা বিলিয়ে দেয়ার কথা। মা এর হাতের ভূনা খিচুরি খেয়ে লুডু খেলা বা টিভির রিমোট টেপার কথা । সব ছেড়ে কেউ পায়ে হেটে, কেউ রিকশায় চড়ে চলে এসেছে । মাথায় পতাকা বেঁধে, হাতে নিশান বেঁধে। ওর দেয়া কাল চাদরটা জড়িয়ে।

বাবার দেয়া সোয়েটারটা গায়ে। ভিজে একাকার। তবু চৌহাট্টার রাজপথে দাড়িয়ে দড়াজ কন্ঠে একটানা শ্লোগান চলে- তোমার আমার ঠিকানা-পদ্মা মেঘনা যমুনা, রাজাকারের ফাঁসি চাই, তুমি কে আমি কে-বাঙালী বাঙালী। মেঘে মেঘে সাঝ গড়ায়, পাল্লা দিয়ে শ্লোগানের প্রখরতা বাড়ে। এক একটা কন্ঠ যেন শানিত তলোয়ার।

খ্যাচর খ্যাচ-খ্যাচর খ্যাচ। শাহবাগ থেকে চৌহাট্টা-আমরা সবাই একাট্টা !! বাতাসে কালো টিপ দিয়ে আসা মেয়েটার চুল নড়ছে আর নড়ছে। গ্লাস পড়া ঐ ছেলেটার চুলগুলো থেকে বৃষ্টির পানি চুয়ে চুয়ে গ্রীবা বেয়ে নিচে নেমে যাচ্ছে। কালকের রিকশাওয়ালাটা আজো এসেছে। "কি মিয়া, সারাদিন আন্দোলন করলে চলবে? শোনলাম সাস্টে নাকি আবৃত্তি করলেন আজ?" "রাখেন তো আপনার রিকশা।

রাজাকারের ফাঁসিটা দিয়ে নিই, পেট ভরে খাবনে। কাল কিন্তু কবিতা শোনাতে আসব"-আবদার করে ব্যাটা। আচ্ছা হলো কি তোদের? একটুও ক্লান্তি লাগে না? এই মেয়ে-জন্মের সময় তোর মা মুখে মধু দেয় নাই? তুই রাজাকার, তুই রাজাকার শ্লোগানে তো গলা ফাটিয়ে দিচ্ছিস !! আরে আরে অই ছেলে তুই কি অন্য মানুষ? তা না হলে তোর গানে শ্লোগানের সুরে লোমগুলো কেঁপে কেঁপে উঠছিল কেন? আমার কথা শুনে ওরা ঠোট বাঁকা করে হাসে। চক চক চোখের চাহনীতে আমি চাবুকের আওয়াজ পাই। সপাৎ সপাৎ সপাৎ।

আজ চৌহাট্টায় বৃষ্টি উপেক্ষা করে তরুনরা আন্দোলন করতে আসলেও মিডিয়া ক্যামেরাম্যানরা বুম আর তারের জটালা নিয়ে কম্বলের তলা থেকে বের হন নাই। ভেবেছিলেন মানুষ হবে না, কাভারেজ দিয়ে লাভ নাই। কিন্তু সব উপেক্ষা করে চৌহাট্টা থেকে জিন্দাবাজার রোডে ভেজা কাক, ভেজা কোকিল, ভেজা দোয়েল সব দাড়িয়ে গেছে। হাতে হাত ধরে গেয়েছে- মা তোর বদন খানি মলিন হলে আমি নয়ন জলে ভাসি, সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি ! বাকী ছবিগুলো এখানে  ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।