আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজে লোকদেখানো নিয়োগ পরীক্ষা!

আমি এক সাধারণ মানুষ

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের মধ্যদিয়েই আজ রাজধানীর ‘ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজে’ শিক্ষক ও কর্মকর্তা নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, আগেভাগে ঘুষ লেনদেন আর প্রার্থী ঠিক করে লোকদেখানো পরীক্ষা আয়োজন করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, কলেজটিতে নিয়মিত অধ্যক্ষ থাকা সত্ত্বেও এটির চালকের আসনে রয়েছেন একজন সাধারণ শিক্ষক। কলেজটির সভাপতির সঙ্গে দহরম-মহরমের সুবাদে ওই শিক্ষকই বিভিন্ন ধরনের নিয়োগ ও পদোন্নতির সময় দু’হাতে ঘুষ আদায় করছেন প্রার্থীদের কাছ থেকে। এমনি একটি ঘটনা কলেজের অভ্যন্তরীণ প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় বিশদ তদন্তের জন্য কমিটি করা হয়েছে।

সাধারণ শিক্ষকরা বলছেন, পরিহাস এই যে, অভিযুক্তের চাচাকে প্রধান করে গঠন করা হয়েছে ওই কমিটি। তবুও আজকের নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন নিয়ে কলেজটির গভর্নিং বডি (জিবি) দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, সম্প্রতি কলেজের বিভিন্ন বিভাগে অর্ধ-শতাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা নিয়োগের লক্ষ্যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী সমাজকর্ম বিভাগে ৫ জন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ৬ জন, অর্থনীতি বিভাগে ৬ জন, ইংরেজি বিভাগে ৪ জন, হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে ৫ জন, ব্যবস্থাপনা বিভাগে ৪ জন, ফিন্যান্স বিভাগে ৬ জন, মার্কেটিং বিভাগে ৫ জন, সাচিবিক বিদ্যা বিভাগে ১ জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। এসব শিক্ষকের কেউ স্থায়ী ও কেউ অস্থায়ী হিসেবে নিয়োগ পাবেন।

প্রায় ৫শ’ প্রার্থী নিয়োগের জন্য আবেদন করেছিলেন। এরমধ্যে ৪শ’ জনকে পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। এছাড়া প্রায় ১৫ জন কর্মকর্তা নিয়োগ হবে। ওই নিয়োগেরই পরীক্ষা আজ হচ্ছে। এ লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার শেষ বিকালে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয়।

জানা গেছে, আগেভাগেই নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় জিবির কয়েকজন সদস্য স্বচ্ছতার খাতিরে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র শুক্রবার (আজ) সকালে প্রণয়নে সভাপতিকে পরামর্শ দেন। এমনকি এ বিষয়ে পরীক্ষা কমিটির জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকও একই পরামর্শ দেন। এসব পরামর্শে কর্ণপাত করা হয়নি। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, কারা নিয়োগ পাবেন তা আগেই ঠিক করা হয়েছে। পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে নিয়ম রক্ষার খাতিরে।

জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সাজিদুল ইসলাম বলেন, দুর্নীতির কথা তিনিও শুনেছেন। প্রশ্নপত্র তার সামনে করা হয়নি। তাই প্রশ্ন কে বা কারা করলো তা তিনি জানেন না। এমনকি রাতে কোথায় থাকবে, তাও তিনি জানেন না। একপ্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরীক্ষা কমিটিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক রয়েছেন।

তিনি প্রশ্নপত্র প্রণয়নের কাজে যোগ দেননি। এদিকে কলেজে নিয়োগ দুর্নীতি ও কলেজের অন্যান্য অনিয়মের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, মাউশি ও কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতির কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগপত্র এবং কলেজের অভ্যন্তরীণ প্রাথমিক এক তদন্ত রিপোর্টে দেখা যায়, কলেজের উপাধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম ও অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষিকা আফসানা হাসান ডেইজি নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। দুদক ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গত ২৮ জুলাই দাখিলকৃত আবেদনে দাবি করা হয়, নতুন নিয়োগ আর পদোন্নতি পাইয়ে দিতে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। একই কলেজের চাকরিচ্যুত উপাধ্যক্ষকে পুনর্বহালের নামে ৩ লাখ টাকা ঘুষ নেয়া হয়েছে।

আর দুদকের কাছে দেয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, শিক্ষিকা আফসানা হাসান ডেইজি নিয়োগ আর পদোন্নতির ক্ষেত্রে অবৈধভাবে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। তিনি ঢাকার বসুন্ধরা, বনশ্রী, আমিন মোহাম্মদ হাউজিংয়ের আশুলিয়ায় প্লট কিনেছেন। কামরাঙ্গীরচরে রনি ভিলায় ২২শ’ বর্গফুটের একটি অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন এই শিক্ষক। তার বিরুদ্ধে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ও শিক্ষক প্রতিনিধি হালদার সুশান্তের উপস্থিতিতে পদোন্নতি প্রদানের নামে ভূগোল বিভাগের প্রভাষক রাবেয়া বেগমের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে, যা একই বিভাগের শিক্ষক আমির হোসেনও দেখেছেন। এছাড়া বাংলা বিভাগের নার্গিস আক্তার, রসায়ন বিভাগের শামীমা আক্তারসহ অনেকের কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করেন শিক্ষিকা ডেইজি।

চাকরিচ্যুত উপাধ্যক্ষ নজরুল ইসলামের চাকরি পুনর্বহাল করার জন্য ৫ লাখ টাকা দাবি ও ৩ লাখ টাকা লেনদেনের যে অডিও রেকর্ড শিক্ষকদের হাতে হাতে, তার প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হলে অধিকতর তদন্তের জন্য গত ১৪ আগস্ট আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ঘুষ লেনদেনের প্রত্যক্ষদর্শী সহকারী অধ্যাপক সুশান্ত হালদারের কাছে জানতে চাইলে বলেন, তার সামনেই নজরুল ইসলামের কাছে ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন শিক্ষিকা আফসানা হাসান ডেইজি এবং ৩ লাখ টাকা আদায় করেন। ব্যাপারটি গভর্নিং বডির কাছে এবং অন্যান্য সহকর্মীদের বলায় তাকে তার কোচিং সেন্টারে সন্ত্রাসী পাঠিয়ে পেটানো হয়। ওই ঘটনায় ২১ জুলাই একটি সাধারণ ডায়েরি হয়েছে সূত্রাপুর থানায়। শিক্ষক রাবেয়া বেগমের কাছ থেকেও ২ লাখ টাকা নেন ডেইজি।

সুশান্ত জানান, বিষয়টি তারা শিক্ষামন্ত্রী ও কলেজের সভাপতির কাছে জানিয়েও প্রতিকার পাননি। যুগান্তরের পক্ষে বৃহস্পতিবার বিকালে আফসানা হাসান ডেইজির সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ততার কথা বলে লাইন কেটে দেন। তবে এ ব্যাপারে এর আগে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তিনি কারও কাছ থেকে ঘুষ নেননি। তিনি নিয়োগ কমিটিতে নেই। তাই তার দুর্নীতির প্রশ্নই উঠে না।

তার দাবি, কলেজের একটি গ্র“প তার বিরুদ্ধ ষড়যন্ত্র করছে। আর কলেজের উপাধ্যক্ষ মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, বিপথগামী কিছু শিক্ষক এসব কথা বলছে। তাকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্তের পরই তিনি পুনর্বহাল হন। ৩ লাখ ঘুষ দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হচ্ছে।

তদন্ত কমিটি : শিক্ষকদের সামনে ঘুষ নেয়ার বিষয়টি তদন্ত করতে এ নিয়ে গত ২১ জুলাই গভর্নিং বডির ৪ সদস্যকে দিয়ে একটি অনুসন্ধান কমিটি করা হয়েছিল। অভিযোগ উঠেছে, ওই কমিটির প্রধান করা হয়েছে অভিযুক্তের চাচাকে। সুত্র- দৈনিক যুগান্তর

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.