আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টিনএজ প্রেমে বিপত্তিঃ

সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............

টিনএজ প্রেমে বিপত্তিঃ সামু ব্লগে কয়েকজন ব্যার্থ প্রেমিক ব্লগারদের নিয়ে আমার কিছু ভাবনার প্রেক্ষিতে কিছু একটা লেখার তাগিদ অনুভব করছিলাম অনেকদিন যাবত। কিন্তু ব্যার্থ প্রেমিক ব্লগারদের সাথে আমার কথিত টিনএজদের সাথে খুব বেশী না মিললেও একেবারে অমিল হবেনা ভেবেই এই লেখা লিখছি। প্রেম মানুষকে দেয় মহাঐশ্বর্য। প্রেমের উপস্থিতি মানুষের হৃদয়ে আনে জ্বালা সহ্য করার এক দুরন্ত ক্ষমতা। প্রিয়জনকে পাওয়ার পরিতৃপ্তিতে সে ভুলে যেতে পারে আপন জীবনের সকল দহন যাতনা।

এমনিভাবে যুগে যুগে প্রেম এসেছে মানুষের অন্তরে। বহমান নদীর মত মানুষের অন্তরে তা বহমান থেকে তার সমগ্র সত্তাকে করেছে জাগ্রত, উদ্বেলিত, আর জীবনকে ভরপুর করেছে নানা বৈচিত্র্যের ফল্গুধারায়। প্রেম স্বর্গীয়, প্রেমের আবেদন চিরন্তন এবং সত্য। যুগে যুগে প্রেম বহমান, এখনো তা বয়ে চলছে, ভবিষ্যতে, জন্ম-জন্মান্তর ধরে তা বয়ে চলবে মানুষের অন্তরে। এর উৎপত্তি বা শেষ কোথায় তা বোধকরি কারো পক্ষেই বলা সম্ভব নয়।

প্রেম মানে না বয়স, মানে না ধর্ম, বর্ণ, উঁচু-নীচু, ধনী, দরিদ্র। এই প্রেমের জন্যই জগদ্বিখ্যাত হয়ে আছে লাইলী-মজনু, শিরি-ফরহাদ, রাধা-কৃষ্ণ, রোমিও জুলিয়েট কাহিনী। প্রেমের এমনই গুণ যা যুগযুগান্তরের ব্যবধান কমিয়ে সৃষ্টি করে বন্ধন, মনের মাঝে তিলে তিলে গড়ে তোলে পছন্দের মানুষের সৌধ। প্রেমের আনন্দ ঘটে প্রাপ্তিতে আর যন্ত্রণা হয় বিরহে। পৃথিবীর সব প্রেমই যে সফল এমন দাবি কোন প্রেমিক-প্রেমিকাই যেমন করতে পারবে না, আবার সব প্রেমেই যে বিরহ, তাও বলা যাবে না।

উল্টো সুরঃ বর্তমানে প্রযুক্তির দাপটে প্রেমও যেন অনেকটা যন্ত্রনির্ভর হয়ে গেছে। সময়ে অসময়ে প্রেম এসে ধরা দেয় মানুষের মনে। আর মানুষ তো স্নেহ, প্রেম, ভালবাসার কাঙাল। একটু প্রেম ভালবাসা পেলেই ঝুঁকে পড়ে সেদিকে কোন বাছবিচার করে না। এই ধরনের প্রেমের শিকার হয় টিনএজ তরুণ-তরুণীরা।

কেউ বা প্রেমের স্রোতে ভেসে যায়, ক্ষতবিক্ষত হয় মন। সরে আসে তার আপন জীবনের গতিপথ থেকে। কেউবা আবার নিজেকে শুধরে নিয়ে এগিয়ে যায় সামনের দিকে। তরুণ-তরুণীরা এখন মোবাইল প্রেম, সাইবার প্রেমে আক্রান্ত। কার সাথে প্রেম করছে- নেই কোন জিজ্ঞাসা? একটি কল বা মিসকল, এসএমএস, বড়জোর দুই-তিন বার কথা - ব্যস হয়ে গেল প্রেম।

ঝড়ের মত যে প্রেম আসে কিছু বুঝে উঠবার আগেই ঝড়ের মত প্রেম ভেঙ্গেও যায়। কারণ, টিনএজ বয়সটা প্রেমের ক্ষেত্রে বাছ-বিচার করার বয়স নয়। এই বয়সটাতে তো যা মন চায় তাই-ই করবে। কিন্তু হঠাৎ প্রেমের ক্ষেত্রে একটু ভেবেচিন্তে এগুলে মনে হয় অনেক অঘটন থেকে বাঁচা যায়। আমার দখো একটি ঘটনাঃ লাইলী (ছদ্দ নাম) সবেমাত্র এসএসসি পাস করে কলেজে পা দিয়েছে।

উচ্ছল আর দুরন্তপনায় ভরিয়ে রাখে সবাইকে। এক আত্মীয়ের বিয়েতে বেড়াতে যায় খুলনা। সেখানে পরিচয় হয় মজনুর (ছদ্দ নাম) সাথে। মজনু খুলনা বিআইটির ২য় বর্ষের ছাত্র। লাইলীর ভাল লেগে যায় মজনুকে।

আর মজনুরও ভাল লাগে লাইলীকে। প্রথমে বন্ধুত্ব, এরপর প্রেম। কাউকে না জানিয়ে এই গভীর প্রেম চলে দীর্ঘ চার বছর। এরইমধ্যে লাইলী পা দিয়েছে ভার্সিটিতে অনার্স ৩য় বর্ষে। আর মজনু ততদিনে নিজেকে উপযুক্তও করতে পারেনি।

এদিকে লাইলীকে বিয়ের জন্য তাড়া দিচ্ছে বাসা থেকে। লাইলীর বিয়ে হয়ে যায় সুপাত্রের সাথে। মজনুর জীবনে নেমে আসে ঝড়। প্রচণ্ড এক শূন্যতা ঘিরে থাকে চারপাশে। জীবনের ওপর প্রতিশোধ নিতে চায়।

একগাদা ঘুমের ওষুধ খেয়ে পরিত্রাণ পেতে চায় জীবনের এই শূন্যতা থেকে। যাহোক মৃত্যুর শীতল স্পর্শ মজনুকে স্পর্শ করতে পারেনি, কিন্তু একটি প্রেম তার জীবনকে তছনছ করে দিয়েছে। মজনুর সাথে যখন কথা হচ্ছিল, শুধু একটি কথাই বলছিল-"শুধু মনে হয় সব মিথ্যা, আমি একা, ব্যর্থ, পঙ্গু, সঙ্গীহীন, নিঃস্ব মরুভূমি"। আসলে তরুণ বয়সের হৃদয়াবেগগুলোও যেন একপ্রকার হৃদরোগ। যা আজও চিকিৎসা শাস্ত্রের অন্তর্গত হয়নি।

যদি তাই হত, তবে তো সব তরুণ-তরুণীর জীবনগুলো লাভ-ক্ষতি অঙ্কের মত মিলে যেত জীবনের খাতার পাতায়। কেন এমন হয়ঃ মনোরোগ বিষেশজ্ঞ ডাঃ মোহিত কামালের লেখা একটা বইয়ে পড়েছিলাম-"প্রেম-ভালবাসা মানুষের জীবনের একটি ইতিবাচক দিক। এটি যেকোন সময়, যেকোন মুহূর্তে, যে কারো জীবনেই আসতে পারে। সাধারণত টিনএজ বয়সটিতে (১৩-১৯ বছর) শরীরে হরমোনের নিঃসরণ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। এই হরমোনের কারণে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন সাধিত হয়।

আবেগের জোয়ারে চালিত হয় এরা। কোন চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই এরা জড়িয়ে পড়ে অসম বা অনৈতিক প্রেমে। প্রেমটাকে তাদের জীবনের সর্বস্ব মনে হয়। অসম বা অনৈতিক প্রেমের কোন স্থায়িত্ব থাকে না। এই সকল আঘাত থেকে এরা অনেকে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে এবং সামনে এগিয়ে চলার পথও হয় রুদ্ধ।

জীবনে আসে ছন্দপতন"। করণীয়ঃ আসলে প্রেম-ভালোবাসা প্রতিটি মানুষের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে সমগ্র জীবনটাই যে প্রেমনির্ভর বা প্রেমই মানুষকে সমগ্র জীবনকে চালনা করবে এমন ধারণা থাকাটা ভুল। প্রেমে যারা সফল তাদের কথা নাইবা বললাম। তবে প্রেমে বিফল বা প্রেম থেকে আঘাত পেয়েছে যারা তাদের উদ্দেশ্যে কয়েকটি কথাঃ- - জীবনটা প্রেমসর্বস্ব নয়।

আর একটা প্রেমে বিফল হলে ভেঙ্গে পড়ারও কিছু নেই। জীবনে কিছুই পেলাম না বা জীবন নিঃস্ব, এমন ভাবাটা ভুল। - এমন ঘটনা যদি ঘটেই যায় জীবনে তবে বিপর্যস্ত না হয়ে, নিজেকে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রাখাটাই ভাল। এই সময়গুলিতে অভিভাবকদেরকে মানসিক সাপোর্ট দিতে হবে। অভিভাবকরা এই সময়ে অকারণে সন্তানকে দোষারোপ করবেন না।

- প্রেমের ক্ষেত্রে আবেগ প্রাধান্য পায় তবে যুক্তির মাথা খেয়ে নয়। - প্রেমের ক্ষেত্রে যেসব বিষয়গুলোকে ভাবতে হবে- বয়স, যোগ্যতা, ধর্ম, পারিবারিক স্ট্যাটাস। - যারা একটু প্রেমিক স্বভাবের, প্রতিক্ষণেই প্রেমে পড়ে, তারা তাদের নিজেদেরকে একটু নিয়ন্ত্রণ ও সংযত করতে পারলেই ভাল করবে। এভাবে অনেক প্রেমে জড়িত থাকলে কোন প্রেমই সফল হয় না। সেই সাথে সকলের বিশ্বাস ও আস্থা নষ্ট হয়।

এমন ছেলে বা মেয়েকে কেউই ভাল চোখে দেখে না। বহু প্রেমের মানুষগুলো আসলে প্রেমিক/প্রেমিকা নয়, আসলে তারা মন্দ চরিত্রের মানুষ। সাবধানতাঃ অসম প্রেম থেকে সাবধান থাকা উচিত। ই-মেইল বা মোবাইল প্রেম থেকেও সাবধানতা অবলম্বন করা ভাল। কিছু কিছু বয়স্ক লোকের টিনএজ প্রীতি লক্ষ্য করা যায়।

এই ধরনের প্রেম যারা করে মেডিক্যালের ভাষায় এটিকে বলে "পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার"। শুধুমাত্র শারীরিক, মানসিক তৃপ্তির জন্যই বয়স্ক লোকেরা এমনটি করে থাকেন। আমার খুব পরিচিত এমন একজনকে জানি-যিনি অহরহ প্রেমে পড়েন। তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম-কেনো সে অমন করে প্রেমে পরেন? উত্তরে বলেছিলেন-"যার হৃদয় যত বড়, সেই তত বেশী প্রেমে পরে"! আমার মনে হয় অমন বড় হৃদয়ের মানুষগুলোও কিছুটা মানষিক অসুস্থ্য। প্রেম বা ভালবাসা মানুষের জীবনের একটি ইতিবাচক দিক।

তবে বাস্তবতার প্রেক্ষিতে প্রেম ভালবাসার বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত হয়। প্রেমে ব্যর্থ যারা, তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, একটি প্রেম না হয় সফল হয়নি তাতে কি? জীবনের কোন মুহূর্তে তোমার জন্য হয়তো অপেক্ষা করছে আরো ভালো, আরো সুন্দর কেউ না কেউ। যে তোমার শ্রাবণ মেঘগুলো কেড়ে নিয়ে তোমার মনের আকাশে সূর্যের হাসিতে ভরিয়ে দেবে।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।