আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাহাত্তুরের সংবিধানে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন নেই : ফরহাদ মজহার



১৯৭২ এর সংবিধানের ক্রটির কথা কি বলবো ! যেহেতু এটিতে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন নেই , জনগণের সাথে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে এটি প্রণীত হয়নি সেহেতু এটিই প্রথম ভুল বা ক্রটি । নির্বাচনোত্তর কালে যাদেরকে সংবিধান প্রণয়ণের জন্যে পাঠানো হয়েছিল তারা স্বঘোষিতভাবে সংবিধান সভা শেষে সংবিধান তৈরী করেছে । অর্থাৎ কিভাবে একটি জাতিকে বিদেশী আধিপত্যের অধীন থেকে শাসন করতে হবে এটারই সমষ্টি হচ্ছে ১৯৭২ এর সংবিধান । আমি আবারও খুব স্পষ্টভাবে বলছি ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের জনগণ সংবিধান প্রণয়ন করেনি । ৭২ সালে তো সকল রাজনৈতিক দলকে নিয়ে নতুন করে কোনো সংবিধান সভা ডেকে সংবিধান করা হয়নি ।

আর তাহলে সংবিধান সম্পর্কে এই তথ্য বিকৃতি কেন করা হচ্ছে ? জনগণকে কেন মিথ্যা তথ্য দেয়া হচ্ছে । বাংলাদেশের সংবিধান সভা ডাকা হয়েছিল ৪ মার্চে । আর এটি করা হয়েছিল ভারতে বসে । এর পরের সরকার ছিল আওয়ামী লীগের সরকার । তারা ছিল ভারতের দালাল মার্কা সরকার ।

জনগণের সরকার তারা কখনই ছিল না । ফলে তাদের নির্মিত সংবিধান কিভাবে জনগণের সংবিধান হয় ! এটি ছিল আওয়ামী লীগের সংবিধান । আর বাংলাদেশে গত ৩৮ বছরের ইতিহাসের লড়াই কিন্তু সেটাই । সংবিধানের ক্রটির কথা জানতে চেয়েছেন - এক্ষেত্রে আমাদের গোড়াতেই তো গলদ রয়েছে । আর সেই শুরুর ভুল সংশোধন না করে আপনি সংবিধান সংশোধন করবেন- তা কি করে হয়।

সংবিধানে অপশন রাখবেন দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলে সংবিধান সংশোধন বা পরিবর্তন করতে পারবেন , আবার একথাও থাকবে অস্ত্রের জোরে ক্ষমতা দখল করে পরে নতুন সংসদ ডেকে সেখানে বলা হবে এ পর্যন্ত যা কিছু আপনারা করেছেন সব কিছুকে বৈধ করা হলো। তো এভাবে কি রাষ্ট্র চলতে পারে ? আর এসব রাজনৈতিক দলকে কি রাজনৈতিক দল বলা যাবে ; নাকি সব চোর ডাকাত! এদেরকে রাজনৈতিক দল বলাটা তো অন্যায় । জনগণের প্রতি কি এদের দরদ বা ভালোবাসা আছে ? গত প্রায় চল্লিশ বছরে এরা বাংলাদেশের জনগণের জন্যে কি করেছে ? এ দেশকে একটি উপনিবেশ বানানো ছাড়া ; এদেশের মানুষকে ঘরছাড়া করা ছাড়া ! বাংলাদেশের অসহায় দরিদ্র মানুষেরা মালয়েশিয়া, সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়ে উপার্জন করে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে দেশে । সেই টাকার উপর ভর করে চলা ছাড়া সরকারগুলো কি করেছে ? সেই সব প্রবাসী গরিবদের লুন্ঠন করা ছাড়া তারা আর কি করেছে ? দেখুন , আমি এখন গ্রামে আছি - সেই গ্রামসহ দেশের প্রতিটি গ্রামের দিকে তাকান - সেখানে কি দেখতে পাবেন ! সেখানে চলছে হাহাকার । মানুষের কাজ নেই , ঘরে খাবার নেই - এক বেলা খেলে পরে কি খাবে সেই সংগ্রামে লিপ্ত থাকতে হয় ।

দ্রব্যমূল্য মানুষের লাগামের বাইরে ; তো এভাবে মানুষ বাঁচবে কি করে । দেশের নদীর দিকে তাকান - পানি শুকিয়ে গেছে। ক্ষেতের দিকে তাকান ফসল নেই যেন বিরান ভূমি । যখন দেশের এই অবস্থা তখন গণমাধ্যম এবং সরকার বলছে সংবিধান সংশোধনের কথা । আসলে কি এটি কোনো ইস্যু ! মাত্র কদিন আগে দেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের ভেতন ভাতা নিয়ে যে ঘটনা ঘটলো - এদেশের গরীব মানুষদের প্রতি সরকারের, গণমাধ্যমের বা রাজনৈতিক দলগুলোর একটি ফোটা দরদ নেই ।

ফলে সরকারের এই সংবিধান দিয়ে দেশের মানুষ কি করবে ? এরপরও সরকার যদি সংবিধান সংশোধন করতে পারে করুক - দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কি হয় ! সরকার যদি টিপাইমুখ বাঁধ দিতে দেয় ভারতকে , সরকার যদি জনগণের কথা দেশের স্বার্থের কথা না ভেবে বিভিন্ন দেশের সাথে নানারকম চুক্তি করতে পারে , তারা যদি দেশের ক্ষতি হয় জেনেও বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানীগুলোকে দেশের গ্যাস ও খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানের কাজ দেয় বা তেল গ্যাস সব তাদেরকে দিয়ে দেয় - তাহলে কে তাদেরকে ঠেকিয়ে রাখবে ! তারা রাজনৈতিক ক্ষমতায় আছে এবং তারাই দেশটাকে চালাচ্ছে । আর আমরা জনগণ একটা পরাধীন দেশে বাস করছি ; এটিই হচ্ছে বাস্তবতা । Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।