আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খেয়াল ও খোয়াব

লেখালেখির কারখানা খেয়াল ও খোয়াব সতীর্থ মুবিন বোটানিক্যাল গার্ডেনে ঘুরে ফিরে ফাই ফরমাশ খেটে যা পায় তা দিয়েই আল-আমিন পরিবারের খরচের জোগান দেয়। ক্লান্ত দেহে ছাতিম গাছের তলায় শরীরটা এলিয়ে দিলে চোখে ভাসে লাল নীল সাইরেন বাতির আলোয় একজন তাগড়া জোয়ানের সিনাটান লেফট রাইট। পুলিশের ঠাটবাট, পোশাক-আশাক তাকে খুব টানে। পুলিশকে যখন বন্ধুরা ঠোল্লা বলে টিটকারি করে সেটা তার সহ্য হয় না। ছোটবোন কুলসুম বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ, আজ তার শরীরটা আরো একটু বেশি খারাপ।

আজ হরতাল, অফিস দোকানপাট বন্ধ থাকলেও আলামিনের কোন ছুটি নেই। সে বেরিয়েছে কাজের খোঁজে। আজ আর সে প্রতিদিনের মতো মাজারে বোনের সুস্থতার জন্য কোন টাকা দেয়নি, কুলসুমকে খুশি করার জন্য ফুল আনতেও গেলনা পার্কে। বড় রাস্তার মোড়ে এসে দাঁড়ালে হঠাৎ কোত্থেকে একটি ছেলে এসে তার হাতে একটা পলিথিনের ব্যাগ ধরিয়ে বলে রাস্তার ওপারে গলিতে দিয়ে আসতে। ব্যাগ নিয়ে সে গলির মুখে ঢুকেছে কি কয়েকজন লোক হুরমুড় করে তার পাশ দিয়ে দৌড়ে চলে যায়, মুখ ঘুরেই দেখে অনেক পুলিশ তেড়ে আসছে।

সে আনমনে রাস্তা পার হতে যাচ্ছে। যেই পুলিশের দল তার কাছে এসেছে অমনি তার হাতের পলিথিন ব্যাগ ছিড়ে যায়, আর সাথে সাথে কয়েকটি জর্দার কৌটা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। প্রথমেই আলআমিন দেখে অনেকগুলো কালো বুট তার দিকে এগিয়ে আসছে, কেউ একজন বলে ওঠে, এই সেই শুয়োরের বাচ্চা, এরপর আলআমিনের আর কিছু মনে নেই। কুলসুমের শরীর বেশি খারাপ হলে অনেক খোঁজাখুজি করে একটি অ্যাম্বুলেন্স জোগার করে কুলসুমকে নিয়ে তার মা হাসপাতালের দিকে ছোটে। কিন্তু হাসপাতালে পৌছানোর আগেই কুলসুম মারা যায়।

তিন দিন পর ছাড়া পায় আল-আমিন। হাজত থেকে বের হয়ে পকেটে থাকা কয়েনটা মাজারে দিয়ে গার্ডেনে যায়। গার্ডেন থেকে একগোছা মাধবীলতা নিয়ে বাড়িতে আসে। সেখানে তখন শ্মশানের নিস্তব্ধতা। কোথাও কুলসুম নেই।

কাপড় শুকানোর তারে ঝুলছে কুলসুমের সাদা নীল জামাটা। আলামিন আবার কাজে বের হয়, ছাতিম গাছের নীচে গিয়ে শোয়, আবারো লাল নীল সাইরেন আলোয় সিনাটান তরুণ জোয়ান দেখে, কিন্তু এবার কানের মধ্যে বাজতে থাকে চিৎকার হুল্লোর আর অকথ্য গালাগাল। জোয়ান তার দিকে একবার ফিরে তাকায়, তাকিয়ে কুয়াশায় মিশে যায়। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।