যে নদীর গভীরতা বেশি, তার বয়ে চলা স্রোতের শব্দ কম।
এক.
রবিন আমাকে ওর এক ক্লাসমেটের বাসায় নিয়ে গেল। মেয়ে ক্লাসমেট। যাওয়ার সময় খুব কড়া করে সতর্ক করে দিলো
-খবরদার দোস্ত, তিয়ানার দিকে কু নজরে তাকাবি না। চোখ খুইল্যা ফালামু।
তিয়ানা ওর ক্লাসমেটের নাম।
ওরা একসঙ্গে জগন্নাথে পড়ে। অনার্স সেকেন্ড ইয়ার।
আমি বল্লাম
-কু নজর মানে কী ?
-কু নজর বুঝস না ? সাধু সাজোস ?
-সাধু সাজার কী আছে ? তুই তর বান্ধবীরে দেখাইতে নিয়া যাইতাছোছ। আমি দেখমু।
এখানে কুনজর আর সু নজরের বিষয় আসে ক্যান ?
-এত কিছু জানি না। আমার বান্ধবী। সুতরাং তুই প্যাভেলিয়ানে বইসা দেখবি। মাঠে নামার দরকার নাই।
- মাঠে নামার দরকার নাই মানে ! তর বান্ধবী মানে আমার বান্ধবী হতে পারে না ? এইডা দোস্ত তুই কী কস ?
রবিন আমার দিকে যে দৃষ্টি নিয়ে তাকালো, তাকে একনামে সহি শুদ্ধভাবে বলা হয় অগ্নিদৃষ্টি।
আমার ভষ্ম হবার উপক্রম। আমি অফ গেলাম।
তিয়ানাদের বাসা মালিবাগ সিদ্দেশ্বরীতে। আমরা এখন তিয়ানাদের বাড়ি। তিয়ানার আম্মার সাথে গল্প করছি।
ভদ্রমহিলা কোন কারণ ছাড়াই আমাকে পছন্দ করে ফেললেন।
-বাবা তোমরা আমার ছেলের মত। তোমাদের সাথে তিয়ানা চলাফেরা করে বলে আমাদের কোন দু:শ্চিন্তা নাই। তোমরা অরে একটু গাইড দিও।
আমি বললাম
-কোন চিন্তা নাই আন্টি।
ওর যেকোন সমস্যায় আমাকে পাবেন। তিয়ানাতো রবিনের ভাল বন্ধু। আজ থেকে আমিও আপনাদের ঘরের ছেলে।
বেশি কি পাম্প হয়ে গ্যাছে ?
তিয়ানার আম্মা আমাদের খাতির যত্নের চূড়ান্ত করলেন।
একটু পর তিয়ানা এলো নাস্তা নিয়ে।
আমি আবারো ভষ্মীভূত হলাম। তিয়ানাকে দেখে।
রবির পরিচয় করিয়ে দিল
-তিয়ানা, ও হলো আমার ফ্রেন্ড। সজল।
তিয়ানা সালাম দিল।
আমি তিয়ানাকে বল্লাম
-শোন, আমি আমার বন্ধুদের গার্লফ্রেন্ডদেরকে ছোটবোনের মত দেখি। সুতরাং আজ থেকে আমিও তোমার বড় ভাইয়ার মত। ঠিক আছে ?
তিয়ানা হাসলো। ওর হাসিতে কী যেন একটা আছে। আমার কেবল ভষ্মীভূত হবার যোগার।
দুই.
মাস চারেক পর।
রবিনের সাথে সম্পর্কের ফাটল ধরেছে।
নদীর এপার ভাঙ্গে ওপার গড়ে'র মত কাকতালীয় ভাবে তিয়ানাদের সাথে আমার সম্পর্ক জমে উঠেছে। শুধু আমার একার সাথে নয়, আমার পরিবারের সাথেও। আমার আম্মার সাথে তিয়ানার আম্মার কী যেন কথা হয়েছে।
এখন দুই ফ্যামিলির দারুণ ভাব। তিয়ানার সাথে প্রতিদিন আমার মোবাইলে কথা হয়। এ এক নতুন সম্পর্ক। একে কি ভালবাসা বলে ?
তিন.
বিজয়কে নিয়ে তিয়ানাদের বাড়ি এসেছি। বিজয় আমার ক্লোজ ফ্রেন্ড।
এরই মধ্যে তিয়ানার সাথে আমার এনগেজমেন্ট হয়ে গ্যাছে। তিয়ানার আম্মা এখন ভাল কিছু রাধলেই আমাকে ডাকছেন। আমি বন্ধু-বান্ধব নিয়ে মাঝে মধ্যে যাই। আজও এলাম।
আমি আর বিজয় ড্রইংরুমে বসা ছিলাম।
তিয়ানা এলো।
আমি তিয়ানাকে বিজয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম।
-তিয়ানা, ও হলো আমার ফ্রেন্ড। বিজয়।
তিয়ানা সালাম দিল।
বিজয় তাকিয়ে রইলো কতক্ষণ। তারপর ঠোঁটের কোণে রহস্যময় এক হাসি এনে বল্ল
-শোন, আমি আমার বন্ধুদের বউ কিংবা গার্লফ্রেন্ডদেরকে ছোটবোনের মত দেখি। সুতরাং আজ থেকে আমিও তোমার বড় ভাইয়ার মত। ঠিক আছে ?
তিয়ানা হাসলো।
আমার শরীরে কেন যেন বিদ্যুত্ খেলে গেল।
আবার সেই ভষ্মীভূত হবার অবস্থা। মনে পড়ছে রবিনের সাথে এসে প্রথমবার তিয়ানাকে বলা আমার কথাগুলো।
আজ আমি বিজয়কেও একই ভাবে সতর্ক করে দিয়েছিলাম দুষ্টুমির ছলে। বলেছিলাম
-খবরদার দোস্ত, তিয়ানার দিকে কু নজরে তাকাবি না। চোখ খুইল্যা ফালামু।
বিজয় হেসেছিল।
বিজয় নিশ্চয়ই কুনজরে তাকায়নি। তিয়ানাকে ছোট বোনের মত ভাবছে। কিন্তু আমি এত অস্বস্তি বোধ করছি কেন ? রীতিমত কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে ঘামছি।
ইতিহাসের কি পূনরাবৃত্তি ঘটতে চলছে ?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।