আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কেমন আছি সৌদি আরবে -একাদশ পর্ব

স্বাগতম

বন্ধুদিবসে এই পর্বটা লেখার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু সময় পেলামনা। যাগগে অনেক দিন আগের কথা,এখানে আমি আর আমার ক্লাশমেট রিয়াজ ছাড়া আমাদের কোন বন্ধু ছিলনা। সেই প্রাইমারী স্কুল থেকেই বন্ধু ছাড়া চলতে পারতামনা। বিকেলে দুইবন্ধু কাধে হাত দিয়ে ঘুড়ে বেড়াতাম,বৃষ্টিতে স্কুলের মাঠে জাম্বুরা নিয়ে ফূটবল খেলতাম আর কে কার কত প্রিয় বন্ধু তা দেখানোর জন্য একই রকমের সার্ট পড়তাম।

এর ধারাবাহিকতা ছিল পুরো ছাত্রজীবনেই। কিন্তু কর্মজীবনে এসে একেবারেই একা!আশ পাশের মানুষগুলোকে বন্ধু বলা যায়না,আমাদের মনমানুষিকতার সঙ্গে একেবারেই বেমানান। মধ্যপ্রাচ্য বলে কথা! হেলাল,টিপু,রিয়াজের সঙ্গে আমার এক সৌদি বন্ধুর ইচ্ছে হলো কনস্ট্রাসন ফার্ম দেবে। আমার থেকে অনেক বিষয়ই তিনি আগে থেকেই কথায় কথায় জেনে নিয়েছিলেন। লাইসেন্স করেই আমাকে তিনি বেশী বেতনের অফার দিলেন;যাতে আমিই তার নুতন ফার্মে যোগ দিই।

কিন্তু আমি রাজি না হয়ে প্রস্তাব করলাম আমার আরেক জানি দোস্তকে ভিসা দিতে, অবসরে তাকে আমি সাহায্য করবো বলে প্রমিজ করলাম। যেই কথা সেই কাজ। আমি আমার জানি দোস্ত হেলালকে ফোনে প্রস্তাব করতেই লাফিয়ে সায় দিল আর ঢাকার প্রজেক্ট বিল্ডার্সকে গুডবাই জানিয়ে সৌদি আরবে এসে গেল। আর এখানে আসার আগে তার বাবা-মা আদর করে বিয়েটাও পড়িয়ে দিল। বিয়ের মাত্র ১৯দিনের মাথায় এখানে এসে তার সেকি অবস্থা! আমরা হয়ে গেলাম তিন বন্ধু।

হাতে গুনে আট ঘন্টা ডিউটির পর আমরা একত্রিত হতাম। গাড়ী করে ঘুড়ে বেড়ানো,রুমে এসে ভিডিওতে ছবি দেখা,তাস খেলা আর গাল গল্প চলতো। আমাদের এই তুই তুকারি গ্রুপে আরো এসে যোগ দিল তেজগা স্টেশন রোডের টিপু। সে ঢাকার হুন্ডাই কোম্পানীর কন্টেইনার সার্ভিসে কমলাপুর স্টেশনে চাকুরী করতো। সংগ দোষে নাকি নেশা করা শুরু করে ছিল তাই তার বাবা মা পবিত্র এই দেশে পাঠিয়ে ছিল পাপ মোচন আর ভাল হয়ে ফিরে যাওয়ার জন্য!এছাড়া এদেশে এসে পরিচয় হয়েছিল মোঃপুরের ইকবালের সঙ্গে।

আমাদের এই তুই তুকারি দলটা বেশ কিছুদিন আনন্দে কাটিয়েছি। ইকবালের সঙ্গে টিপুর কথাই আগে বলি। সে চাকরী করতো দাম্মাম সমুদ্র বন্দরের মাল লোডিং আনলোডিং কোম্পানীতে একজন হেডচেকার হিসেবে। তার বাবা তাকে পাঠিয়ে ছিল ভাল হওয়ার জন্য কিন্তু সে এসে পড়লো এমন এক স্থানে যেখানে ভাল লোকেও খারাপ হওয়ার সম্ভবনা থাকে। রাতে নাকি ডিউটি পড়তো বিদেশ থেকে আগত জাহাজের মাল আনলোডিঙ্গের।

সেখানে নাবিকেরা টিপুকে পানীয় খাওয়াতে ভুলতোনা। চোরের দশদিন সাধুর একদিন!মাতাল হয়ে জাহাজ থেকে নামার পর ধরা খেল,এবং তিন দিনের মধ্যে খালি হাতে সৌদি আরব ছাড়তে বাধ্য হলো। হাফমুন বীচে এদিকে হেলাল উনিশ দিনের বিবাহিত বউকে রেখে এসে কাজে মন বসাতে পারছিলনা। ভৈরব সুন্দরীর প্রেমে দিওয়ানা হেলালকে একবছর ধরে রাখতে পেরেছিলাম। যদিও সে আমাদের সঙ্গে বেশ ভালই ছিল কিন্তু অফিসের কাজে ফেল মেরে আমার নাম ডুবিয়ে চলে গেল।

আল-খুবারের রাস্তায় আমি,রিয়াজ আর ইকবাল ব্যচলরের সুবাদে টিকে রইলাম!!!!!!! (চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.