আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সিলেট মহানগরীর 'নিষিদ্ধ জগৎ'

সকালের মিষ্টি রোদ পেরিয়ে আমি এখন মধ্যগগনে,

লিয়াকত শাহ ফরিদী, সিলেট ব্যুরো সিলেট মহানগরীর পুরনো রেলস্টেশন ও তার আশপাশ এলাকায় গড়ে উঠেছে এক 'নিষিদ্ধ জগৎ'। হেন অপরাধ নেই যা সেখানে হয় না। হেরোইন, গাঁজা ও ফেনসিডিল বিক্রি হয় দেদার। স্টেশনের পাশের ১০/১২টি কলোনিতে বসে মদ-জুয়ার আসর। পাশাপাশি চলে দেহব্যবসা।

পুলিশ মাঝে মাঝে এসব অপরাধ দমনে অভিযান চালায়। তখন বন্ধ হয় সব অপকর্ম। কিন্তু ক'দিন পর ফিরে আসে সেই আগের অবস্থা। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, পুরনো রেলস্টেশন এলাকার ছোট ছোট পানের দোকান এবং ভ্যানগাড়িতে সাজানো দোকানে প্রকাশ্যেই বিক্রি হয় হেরোইন ও গাঁজা। কিছু টোকাই প্যান্টের পকেটে বহন করে হেরোইনের পুরিয়া।

স্টেশনের পাশের কয়েকটি কলোনি থেকে তারা সেগুলো নিয়ে আসে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, পুরনো রেলস্টেশন এলাকার লনীর কলোনি, চিনির কলোনি, চান্দের কলোনি, সালাউদ্দিনের কলোনি, মীর্জাবাড়ির কলোনি, পুতুলের কলোনি, হাজেরার কলোনি ও হিজড়া রনীর কলোনিসহ ১০/১২টি কলোনিতে বসে মদ-জুয়ার আসর। হেরোইন, গাঁজা বিক্রি হয় প্রকাশ্যে। আর রেলের পরিত্যক্ত বগিগুলোতে সন্ধ্যার পর শুরু হয় অসামাজিক কার্যকলাপ। কিছু অসাধু পুলিশ সদস্য এজন্য কলোনিগুলো থেকে নিয়মিত বখরা নেন।

এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী ওইসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ অনেকের। তাদের কারণেই সেখানকার অপরাধ নির্মূল হয় না। রেলস্টেশন এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন বলেন, 'স্টেশনের অপরাধ কর্মকাণ্ড থেকে ক্ষমতাধর ব্যক্তিরাই লাভবান হচ্ছেন। পুলিশ কাউকে ধরলে তারা ছাড়িয়ে আনার তদবির করেন। যে কারণে ওই এলাকা থেকে অপরাধ নির্মূল হচ্ছে না।

' মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা হাজী হেলাল বক্স বলেন, 'যুবকরা মাদকের নেশায় হাবুডুবু খাচ্ছে। স্কুল-কলেজের ছাত্ররা নেশার ছোবল থেকে রেহাই পাচ্ছে না। আর অপেক্ষা করব না। প্রশাসন রেলস্টেশন এলাকার অপরাধ দমনে ব্যবস্থা না নিলে নিজেরাই প্রতিরোধ গড়ে তুলব। ' এলাকার বাসিন্দা লোকমান আহমদ বলেন, 'পুলিশ, রেল পুলিশ ও অপরাধী এক হয়ে গেলে আমাদের কিছু করার থাকে না।

' সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার সৈয়দ তৌফিক উদ্দিন আহমদ পুরনো রেলস্টেশন এলাকাকে 'ক্রাইম জোন' আখ্যায়িত করে সমকালকে বলেন, 'রেলস্টেশনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালানো নিয়ে আমরা সমস্যায় পড়ি। ওই এলাকা জিআরপির আওতাভুক্ত নাকি এসএমপির, তা অনেক সময় নির্ধারণ করা যায় না। ' সিলেট রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিমল কুমার চাকি বলেন, 'এলাকার সীমানা নিয়ে আমরাও সমস্যায় পড়ি। আমরা রেললাইন পার হয়ে অভিযান চালাতে পারি না। আর বেশিরভাগ অপরাধ রেলওয়ে প্লাটফর্ম ও রেললাইনের বাইরে ঘটে।

তারপরও জিআরপি অপরাধ দমনে কাজ করছে। ' সিলেট জিআরপির সাব-ইন্সপেক্টর আলাউদ্দিন শেখ জানান, পরিত্যক্ত বগি সরানোর জন্য বহুবার রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে; কিন্তু বগিগুলো সরানো হচ্ছে না। তিনি বলেন, 'হিজড়া ও পতিতারা রেলস্টেশনে আসে। তাড়া করলে চলে যায়। তবে আড়ালে-আবডালে কিছু অপরাধ হয়।

' ওয়ার্ড কমিশনার আশিক আহমদ বলেন, 'জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ওই পাপরাজ্য গুঁড়িয়ে দিয়েছিলাম। তখন বিক্ষুব্ধ লোকজন অপরাধের আখড়া ৫/৬টি কলোনিতে আগুন দেয়। প্রশাসন ওই অভিযানে শরিক হয়। কিছুদিন পর আবারও অপরাধীরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ' এদিকে ওয়ার্ড কমিশনার সেলিম আহমদ রনি জানান, রেলওয়ে এলাকার অপরাধ নির্মূলে দক্ষিণ সুরমা সমাজকল্যাণ সমিতি সর্বস্তরের জনগণকে নিয়ে চলতি সপ্তাহে সভা আহ্বান করেছে।

সভায় ওই এলাকার অপরাধ নির্মূলে কী করা যায় তা ঠিক করা হবে। আর প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে। ' সুত্র সমকাল)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.