আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এবার বাংলাদেশকে পাশে চায় ভারত



এবার বাংলাদেশকে পাশে চায় ভারত ব্রহ্মপুত্র নদের উৎসে চীনের বাঁধ নির্মাণ ব্রহ্মপুত্র নদের উৎসে চীনের বাঁধ নির্মাণকে কেন্দ্র করে এবার বাংলাদেশের সঙ্গে জোরালো অবস্থান নিতে যাচ্ছে ভারত, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। বাংলাদেশের অভিন্ন নদীর পানি সমস্যা সমাধানে দীর্ঘদিন ধরে ভারত নীরব থাকলেও এবার বড় দেশ চীনের একতরফা সিদ্ধান্তের কারণে নিজেদের সমূহ ক্ষতির মুখে বাংলাদেশের সহযোগিতার অনুরোধ করেছে ভারত। ব্রহ্মপুত্র হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ নদ। ভারত, বাংলাদেশ ও চীনের ওপর দিয়ে প্রবাহিত এ নদ ২ হাজার ৯০০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এর অর্ধেকই বয়ে গেছে চীনের ওপর দিয়ে।

বাকি অর্ধেক ভারত ও বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। হিমালয়ের হিমবাহ থেকে বেরিয়ে এসে প্রায় ১৪ হাজার ফুট ওপরে নানা পাহাড়ি খাদে এঁকেবেঁকে নেমে আসা এ নদ পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু নদ হিসেবেও স্বীকৃত। সম্প্রতি ব্রহ্মপুত্রের উৎসে বাঁধ নির্মাণ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং খালের মাধ্যমে পানি প্রত্যাহারের এক মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে চীন। ব্রহ্মপুত্রের চীনের অংশে সাংপ্রো নদীতে বাঁধ এবং খাল তৈরি করার পরিকল্পনা নিয়েছে। ব্রহ্মপুত্র থেকে বাংলাদেশের প্রয়োজনের প্রায় অর্ধেক পানি আসে।

ভারত তার পানি চাহিদার ৩০ ভাগ পায় এ নদী থেকে। বাংলাদেশ সেন্টার ফর এনভায়রন-মেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসের (সিইজিআইএস) হিসাবে, এ বাঁধ হলে বাংলাদেশের ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি এক-তৃতীয়াংশ কমে যাবে। যমুনা নদীর পানিনির্ভর কয়েকটি নদী মরে যাবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর ফলে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ ও ভারত পানির জন্য এবং বন্যার সময় আত্মরক্ষার জন্য চীনের অনুগ্রহের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। ফলে ভারত এ প্রকল্পের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার জন্য বাংলাদেশকে অনুরোধ জানিয়েছে।

এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবার ভারতকে কাঁবু করতে বাংলাদেশকে কৌশলী হতে হবে। বাংলাদেশকে দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে এবার ভারতকে চাল দিতে হবে। যাতে ভারত একতরফা আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের পুরো সমীক্ষা ও নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখে। গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা নদীর অববাহিকায় অবস্থিত অঞ্চলগুলো নিয়ে (ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান ও চীন) জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানের একটি আঞ্চলিক কমিশন গঠন করে পানি সম্পদ ব্যবহারের নীতিমালা প্রণয়ন, কৌশল নির্ধারণ ও পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। আন্তর্জাতিক লবিতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি করতে হবে।

সেকং নদী কমিশনের মতো বাংলাদেশেও একটি কূটনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। মেকং নদীর অববাহিকায় অবস্থিত কাম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, লাওস ও ভিয়েতনামের মধ্যে মেকং নদীর পানি ব্যবহারের বিষয়ে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মেকং নদী কমিশন গঠন করা হয়। এ কমিশন সব দেশের মধ্যে সমন্বয় রেখে পানি বণ্টন করে দিচ্ছে। তাতে তাদের মধ্যে পানি সংক্রান্ত বিরোধেরও অনেকটা নিষ্পত্তি হয়েছে। ইউরোপ মহাদেশের দানিয়ব নদীর পানিও ১২টি দেশ সমতার ভিত্তিতে ভাগ-বাটোয়ারা করছে।

নীল নদের পানি ভোগ করছে মিসর, সুদান ও ইথিওপিয়া। সিন্ধু অববাহিকা চুক্তির মাধ্যমে ভারত তার চির বৈরী রাষ্ট্র পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু নদের পানি ভোগ করছে ৩০ বছর আগে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক আইন লংঘন করে চীন ইয়ার সুং সাংপো নদীতে বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর অপমৃত্যু ঘটবে এবং দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা মরুভূমিতে পরিণত হবে। চীন সরকার ৪০ হাজার মেগাওয়াটের বিশ্বের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য এক তরফাভাবে কাজ শুরু করেছে।

এজন্য ইয়ার সুং সাংপো নদীর ব্রহ্মপুত্র নদের উৎসমুখে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এই বাঁধ নির্মাণ শেষ হলে ২ হাজার ৯০০ কিলোমিটার জলধারার অপমৃত্যু হবে। ফলে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদী মারা যাবে। নদী অববাহিকার জীব-বৈচিত্র্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এমনকি বাংলাদেশের বৃহত্তর অংশ মরুভূমিতে পরিণত হবে বলে পরিবেশ বিশেজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।

সূত্র মতে, যে নদীতে বাঁধ দেয়া হচ্ছে সেটি হিমালয় পর্বতের তিব্বতের অংশ কৈলাসটিলা পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে ইয়ার লুং সাংপো নামে জিমা-ইয়াং জং হিমশৈল উত্তর হিমালয় থেকে পূর্ব দিকে প্রায় ১ হাজার ৭০০ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়েছে। পরে তা বিশ্বের সর্বোচ্চ নদী নামচা বারওয়া পর্বতের কাছে বাঁকা হয়ে গতিপথ পরিবর্তন করে দক্ষিণ দিকে ইয়ার লুং সাংপো গিরিখাত ভারতের অরুণাচল প্রদেশে প্রবেশ করে দুটি প্রধান নদীর সঙ্গে মিলিত হয়। এরপর দিবরুগড় ও লক্ষ্মীপুরের মাঝামাঝি এসে নদীটি দুটি চ্যানেলে বিভক্ত হয়ে একটি উত্তরাঞ্চলের খেরকুটিয়া চ্যানেল এবং অন্যটি দক্ষিণাঞ্চলে ব্রহ্মপুত্র নদ নাম ধারণ করেছে। এই নদীটি ভারতের ধুবরী নামক স্থানে কুড়িগ্রাম জেলার ভেতর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। প্রায় ২০০ বছর আগে ভূমিকম্পের ফলে ব্রহ্মপুত্র নদী দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে একটি যমুনা নাম ধারণ করে গোয়ালন্দের কাছে পদ্মা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়।

বর্তমানে যমুনা নদীতে শুষ্ক মৌসুমে নাব্য সঙ্কট রয়েছে। অন্য শাখাটি বাহাদুরাবাদের উজানে হরিণধরা নামক স্থানে পুরনো ব্রহ্মপুত্র নামে বর্তমানে জামালপুর, ময়মনসিংহ এবং কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব বাজার নামক স্থানে মেঘনা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়। বর্তমানে পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদ নাব্য সঙ্কটের কারণে নদীর অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। চীন ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর পৃথিবীর দীর্ঘতম বাঁধ যে নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে, তাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ২৬টি টারবাইন থাকবে। তারা আশা করছে, এ থেকে ৪০ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।

চীনের প্রকৌশলীরা বলছে, এ বাঁধ থেকে যে বিদ্যুৎ হবে তা ভারত, বাংলাদেশ ও নেপাল সস্তায় পেতে পারবে। এছাড়া ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার বন্যাও নিয়ন্ত্রণ করবে এ বাঁধ। বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি চীন ব্রহ্মপুত্রের পানিও প্রত্যাহার করে নেবে। এ পানি তারা ৪০০ কিলোমিটার দূরে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় জিনজিয়াং প্রদেশের গোবি মরুভূমি এবং গাংসু প্রদেশে সেচকাজে ব্যবহার করবে। পানি প্রত্যাহার করার জন্য তারা হিমালয়ের ভেতর দিয়ে আট কিলোমিটার টানেল নির্মাণ করবে।

তবে প্রকল্পটি এখনো পরিকল্পনা এবং জরিপ পর্যায়ে আছে। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এ দেশের নদীগুলোর প্রধান উৎস হলো হিমালয় পর্বতমালা। বাংলাদেশের বুকে বয়ে চলেছে প্রায় ৭১০টি নদ-নদী, যার মধ্যে ৫৭টি আন্তর্জাতিক নদী। এই ৫৭টি আন্তর্জাতিক নদীর মধ্যে ৫৪টি নদী ভারতের সঙ্গে এবং তিনটি মিয়ানমারের সঙ্গে সংযুক্ত।

বাংলাদেশ গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা অববাহিকাগুলোর সর্বনিম্নে অবস্থিত। বৃহৎ এ অঞ্চলের মাত্র ৭ দশমিক ৫ শতাংশ এলাকা বাংলাদেশে পড়েছে। ফলে বাংলাদেশে বন্যার ৯২ ভাগ পানিই আসে ভারত থেকে আরও জানুন: Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.