গভীর কিছু শেখার আছে ....
যানজট নিরসনের জন্য অফিস টাইম নিয়ে টানাহেঁচড়ার চেয়ে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ জরুরি। ঢাকা সিটিতে এতো প্রাইভেট কার কেন এবং পাবলিক পরিবহনের দৈন্যদশাই বা কেন তার খোঁজখবর নেয়া জরুরি। যত্রতত্র কার পার্কিং কেন তার হিসাব নেয়াও জরুরি। এসব জরুরি কাজের হিসাব না নিয়ে অফিস টাইম আর ঘড়ির কাঁটা নিয়ে টানাটানি সমস্যা বাড়াবে বই কমাবে না।
স্কুলের আশপাশে সব ছাত্রছাত্রীর বাসা নয়।
অফিসের কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিকট দূরত্বে সবার আবাসস্থল নয়। রাজধানী ঢাকায় অনেকেই ২০-২৫ কিলোমিটার দূর থেকে কর্মস্থল ও স্কুল-কলেজে পৌঁছেন। একটি আধুনিক শহরে ২০-২৫ কিলোমিটারের দূরত্ব অতিক্রম করার কথা সর্বোচ্চ আধঘণ্টায়। সেখানে ঢাকা সিটিতে এই পরিমাণ দূরত্ব অতিক্রম করতে লেগে যায় আড়াই-তিন ঘণ্টা। আট ঘণ্টার অফিস করার জন্য কর্মস্থলে আসতে-যেতে চলে যায় ছয় ঘণ্টা।
যানজট মানুষের উৎপাদন ক্ষমতাকে যেভাবে নষ্ট করে ফেলছে, তাতে নিঃসন্দেহে বলা যায়, নিকট ভবিষ্যতে তা ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি করবে। উপরন্তু মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার ওপর যদি বাড়তি কিছু চাপিয়ে দেয়া হয় তাহলে তাকে গোদের ওপর বিষফোঁড়ার সঙ্গে তুলনা করা যায়।
দিনের আলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার করে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য চলতি বছরের ১৯ জুন রাত ১১টায় ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা এগিয়ে আনা হয়। বিদ্যুৎ সাশ্রয় হোক বা না হোক, গ্রীষ্মকালে দিনের দৈর্ঘ্য বড় থাকার কারণে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনে তা খুব প্রভাব ফেলেনি। কিন্তু শীত মৌসুম যতো এগিয়ে আসছে ততোই সকাল ৮টায় ৯টা বেজে যাওয়া মানুষের ওপর প্রভাব ফেলছে।
কথা ছিল দিনের দৈর্ঘ্য যখন ছোট হয়ে যাবে অর্থাৎ ১ অক্টোবর থেকে ঘড়ির কাঁটা আগের জায়গায় চলে যাবে। কিন্তু ঘড়ির কাঁটা পেছায়নি। এর ওপর যানজট নিরসনের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সময়সূচি বিভিন্নরকম করা হয়েছে। গত রোববার থেকে নতুন সময় কার্যকর হওয়ার পর গত দুদিনের অভিজ্ঞতায় বোঝা গেছে, এতে যানজট তো কমেইনি বরং এখন রাস্তার জন্য সারাদিনই হয়ে গেছে পিক আওয়ার। যানজট আর যানজট।
ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে দেয়া, দেয়ার পর আবার পিছিয়ে না দেয়া, তিন-চার রকমের অফিস টাইম নির্ধারণ করা, এসি সাশ্রয়ের জন্য টি-শার্ট পরে অফিসে যাওয়ার নিয়মকানুন মানুষ স্বাভাবিকভাবে নেয়নি। সরকারের উচিত এ জাতীয় সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আরো চিন্তাভাবনা করা। নতুন যে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে তাতে সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত অফিস সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলবে। অর্থাৎ আগের ৮টায় অফিস শুরু হবে। আগেই বলেছি সবার বাসাই অফিসের নিচতলায় নয়।
দূর-দূরান্ত থেকে ঢাকায় মানুষ কর্মস্থলে আসে। রাস্তায় যানজটের যে অবস্থা তাতে মিরপুর ১২ নাম্বার যার বাসা তাকে মতিঝিলের অফিস ধরতে হলে ভোর ৬টায় রওনা হতে হবে। আর তৈরি হতে চলে যাবে আরো এক ঘণ্টা। মানে এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভোর সাড়ে ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে ঘুম থেকে উঠতে হবে।
ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে নেয়ার মতো সিদ্ধান্ত যারা নেন তাদের জানা উচিত শীত মৌসুমে ভোর ৫টায় কাকপক্ষীও ডাকে না।
থাকে ঘোর অন্ধকার। সরকার যদি ঘড়ির কাঁটাকে আগের জায়গায় ফিরিয়ে না নেয় তাহলে এবার গাড়ি, বাসের হেডলাইট জ্বালিয়ে অফিসে আসতে হবে। সেটা একটা হাস্যকর ব্যাপারই হবে।
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে আনা এবং যানজট নিরসনের জন্য অফিস টাইম এদিক-সেদিক করে লাভ কিছুই হবে না বরং মানুষের স্বাভাবিকতাকে নষ্ট করে দেয়া হবে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের আরো অনেক পথ আছে।
এর একটিÑ বিদ্যুৎ কর্মী কর্তৃক বিদ্যুৎ চুরি রোধ। বিদ্যুৎ চুরি রোধ করতে পারলে ঘড়ির কাঁটার চেয়ে তা অনেক ফল দেবে। যানজট নিরসনের জন্য অফিস টাইম নিয়ে টানাহেঁচড়ার চেয়ে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ জরুরি। ঢাকা সিটিতে এতো প্রাইভেট কার কেন এবং পাবলিক পরিবহনের দৈন্যদশাই বা কেন তার খোঁজখবর নেয়া জরুরি। যত্রতত্র কার পার্কিং কেন তার হিসাব নেয়াও জরুরি।
এসব জরুরি কাজের হিসাব না নিয়ে অফিস টাইম আর ঘড়ির কাঁটা নিয়ে টানাটানি সমস্যা বাড়াবে বই কমাবে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।