আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মন বসে না পড়ায় আমার কাঠাঁলচাপার গন্ধে

অভিলাষী মন চন্দ্রে না পাক, জ্যোৎস্নায় পাক সামান্য ঠাঁই

সূর্যীমামা হাত বুলায় না আমার পড়ার ঘরে আমার বইয়ের পাতায় ঘুমিয়ে থাকে একটা বিদ্যাপাতা একদিন, দুইদিন একে একে চারটি মাসে বিদ্যাপাতা শুকায় আমি বিদ্যাপাতা কবর দেই আমার দীঘলকালো চুলে কাঠাঁলচাপার গন্ধ ভাসে আমার ভেজা চুলে। মন বসে না পড়ায় আমার কাঠাঁলচাপার গন্ধে কাঠাঁলচাপার গন্ধে...কাঠাঁলচাপার গন্ধে...মন বসে না পড়ায় আমি এদিক সেদিক খোঁজে ফিরি আমার হারিয়ে যাওয়া ভাঙা ঝুনঝুনি ঝুনঝুনি...ঝুনঝুনি...আমার ভাঙা ঝুনঝুনি। হঠাৎ আমার ঘোর কেঁটে যায় কাঠাঁলচাপার গন্ধে আমার ইচ্ছে ঘুড়ি বন্দী হয় ভাঙা ঝুনঝুনির ঘরে ভাঙা ঝুনঝুনি...ভাঙা ঝুনঝুনি...আমার ইচ্ছে-ঘুড়ি হারায় বিদ্যাপাতা...বিদ্যাপাতা...ঘুমায় আমার চুলে। আমার ঘুম আসে না...ঘুম আসে না কাঠাঁলচাপার গন্ধে। মন বসে না পড়ায় আমার কাঠাঁলচাপার গন্ধে মন বসে না...মন বসে না...ধুর ছাই পড়ায়! ******* ছোটবেলায় শীতের সকালে আমাদের উপজেলায় একটা লোক মুড়ির নাড়ু(লাড্ডু বলেই ডাকতো লোকটা) বিক্রী করতো।

সাদা বিশাল একটা ব্যাগের ভীতরে লাড্ডু ভরে লোকটা কাঁধে নিয়ে ঘুরে ঘুরে বিক্রী করতো। আমার ভীষন ইচ্ছে করতো সেই লাড্ডু খেতে। আম্মু খেতে দিতেন না, নিজের হাতে বানিয়ে দিতেন। কিন্তু আম্মুর হাতের লাড্ডু খেতে মন চাইতো না। সেই বুড়ো লোকটার লাড্ডুর দিকেই চোখ ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতাম।

***** এই সেমিস্টারে চারটা ক্লাস নিচ্ছি। তিনটা ক্লাসের প্রথম পরীক্ষা হয়ে গেলো, (আজকে বাকি একটা ক্লাসের পরীক্ষা দিয়ে আসলাম) তবে খুবই কষ্টের কথা হলো আমি তিনটা পরীক্ষাতেই খুবই বাজে রেজাল্ট করলাম(সব সময় গায়ে বাতাস দিয়ে হিমুর মত চললে যা হয় আরকি, সেটাই হলো)। ছোটবেলার লাড্ডু খাওয়ার শখ যে এখন এইভাবে পূরন হবে সেটা কখনো ভাবি নি। **** আম্মুর সাথে ভীষন রাগারাগি করলাম। আমি পড়াশুনা করি না- এটা নিয়ে সারাক্ষন বক বক করবে।

প্রায়ই বলবে যে আমি প্রথম প্রথম ভালো ইংরেজী না জেনেও ভালো রেজাল্ট করতাম, "স্টুডেন্ড অফ দ্যা ইয়ার" এওয়ার্ড পেলাম, প্রত্যেকটা ক্লাস থেকে বেষ্ট স্টুডেন্টের সার্টিফিকেট পেলাম.....আর এখন! মা'র ঘরে আমার সার্টিফিকেটগুলো ঝুলানো ছিলো। ঐগুলো দেখিয়ে আরো চিল্লা পাল্লা করতো। কি আর করা, রাগের চোটে সব ছুঁড়ে ফেললাম। লেখাপড়া না করলে কি এমন হয়! কবি নজরুল তো পালিয়ে যেতো। সেতো পড়ে নি।

আমাকে কেনো পড়তে হবে?! (আপু বলে,উনি আমার চেয়ে অনেক ভালো জানেন, না জানলে এতো সুন্দর গদ্য, পদ্য কিভাবে লিখলেন!) তবুও, আমার উনার মত ঘরছাড়া হতে ইচ্ছে করে। সারাদিন দৌড়-ঝাপ দিয়ে বেড়াতাম....কিচ্ছু পড়তে হতো না....কত্তো মজা হতো! ***** বিদ্যাপাতার ঘটনাটা একটু খোলে বলি। ছোটবেলা থেকে আমরা, আমরা মানে আমি, আমার আপু, আপুর ৩ বান্ধবী, আরো কিছু খেলার সাথী আমরা বিশ্বাস করতাম যে বিদ্যাপাতা নামের যেই পাতা বইয়ের মাঝে রেখে দিলে বিদ্যা বাড়ে। সেই পাতা আমরা বইয়ের মাঝে রেখে দিতাম। **কবিতাটা যখন লিখি তখন আমি ক্লাসে ছিলাম (আসলে আমার বেশির ভাগ কবিতাগুলোই ক্লাসে বসে লেখা) আমি হঠাৎ করে বুঝতে পারলাম যে ছোটবেলার দিনগুলো অনেক সুন্দর ছিলো।

ছোটবেলায় ভাঙা ঝুনঝুনির মাঝেই যেনো ছিলো আনন্দের সুর, সুখ সুখ ছোঁয়া! আজ আমি এত্ত বড় হয়ে গেলাম যে ঝুনঝুনির কথা একেবারে ভুলতেই বসেছিলাম। তবে আজ মনে হয় লেখাপড়া জিনিসটা না থাকলেই ভালো হতো। ********* প্রায়ই আমি গলা ছেড়ে একটা গান গাই (ব্লগারদের সাথে সরাসরি কোনদিন দেখা হলে না হয় শুনিয়ে দিবো মজার গানটা ) "আম্মু একবার কয় কেনো পড়তে বসিস না আব্বু একবার কয় কেনো লিখতে বসিস না কি করে বলি আমি-"লেখাপড়া ভালো লাগে না! ভালো লাগে না!" ঘুম না হতে ডাকাডাকি সকাল বেলা "স্কুলে যা, স্কুলে যা" কি ঝামেলা! ঘুমতো চোখে মানে না, আম্মু তাহা বুঝে না শাষন করে বলে আমায়-"দেরী করিস না, দেরী করিস না" হঠাৎ যদি পৃথিবীটা এমনি হতো মাস্টারেরা লেখাপড়া ভুলে যেতো! হতোযদি ঘূর্নিঝড়, উড়িয়ে নিতো স্কুলঘর জুম্মাবারে সিন্নি দিতাম-মনের বাসনা, মনের বাসনা। "

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।