আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাজনীতিকদের বলছি- জাতিকে আর কত লজ্জা দেবেন?

Only I know what is my goal, My heart is my temple.

আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল এমপি সম্প্রতি তার কয়েকটি সাক্ষাতকারে নাকি বোমা ফাটিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সমঝোতা করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেছে। প্রতিটি নির্বাচনের পরপরই এ রকমের একটি প্রশ্ন তোলা হয়। পরাজিত দল সুক্ষ্ণ কারচুপি, পুকুর চুরি, ডিজিটাল কারচুপিসহ জয়ী দলের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তুলে আসছে। এবার নির্বাচনের পর বিজেতা দল বিএনপি ডিজিটাল কারচুপির অভিযোগ করে আসছে।

তাদের এ ধরনের অভিযোগ বাস্তবতার কারণেই মিইয়ে যেতে বসেছিল। কিন্তু সেই সুরের পালে আবদুল জলিল হাওয়া দিলেন। বিএনপি এখন জোরেসোরে এ সুর বাজিয়ে চলছে। এর মধ্যেই বিএনপির মহাসচিব খন্দকার দেলায়ার হোসেন বলেছেন, জলিলের বক্তব্য আমাদের সত্যায়ন করেছে। বিএনপির আরেক খন্দকার ড. মোশাররফ বলেছেন, জলিলের বক্তব্য প্রমাণ করে পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে মহাজোট ক্ষমতায় এসেছে।

আরেক নেতা এহসানুল হক মিলন বলেছেন, থলের বিড়াল বের করে দিলেন আবদুল জলিল। বিএনপির ছোটবড় নেতারা এথন এধরনেরই বক্তব্য দিয়ে মাঠ গরম করে চলছেন। এ ডামাডোলে তাদের স্বঘোষিত এন্টিবায়েটিক সাকা চৌ কয়েকটি বোমা ফাটাতে চেষ্টা করেও মনে হয় বিফল হলেন। দলের নেতাকর্মীরা পরের কাপড়ে ময়লা দেখতেই ব্যস্ত । নিজেদের ময়লা দেখার সময় কই।

অথচ দুর্গন্ধে যে দেশবাসীর টেকা দায় হয়ে পড়েছে তার খবর তাদের কাছে নেই। জলিলের এহেন বক্তব্যে নেত্রী অনুগত আওয়ামী লীগের নেতারা প্রথমে মুখে কুলুপ এটে দিয়ে বসে ছিলেন। তবে বিএনপি ফাকা মাঠে গোল দিচ্ছে দেখে আর তর সয়নি নেতা নেত্রীদের। মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হাতে ইস্যু তুলে দিতেই জলিল এমন বক্তব্য দিয়েছেন। কথা বলেছেন সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী।

তিনি বলেছেন, যারা একবার নৌকা থেকে নেমে যায় তারা আর কোনদিন নৌকায় উঠতে পারেনা। তিনি এ বক্তব্যের মাধ্যমে জলিলের ভবিষ্যৎ অনেকটা নির্ণয় করে দিয়েছেন। যদিও আওয়ামী লীগ নেতারা বলে আসছেন নেত্রীই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন। বিতর্ক এ পর্যন্ত জমজমাটই হয়েছে বলতে হবে। দুপক্ষই সরব হলে মানুষ এ নিয়ে কিছু দিন মেতে থাকে।

পরে সব কিছু ভুলে যায়। যেই লাউ সেই কদু। এর মধ্যে বক্তব্যদানকারী নেতা নেত্রীরা পত্রিকার কাটিং সংগ্রহ করে রাখেন। তারা কিছু দিন মিডিয়া গরম করে রেখেছিলেন, আবাল জণগনকে আরও বোকা বানিয়েছেন এ ভেবে আত্মতুষ্টি ভোগ করতে থাকেন। কিন্তু বিতর্কের শেষ দিকে এসে প্রধানমন্ত্রী কথা বললেন, জলিল ওই নির্বাচনে কিভাবে জিতেছেন? তিনি যদি মনে করেন তিনি ওই ভাবে জিতেছেন তাহলে তার পদত্যাগ করা উচিত।

এ পর্যন্ত ও ভালো ছিল। আমার আবালরা বিতর্ক উপভোগ করে যাচ্ছিলাম। কিন্তু এ কি বললেন, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম! শেখ হাসিনা আপস করলে অনেক আগেই ক্ষমতায় যেতে পারতেন। এর মানে কি? তাহলে যারা নির্বাচিত হন তারা আপসের মাধ্যমেই নির্বাচিত হন? এর আগে আপোষ করেননি বলে ক্ষমতায় যেতে পারেননি। এর মানে শেখ হাসিনার কাছে আপোষ করার প্রস্তাব এসেছিলো।

তিনি তাদের ফিরিয়ে দেয়ার কারণে আগেরবার ক্ষমতায় যেতে পারেননি। আমরা অভিভুত। বিস্মিত। একই সঙ্গে এদেশে জন্ম নেয়া রাজনীতিবিদদের কান্ডজ্ঞান দেখে যারপরনাই লজ্জিত। কি বলতে চান তারা ? তাহলে নির্বাচন, সিল, আঙ্গুলে কালি এর সবই ভাওতাবজি? আমরা জানতে চাই কারা শেখ হাসিনার কাছে আপোষের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিল।

কারা তারা ? আর কি ছিল আপোষ প্রস্তাবের বিষয়? ধরে নিলাম- নির্বাচনের আগে কোন আপোষ হয়না। এ বিতর্ক শুধু প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য। তবে আমাদের রাজনীতিবিদরা কি একুটু বুঝেননা যে এ ধরনের বিতর্কে জণগন অপমানিত হয়। তাদের ভোটাধিকার প্রশ্নবিদ্ধ হয়। জাতি হিসেবে আমার ছোট হয়ে যাই।

জণগনের ভোটাধিকার নিয়ে কটাক্ষ করা হয়। গত নির্বাচনের আগে মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে যে ধরনের উচ্ছ্বাস দেখেছি তার কি মূল্য দিলেন তারা। জণগনের অপরাধ তারা অর্থনৈতিক দুর্বিসহ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে কেন্দ্রের সামনে বিশাল লাইনে দাড়িয়ে রোদে পুড়ে ভোট দিয়েছেন। আপনাদের ভোট দিয়েছেন। সেনা সমর্থিত সরকার বিদায় করেছেন।

এখন আপনাদের এ বিতর্ক কি আবার সেই অবৈধ শাসন ব্যবস্থার যৌক্তিকতা প্রমাণ করেনা? এবার আসি কিভাবে সম্ভব আপোষের মাধ্যমে জয়ী হওয়া। ভোট একসঙ্গে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে গণনা করা হয়না। আমি সাংবাদিক হিসেবে গত দুটি নির্বাচন দেখেছি। অবাক হয়ে যাই জালিয়াতি কিভাবে সম্ভব? বুঝলাম জালভোট দেয়া সম্ভব। ভুতুরে ভোট থাকা সম্ভব।

যার যার এলাকার শক্তি অনুযায়ী দু পক্ষই এর সুবিধা নিতে পারেন। কিন্তু তাই বলে ভোটের রায় উল্টে দেয়া। এটা যদি সম্ভব হয় তবে তা হবে বড় কোন ম্যাজিক! পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যাজিকের দেশে বাস করে আমি গর্বিত। কারণ কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোট গণণা করা হয়। প্রতিটি কেন্দ্রে কমপক্ষে চারটি দলের ২৫/৩০ জন এজেন্ট থাকেন।

তারাই ভোট গণণা করেন। ভোট শেষ হওয়ার পরই দেখেছি- দুদলের নেতাকর্মীরা ভোটকেন্দ্র ঘিরে থাকেন। ফল না নিয়ে কেউ বাড়ি যাননা। একসময় কেন্দ্রেই ফল ঘোষণা করা হয়। প্রত্যেক প্রার্থীর এজেন্টেদের কাছে ফলের এককপি দেয়া হয়।

এমনটিইতো দেখেছি। কেন্দ্রে কি কোন ম্যাজিক দেখানো সম্ভব? যদি দেখানো অসম্ভব হয় তাহলে যোগফলে কি করে ম্যাজিক দেখানো যায়? আমার মাথায় এটা আসেছনা। প্রধান দুই দলের প্রার্থীরা কি মোট ভোটকেন্দ্রের ভোট যোগ করতে এতটাই কাঁচা ? আর এ সুযোগে প্রতিপক্ষ জয়ী হয়ে যাবে? আসলে সমঝোতা কিভাবে হয় তা আমাকে কয়েকজন নেতা বলেছেন। ভোটের আগে দেশের প্রভুরা তাদের গোয়েন্দা মারফত জেনে যান কারা নির্বাচনে জয়ী হবে। এর পরেই তারা তাদের সঙ্গে দরকষাকষি শুরু করেন।

তেল গ্যাস ট্রানজিট বন্দর অনেক ইসু্য আছে। আপোষ বলেন সমঝোতা বলেন তাই করার চেষ্টা করে প্রভুরা। আর আমাদের দেশের মেরুদন্ডহীন নেতারা বাধ্য হয়ে তাদের আমলে নেন। জয়ী হবেন জেনেও ভয় পান ওনারা আবার কি করে ফেলেন। এ কারণে তাদের সকল প্রস্তাবেই হা বলে দেন।

যদিও ক্ষমতায় গিয়ে জনমতের কারণে এর বেশিরভাগই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়না। নেতৃত্ব শক্ত হলে এ ধরনের সমঝোতা এড়ানো সম্ভব। তবে তৃতীয় বিশ্বে কোন শক্ত নেতা বেশিদিন বেচেঁছেন বলেও রেকর্ড নেই। আর এ কারণেই সমঝোতা হয়। দু দলই এটা জানে।

বিএনপি যেমন জানে আসলে থলের মধ্যে কোন বিড়াল। সেটা কালো না লাল না সাদা । আর আওয়ামী লীগও সেটা জানে। আর গত নির্বাচনে যে আওয়ামী লীগ জয়ী হবে সেটা একজন শিশুও বলতে পারতো। এজন্য রাজনৈতিক বিশ্লেষক হোয়ার দরকার ছিলনা।

খালেদা জিয়াও জানতেন কি হতে যাচ্ছে। একারণেই দিনরাত খেটে গেছেন এ নেত্রী। দেশের এ প্রান্ত থেকে ওই প্রান্ত মাড়িয়েছেন। কিন্তু তাতে ভোট বাড়লেও ফলাফলের পরিবর্তন হয়নি। শেখ হাসিনাও জানতেন ফলাফল কি হবে।

এজন্য তিনি বলতে গেলে ঘরেই বসে থেকেছেন। ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকারও জানতো কি হবে। একারণেই সরকারের নেপথ্যর নেতৃত্ব আওয়ামী লীগের কাছ থেকে দায়মুক্তি নিয়েছেন। আসলে জয়ী করবেন এ প্রতিশ্রুতি দেয়ার দরকার হয়নি। তারা দায়মুক্তির বিনিময়ে নির্বাচন দেয়ার কথা বলেছেন।

আওয়ামী লীগ তাদের সঙ্গে সমঝোতা করেছে যে ক্ষমতায় গেলে তাদের বিরুদ্ধে কোন এ্যাকশন নেয়া হবেনা। এর বিনিময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচন দিয়েছে। এই ছিল সমঝোতা। তবে ওই সরকার এটা চেপে রেখেছে। একটা রহস্যজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে রেখেছিল।

ভাবটা দেখিয়েছে ভোটে বিএনপি আওয়ামী লীগ হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। এতে কাজও হয়েছে। সাধারণ বিএনপি সমর্থকরা অনেকটাই ম্যানেজ হয়ে গিয়েছিল। তারাো ভাবতে চেষ্টা করেছিল যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। এছাড়া যে বিএনপিকে নির্বাচনে আনা যেতনা।

এতেও খালেদা জিয়া নমনীয় হননি। শেষে জামায়াতকে দিয়েও চাল খাটিয়েছে ওই সরকার। বিএনপি এসব জানতো বলে নির্বাচনে যেতে গড়িমসি করেছে। তবে নির্বাচনে না গেলে জামায়াত নির্বাচন করতো। তারা বিরোধী দল হতো।

জামায়াত জণগনের সেন্টিমেন্টের উদাহরণ টেনেছে। এই ভয়েই খালেদা জিয়া শেষ সময়ে নির্বাচন করার সম্মতি দেন। জামায়াত এমনভাবেই বিএনপিকে গিলেছে -তা এর চেয়ে বড় প্রমাণ আর কি থাকতে পারে? নির্বাচনের পর খালেদা জিয়া এ নিয়ে জামায়াত নেতাদের ভৎসনাও করেছেন কিন্তু ছাড়তে পারেননি। হায় রাজনীতি! এবার আসি জলিলের ব্যাপার নিয়ে জলিল কেন এসব কথা বলতে সাহস পাচ্ছেন। তার লন্ডনে গিয়ে এ বোমা ফাটানোর আগে আমি দেশে বসে তার সাক্ষাতকার নিয়েছি।

এটি আসছে বুধবারে সাপ্তাহিক বুধবারে সাক্ষাতকারটি ছাপা হবে। তার সাক্ষাতকার নেয়ার সময়ই দেখেছি তিনি আধঘন্টার মধ্যে দুই জন মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। আমার রেকর্ডার অন ছিল। তাই তিনি বেশি কথা বলেননি। একটু কথা বলে পরে কথা বলবেন বলে ফোন রেখে দিয়েছেন।

এর মধ্যেই কয়েকজন সংস্কারপন্থী আওয়ামী লীগ নেতাকেও সেখানে দেখা গেল। তারা জলিলের সঙ্গে দেখা করতে গেছেন। এর আগে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সরকারের উপদেষ্টাদের নিয়ে টান দিয়েছেন। এসব একই সূত্রে গাথাঁ। এবার বুঝতে পারছেন জলিলের এ ধরনের বক্তব্য দেয়ার ক্ষমতার উৎস কোথায়? তিনি অনেকদিন ধরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

তিনি ২০০০ সালে সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। তার মেয়াদ ছিল ২০০৫ সাল পর্যন্ত। কিন্তু ২০০৯ পর্যন্ত থেকেছেন। তিনি দলের অনেক গোপন কথা জানতেন। অফ দ্যা রেকর্ড তিনি এসবের কিছু কথা বলেছেন।

বলেছেন দলের নেত্রী এ কারণেই ব্যবহস্থা নেয়ার সুযোগ পাবেননা। নিতে গেলে সামনে আরও চমক থাকবে। তবে এ কথা প্রকাশের তিনি কোন অনুমতি দেননি। বলেছেন সময় আসবে। তখন প্রকাশ করতে পারবেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.