আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নোয়া সাহেবের এলিয়েন জয়...

কখনো চাই নাই দূরে থাকি...তবু দূরগুলো বারে বারে আসে...

১. মহাপ্লাবনের জল যখন শুকায়া চারদিকে আবার সুজলা সুফলা ভূমিরূপ দেখা দিলো তখন নোয়ার অতিকায় নৌকা থেইকা আশ্রিত প্রাণীকূল ছড়ায়া ছিটায়া গেলো চারদিকে। সকলেই আবার নিজ নিজ বাসভূমের লেইগা নিজেগো সংগ্রাম শুরু করলো। নোয়া সাহেব তার নৌকারে সাগরের ঘাটে ভিড়াইয়া। তার ধারেই গইড়া তুললেন তার নিজের কাঠের বাড়ি। শুরুতে এতদ অঞ্চলে বহুত বাঁশ সুলভ হইলেও তিনি কাঠের বাড়িতেই ক্যানো জানি আরাম পান।

যদিও মনোবিদ যূগল তারে দূর থেইকাই পরখ কইরা বুঝছিলেন তিনি ভয় পান বাঁশেরে। নোয়া সাহেবের আদেশে তার ভক্তকূল শিরোমনি বান্দর যূগল তাই নোয়া সাহেবের বাটি সংলগ্ন প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকার সকল বাঁশ ঝাড় কাইটা বিনাশ কইরা দ্যায়। ভক্ত গর্দভেরা আদতে অলস হইলেও তারা হাজার বছর যাবত এলাকায় ঘোরাঘুরি কইরা বাঁশের বীজ শুদ্ধা ভক্ষণ কইরা ফেলে। নোয়া সাহেব যা চান তা করনের চেষ্টায় রত থাকে তার নির্বোধ ভক্তকূল...তারা প্রশ্নহীন ভালোবাসেন নোয়ারে। আর তার বরাতেই নোয়া সাহেব এখন প্রতিদিন তার সমুদ্র তীরবর্তী কাঠের দোতলায় বইসা খেজুরের রসে বানাইনা চা খান আর ঢেউ গুনেন।

যদিও মহাপ্লাবনের পর ঈশ্বরের কাছে তার কদর কইমা গেছে। আজকাল ঈশ্বর এক্কেরেই তার লগে চা পানে আসেন না বা ঈশ্বরের বাসভবনে রেসিডেন্ট হওনের পার্মিশনটাও যে গেছেগা সেইটাও নোয়া সাহেব টের পান। কিন্তু তিনি এই বিষয় নিয়া তিনি আর খুব বেশি আলোচনায় আগ্রহী না। অনেক গোপন সত্য মানুষের কাছে প্রকাশিত হইলে তার কদর এই দুনিয়াতেও কইমা যাইবো এই ভয়ে নোয়া সাহেব তার পুরানা ভংটা ভালো মতোই ধরেন। তার লম্বা চুলে মাঝে বিনুনী করেন।

বানর কূল বলে ওয়াহ! ওয়াহ!। তার চুলে তিনি তেহারী রান্ধনের পর বাইচা যাওয়া সয়াবিন তেল মাখেন গর্দভকূল কয় মারহাবা! মারহাবা! কিন্তু নোয়া সাহেবের চিত্তে কীসের যেনো ভয়! একেলা হইলেই তার শির কার কাছে নত হইয়া যায় ৪৫ ডিগ্রী কোনে!? ২. এই দিকে পৃথিবীতে নাইমা আসছে নতুন সংকট। একদল দুর্মূখা এলিয়েন, যারা হঠাৎ ভূখন্ডের মানব সমাজে ছদ্মবেশে ছড়াইয়া পড়ছে। তারা মানুষেরই ছদ্মবেশ ধারণ কইরা থাকে বেশীর ভাগ সময়। যাদুময় এই সব এলিয়েন মানুষে মানুষে হানাহানি আর কোন্দল লাগানের কাজে ব্রত হইছে পুরা।

স্কটল্যান্ড নিবাসী একদল বুদ্ধিমান মানুষ যদিও ইতোমধ্যে ছদ্মবেশী হইলেও এলিয়েন শনাক্তকরণের পদ্ধতি বাইর কইরা ফেলছে। কিন্তু প্রচার স্বল্পতায় এখনো সকলে এই তথ্য জানতে পারে নাই। যারা জানতে পারছে তারাও কিছু করতে পারতেছে না। এলিয়েনরা যখন বুঝতেছে তারা ধরা পইড়া গেছে তারা তাগো কিম্ভুত পিস্তল সদৃশ অস্ত্র বাইর কইরা নিশ্চিহ্ন কইরা দিতেছে শত্রুরে। নিশ্চিহ্ন হইয়া যাওয়া এরম শত শত হাজার হাজার মানুষের পরিবারের আর্তনাদে আজ পুথিবীর আকাশ বাতাস প্রকম্পিত।

ঈশ্বরও দুনিয়ায় তার সৃষ্টির এই আজব খেলা দেখেন দূর থেইকা। মানুষের নিশ্চিহ্ন হইয়া যাওয়া দেখেন, আর মনে মনে বিড় বিড় কইরা বলেন সারভাইবাল অফ দ্য ফিটেস্ট! কিন্তু মনুষ্য জাতিরে তো আসলেই সারভাইভ করতে হইবো। এখন উপায়! ৩. এলিয়েন সংকট নিয়া সারা পৃথিবীর তাবৎ শাসককূল ঘুমহীন রাত যাপন করতেছে। তাদের স্ত্রীরা অসুখী হইয়া পড়ছে স্বামীর বিমর্ষ চেহারা দেখতে দেখতে। এমতাবস্থায় পৃথিবীর উত্তর প্রান্তের এক শাসক শীর্ষবৈঠকের ডাক দ্যান।

সকল শাসক আর তাগো সামরিক মন্ত্রণাদাতারা উপস্থিত হন সেই বৈঠকে। তিন দিন তিন রাত্তির যায় তবু কোন কূল কিনারা পাওন যায় না এই সমস্যার সমাধানে। কেবল টেনশনে উইড়া যায় হাজার হাজার পাতার বিড়ি আর গেলাসে গেলাসে চোলাই মদ...কামের কাম হয় না ঘন্টাও। এমনই এক সময় সেইখানে উইড়া আসে এক ব্যাঙ্গমা আর ব্যাঙ্গমী যারা ছিলো ডোডো পাখি যূগলের শত্রু বিশেষ। তারা শীর্ষ শাসক নেতাগো মলিন চেহারার উপরেই পিচিক কইরা খানিকটা গু ফেইলা দিয়া টেবিলের উপরেই গিয়া বসে আর বলে, আপনেরা হুদাই এতো সময় নষ্ট করতেছেন এইসব বৈঠক ফেঠকে।

এর চেয়ে আমাগো নোয়া সাহেবের নৌকার আড্ডা অনেক উপাদেয়। সেইখানে কতো মজা হয়! আপনেরা কি ভুইলা গেছেন আমাগো পরিত্রাতার কথা! যিনি একবার আমাগো প্লাবন থেইকা বাঁচাইছেন এইবারো তিনিই বাঁচাইতে পারবেন... এই বইলা লগে লগে তারা ফুরুৎ কইরা উড়াল দ্যায়। শীর্ষ শাসক নেতাগো কিছু কওনের সুযোগ না দিয়া। সাথে সাথেই কিছু শাসকের মুখে হাসি ফুটে। কিন্তু কিছু বুদ্ধিমান শাসক যারা নোয়া সাহেবের নৌকায় ছিলেন, তারা একটু সংশয়ি দৃষ্টি মেলেন।

৩. তবুও পৃথিবীরে বাঁচানের নিমিত্তে তারা শেষ পর্যন্ত এককাট্টা হ'ন বা এক সিদ্ধান্তে উপনীত হ'ন যে নোয়া সাহেবরেই দায়িত্ব দেয়া হইবো এলিয়েনগো লগে সমঝোতা তৈরীর উদ্যোগ নিতে। মানবজাতি আর পারতেছেনা...অচীরেই তারা নিশ্চিহ্ন হইয়া যাইবো। এলিয়েন সাম্রাজ্যই কায়েম হইবো পৃথিবীর মাটিতে। প্রতিনিধি দল যায় নোয়ার বাঁশহীন এলাকায়। তাগো দেইখাতো ভক্ত বানর-গর্দভ-খচ্চরকূল আনন্দিত হইয়া লাফাইতে থাকে।

নোয়া সাহেবও বহুকাল পর পার্ট গাওনের সুযোগ পাইয়া চুলে তেল দিয়া বিনুনী বাইন্ধা প্রতিনিধি দলের সামনে আসেন। তাগো প্রস্তাব শুইনা তিনি অবশ্য দিগ্বিদিক শূন্য হইয়া যান। কারন এই সমস্যা তখনো তার এই সাম্রাজ্যে আসে নাই। কেবল মানব সমাজেই এর বিস্তৃতি। তার সাম্রাজ্যে তিনি একাই মানব প্রজাতির আর সব... প্রতিনিধি দল অবশ্য তারে আশ্বস্ত করেন, যে তারে এক্কেরে এলিয়েনগো বাহন পর্যন্ত পৌছাইয়া দেওনের দায়িত্ব স্কটল্যান্ডের বুদ্ধিমান মানুষগো।

পেন্টাগন নামক এলাকার যুদ্ধবাজ ক্ষত্রীয়রা তারে পেছন থেইকা কাভার করবো। সব শুইনা নোয়া সাহেবের একটু ভয় ভয় লাগলেও তিনি বহুদিন পর পার্ট গাওনের সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না। তার বুক আবারো আটলান্টিকের ঢেউয়ের মতোন ফুইলা উঠে। আবারো তিনি ক্ষমতার আস্বাদ পান। তিনি রাজী হইয়া যান ক্ষমতার আহ্বানে।

তিনি বুঝতে পারেন তার ফ্যাসিবাদী আচরন যদি আবারো মানব সমাজে ছড়াইতে হয় তাইলে এই সেই সুযোগ! ৪. নির্দিষ্ট দিনে নোয়া সাহেব তার নৌকায় চাক্কা লাগাইয়া আগাইয়া যান এলিয়েনগো বাহনের দিকে। এই চক্রাকৃতি যানেই নাকি এলিয়েনগো বাস। এই খানেই তারা থাকে খায় দায় ঘুমায়। নোয়া সাহেব গিয়া সেই যানের নীচে দাঁড়ান। আর সবাইরে অবাক কইরা দিয়া একটা সিঁড়ি নাইমা আসে সেই যান থেইকা।

নোয়া সাহেব একবার পেছনে তাকাইয়া সেই সিঁড়ি বাইয়া উঠতে থাকেন। তিনি এক অদ্ভুত চতুর্মাত্রিক রুপালী স্থানে প্রবেশ মাত্র সিঁড়ি আবারো উইঠা আসে। নোয়া সাহেবরে বাঁচানের আর কেউ থাকে না। তিনি দেখেন একদল কিম্ভুতাকৃতির প্রাণী তার সামনে দাঁড়ানো। তার বিমূঢ় অবস্থার মধ্যেই তারা ত্বড়িৎ কাজ সাড়ে।

আেকটা হেলমেট মতোন কি জানি তারে পরাইয়া দ্যায়। আর তার পর থেইকাই তিনি এই প্রাণীকূলের ভাষা শুনতে আর বুঝতে শুরু করেন। আরে এরাতো নিপাট বাংলায় কথা কয়! প্রাণীরা তারে কয় তারা এই পৃথিবীতে আসলে ধ্বংসের নিমিত্তে আসে নাই। এই পৃথিবীতে একটা কার্য্যকরী প্রজাতির গাছ তারা খুঁইজা পাইছে যেইটচা তাগো গ্রহে এক্কেরেই নাই। কিন্তু কার্য্যকরী প্রজাতির গাছের চাষ তারা করতে চায়।

মানুষের মুখের ভাষা থেইকা এর প্রায় সকল ফাংশনালিটির তালিকা তারা উদ্ধার করছে। প্রায় সবগুলি তারা পরখ কইরা দেখছে...এবং ফলাফল মার্ভেলাস! কিন্তু একটা প্রয়োগের উল্লেখ তারা প্রায়শঃই পাইছে, কিন্তু সেই প্রয়োগ করতে গেলেই মানব প্রজাতি উদ্ভট আচরন শুরু করে এমন কি তারা পাল্টা আক্রমণও কইরা বসে। এই কার্যের পরীক্ষা না কইরা তারা গ্রহে ফিরা যাইতে পারতেছে না। তাগো লগে কেউ কথা কইতেও আসতে চায় না। তাগো আসল রূপ দেইখা মানুষ বহুত ভয় খায়।

নোয়া সাহেব ভয় না খাওনে তারা অতিশয় খুশি। নোয়া সাহেব আসলে দীর্ঘদিন বিবিধ প্রাণীকূলের মধ্যেই থাকনে তার এই বাছবিচার বোধটা হারাইয়া গেছে। সেই কারনে এই কিম্ভুত প্রাণীগুলিরেও তার স্বাভাবিকই লাগতেছিলো। সে কয় আনো তোমাগো সেই উদ্ভিদ। পরখ করো তার কার্যাদি।

এই মানবজাতিরে বাঁচাইতে আমি সবসময়েই অগ্রণী সৈনিক। নিজের প্রাণ দিতেও প্রস্তুত। এইরম বহুত রাজনৈতিক বক্তব্যের পর সে থামে। ইতোমধ্যে স্বয়ংক্রিয় মেশিনে প‌্যাক করা অবস্থায় সেই উদ্ভিদ চইলা আসছে। প‌্যাক গুলি খোলা হইতেছে।

নোয়া সাহেব একবার আড়চোখে সেই উদ্ভিদ দেখনের চেষ্টা করেন। কিন্তু এলিয়েনরা ঘিরা থাকাতে দেখতে পারেন না। একসময় এলিয়েনরা সইরা যায়। নোয়া সাহেব দেখেন তার সামনে একঝাড় বাঁশ। নোয়া সাহেব মূর্ছা যান।

তৎক্ষণাত এলিয়েনরা তার পশ্চাদ্দার দিয়া সেই বাঁশ প্রবেশ করায়। নোয়া সাহেব মূর্ছার মধ্যেই কিরম আহা উহু কইরা উঠেন। এলিয়েনরা তার অনুভূতির মাত্রা লিপিবদ্ধ করে একটা যন্ত্রে। তাগো প্রধান বইলা ওঠে ওকে স্টপ! ৫. পরদিন দেখা যায় এলিয়েনরা পৃথিবী ত্যাগ করছে। স্কটল্যান্ডের বুদ্ধিমানেরা আর পেন্টাগনের যুদ্ধবাজরা দৌড়াইয়া আসে সেই স্থলে।

নোয়া সাহেব তখনো অচেতন। কিছুকাল পর নোয়া সাহেব তার ঘর-বাড়ি সব ত্যাগ কইরা একটা বদ্ধ সাম্রাজ্য তৈরী করেন তার শিষ্য গণরে নিয়া। তারা প্রায় মধ্য সমুদ্রেই থাকেন। যেই খানে বাঁশ আসনের কোন সম্ভাবনা নাই। নতুন কেউ যদি সেই নৌকায় বেড়াইতে যাইতে চায় তাইলেও অবতীর্ন হইতে হয় বহুত পরীক্ষায়...কওয়াতো যায় না...কার পকেটে থাকে বাঁশের বীজ...


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।