আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঈদ আসে শুধু ক্যালেন্ডারের পাতায়, মনে আর আসে না

ক খ গ ঘ...

সকালে পেপারটা খুললাম, ঝপ করে চটি একটা ঈদ সংখা পেপার থেকে বেরিয়ে পরল। কোন ভ্রুক্ষেপ নাই । যেমন ভাবে অন্যদিন ঈদসংখাটা পড়ে আছে ড্রইং রুমে। হাতটা দিয়ে ধরে পাতা ওল্টানোও হয়ে ওঠে নি। বোনটা লাফাঝাপা করে ঈদের ড্রেসটা কিনে নিয়েছে সেই কবে।

-আমার কিনতেও মন চায় না, আবার কেউ যদি মার্কেট যেতে বলে মেজাজ টা যায় বিগড়ে। আসলে ঢাকায় থাকা মফিজ আমি। ঈদে বেশিরভাগ সময়েই বাড়ি যাওয়া হয়নি। আমার বন্ধু সার্কেল রয়েছে কুস্টিয়ায় আর চিটাগাং এ। দুটোর কোনটাতেই যাওয়া হবে না।

মিস করব তাই -বন্ধুদের সাথে করে পুরো শহর চক্কর দেয়া, নদীতে গিয়ে নৌকায় বসে আড্ডা দেয়া, সবচে বড় মোড়ে দাড়িয়ে বর্তমান শহরের মেয়েদের দেখা- (কিন্তু কেন যেন আমার চোখে বিবাহিত মহিলারাই ধরা দেয় বেশি-মনে হয় মোটা বেশি বলে। চিকনরা চোখ এড়িয়ে ভেগে যায়) আরও ছোট বেলায় আমরা সব ঈদ করতাম বড় চাচার বাসায়। দাদা স্ট্রোক করার পর দাদাবড়ি তে আর কেউ থাকে না। তাই কুস্টিয়া যাওয়া মানে বড় চাচার বাসায় যাওয়া। ওখানে ঈদের সময় আমার গ্রুপ ছিল মেজো চাচাতো বোন (২বছরের ছোট) আর ভাই(আরও ছোট) এই তিনজন নিয়ে।

ছোটবেলায় ঈদ ভাল লাগার একটা বড় কারন ছিল ঈদের দিন , আগের দিন, পরের আড়াই দিন পড়া লাগত না। মেজো চাচারা ৩ দিন থাকত , আমার বেশি মজাও ৩দিন থাকত। তারপর আবার গ্রুপহীন একা। আমরা ঈদের আগের দিন কাগজে নকশা আকতাম , সেটা ঢুকিয়ে দিটাম পরদিন ঈদের জামতের শেষে টাকা নিতে আসা কাপড়ে। বড়রা ঐখানে টাকা দেবার জন্য কড়কড়া টাকা দিত।

আমরা ঐ টাকার সাথে ভাজ করে ঐ নকশা করে লেখা ঈদ মোবারক লেখা ঢুকিয়ে দিতাম। নামায শেষে শহরে ঘুরতে গেলে রিকশায় যাবার সময় ঐরকম নকশাদার কাগজ শহরের রাস্তায় ফেলতে ফেলতে যেতাম। যেন শহরবাসী কে ঐটা দিয়ে আমরা আনন্দিত করে ফেলব। কেন এমন করতাম তা খেয়াল নেই এখন একটুও। ঈদে কখনই জামা কাপড়ের লোভ করি নাই,এখনও সেই লোভ নাই।

আমার জামা কাপড়ের মত তুচ্ছ আর কমদামী (অবশ্য এখন দোকানে জামার দাম দেখলে এই কথা বলার উপায় নাই, কিন্তু জিনিষটা আসলেই একটি ভ্যালুলেস ) জিনষের লোভ থেকে বেশি লোভ ছিল ইলেক্ট্রনিক্স জিনিষে আর বই এর উপর। রিকশাভাড়ার টাকা জমাতাম হেটে এসে। সেই টাকা থেকে তিন গোয়েন্দা কিনে আর কোন টাকাই অবশিস্ট থাকত না। একবার টাকা জমিয়ে সাথে বৃত্তির টাকা দিয়ে কোডাকের ৯০০টাকার ক্যামেরা কিনেছিলাম। ওটা দিয়েই মস্ত এক ফটোগ্রাফার হবার স্বপ্ন দেখতাম।

শেষ পর্যন্ত জীবনে কোন শখের শখেই কিছু হতে পারলাম না। এই শখের শখে নিজেকে সাজাতে না পারার অক্ষমতাতেই আর ঈদ কোন আনন্দ নিয়ে আসে না। শুধু ক্যালেন্ডারের লাল কালিতে দেখেই শেষ হয়ে যায়। ঈদ মোবারক। _____________________________________________ শিবলী ২০০৯২০০৯ (বাহ ভাল তো২০.০৯.২০০৯)


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।