আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুই বিচারকের অবৈধ অপসারন: দায সরকারেরর তরফে প্রধানমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রনালযের, নীলকন্ঠ সচিবের নয

অতএব- লক্ষন যা, তাতে দুঃখ আর ক্ষোভই আমার কপালের লেখা।

দুই বিচারকের অবৈধ অপসারণ আদেশ প্রত্যাহার করে রাষ্ট্রপতি প্রজ্ঞাপন জারি করার পরেও যে সরকার, অধঃস্তন আদালতের বিচারক ও সুপ্রিমকোর্ট দু’তরফেই প্রশ্নগুলো শেষ হয়ে যায়নি সেটা স্পষ্ট ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আইনসভাও নিজেকে প্রশ্নবিদ্ধ করলো। যদিও অধঃস্তন আদালতের বিচারকরা নিজেদের দাবি-দাওয়া নিয়ে প্রধান বিচারপতির বদলে আইনমন্ত্রীর কাছে গিয়ে নিজেদের স্বাধীনতাবোধকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন, একইভাবে তারা অসাংবিধানিক ও অবৈধ আদেশের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে না গিয়ে আপস করে নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতার ওপর সুবিচার করেননি। (যদি প্রধানমন্ত্রীর দাওযাতে যমুনায যাওযার আগেও দুই বিচারকের একজন যমুনরাই পেছেনে অন্য আরেক বিচারকের সরকারি বাসভবনে বসে আমাকে বলেছিলেন যে তারা আদালতে যাবেন।

) কিন্তু প্রধানমন্ত্রির সাথে দেখা হওযার পর তারা মত পাল্টালেন। সর্বোচ্চ আদালত হিসেবে সুপ্রিমকোর্ট নিজেও স্বেচ্ছাপ্রণোদিত প্রতিকারে উদ্যোগী হতে পারতো। কারণ, সর্বোচ্চ আদালতকে পাশ কাটিয়েই সরকার সিদ্ধান্তটি নিয়েছিল। তারাও সেটা করেনি। সুতরাং বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর সরকারের একটি অবৈধ হস্তক্ষেপ আইনগত প্রতিকারবিহীন রয়ে গেল।

অবশ্য আইনসভার প্রতিষ্ঠান হিসেবে সংসদীয় কমিটি ঠিক কাজটি করতে পারতো, যেটি তারা করতে গিয়েও করেনি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিবের উদ্যোগে রাষ্ট্রপতি বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার জন্য সংবিধান লঙ্ঘনের যে দুঃখজনক নজির স্থাপন করলেন সে বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের দায়-দায়িত্বের বিষয়ে জবাবদিহি করার জন্য সংশ্লিষ্ট তিনজনকে ডেকে পাঠানো হলো। মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসেবে যাকে জবাবদিহিতার মুখোমুখি করা সবচেয়ে স্বাভাবিক উদ্যোগ ছিল, সেই দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনমন্ত্রীকে তলবীদের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হলো। মনে রাখা জরুরি যে- আইনমন্ত্রনালেযর আনুষ্ঠানিক সম্মতিসুচক সিদ্ধান্ত ছাড়া প্রধানমন্ত্রী ওই মন্ত্রনালযের এমন কোনো আদেশই প্রজ্ঞাপন হিসেবে জারি করার জন্য রাষ্ট্রপতিকে 'পরামর্শ' (পড়ুন- নির্দেশ) দিতে পারেন না। এবং মন্ত্রনালয়ের প্রধান হলেন মন্ত্রী, সচিব নন।

আইনমন্ত্রীর সম্মতিতেই সবকিছু হয়েছিল। প্রকাশ্যেই মন্ত্রী ওই সিদ্ধান্তের সাফাই করে কথাবার্তা বলেছিলেন প্রচুর। আইনমন্ত্রী দি পাবলিক সার্ভেন্ট রিটায়ারমেন্ট অ্যাক্ট ১৯৭৪ কিংবা বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (সার্ভিস গঠন, সার্ভিস পদে নিয়োগ এবং সাময়িক বরখাস্তকরণ, বরখাস্তকরণ ও অপসারণ) বিধিমালা ২০০৭-এর প্রসঙ্গে কিছু না বলে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ আমাদের সামনে প্রজ্ঞাপনের উল্টো ব্যাখ্যা দিলেন। তিনি বললেন, এটা কোনো শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা নয়। তিনি বললেনÑ ‘সংবিধান সর্বোচ্চ আইন।

রাষ্ট্রপতি সংবিধানের অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এ ব্যবস্থা নিয়েছেন। সংবিধান অনুযায়ী কোনো ব্যবস্থা নেয়া হলে অন্য আইন বা বিধিবিধানে যা কিছুই থাক না কেন, তা প্রযোজ্য হয় না। কারণ সংবিধান সবকিছুর ওপরে। ’ সংবিধানকে সর্বোচ্চ, সবকিছুর ওপরে জায়গা দিতে এতো তড়িঘড়ি আগ্রহ যে আইনমন্ত্রীর তিনি সম্ভবত ভুলে গিয়েছিলেন যে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে এরকম কোনো সুযোগ নেই যাতে রাষ্ট্রপতি চাইলেও কোনো বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার ব্যাপারে একাই কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। অধঃস্তন আদালতসমূহের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বিষয়ে রাষ্ট্রপতি যাই করুন না কেন তা সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে করতে হবে।

খুব সম্ভবত আইনমন্ত্রী ১৯৭৫-এ একদলীয় সরকার ব্যবস্থা চালুর সময়ে চতুর্থবারের মতো সংশোধিত সংবিধানের কথা মাথায় রেখে কথা বলছিলেন। বর্তমান সংবিধানে এরকম কোনো সুযোগ নেই। অথচ প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং এমনতরো সিদ্ধান্ত নিতে আইন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে প্রজ্ঞাপনে সই করিয়েছিলেন। ‘সরকারি সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সচিবালয়ে উপস্থিত ছিলেন। তিনি ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন।

(দৈনিক প্রথম আলো ৩১ জুলাই ২০০৯)। ’ অর্থাত প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিলে পরে বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিকভাবে দুই পাযে খাড়া বর্তমান আইনসচিব অপসারন করার কাগজপত্র তৈযার করে প্রধানমন্ত্রির কাছে পাঠিযেছিলেন। এবং পুরো প্রক্রিযার পেছন প্রত্যক্ষভাবে প্রধানমন্ত্রীর এক উপদেষ্টা ও সংস্থাপন সচিব ছিলেন। কিন্তু এর কোনোটিই মন্ত্রনালযের দাযিত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর সম্মতি ছাড়া চুড়ান্ত হতে পারে না। সুতরাং এইখানে যাদের তলব করে সংসদীয কমিটিতে শুনানি করা দরকার ছিল তাদের একজন হতে পারতেন আইন সচিব, কিন্তু হলেন একমাত্রজন ।

প্রধানমন্ত্রি ও আইনমন্ত্রীকে সংসদীয় কমিটি তো ডাকলোই না। বরং আইন সচিবের কাছ থেকে সব দায়ের স্বীকৃতি নিয়ে প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও সংস্থাপন সচিবকেও শুনানি থেকে রেহাই দেয়া হলো। বেচারা সচিব সব বিষ একাই পান করে নীলকন্ঠ হযে রইলেন। এবং সরকার প্রধানের আরো একটি স্বেচ্ছাচারিতা প্রতিকারবিহীন হযে রইলো।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।