আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হরতালের ন্যায় অন্যায়

এডিট করুন

একদা রঙ্গদেশে রাজত্ব করিতেন সুন্দরী বেগম নামক এক মহীয়সি নারী। তিনি পৈত্রিক সূত্রে এই রঙ্গদেশের রাজত্ব পাইয়াছিলেন বলিয়া তিনি মনে করিতেন, যদিও তাহার পিতা কোনকালেই এইরুপ কোন ঘোষণা দিয়া যান নাই যে এই রঙ্গদেশ তাহার পারিবারিক সম্পত্তি। তা সুন্দরী বেগম বহুকাল সিংহাসন হইতে বঞ্চিত ছিলেন। কারণ হিসাবে জানা যায়, এক সেনাপতি, পাখী খানের কিছু খাদেম ও আন্ডা বাচ্চা, সেনাপত্নী এইসকল লোকদিগে সিংহাসন লইয়া ব্যাতিব্যাস্ত ছিলেন। নিন্দুকেরা বলিয়া থাকে যে রঙ্গদেশের সিংহাসন নাকি উত্তর শক্তি নামক এক ব্যাক্তি নিয়ন্ত্রণ করিয়া থাকে।

তাহার শক্তি এমনই যে বিশাল সাগর, মহাদেশ পার হইয়াও তাহার তেজ এতটুকু কমে না। রঙ্গদেশের সিংহাসনে যেই বসুক না কেন সকলকে এই উত্তর শক্তির পদধূলি লইয়া বসিতে হইবে বইকি। আমি নিন্দুকের কথায় তেমন কান দিই না। ছোটলোকে কতই না কি বলিয়া থাকে। এইরূপ প্রথা পূর্বে প্রচলিত ছিল বলিয়া জানা যায়।

বাংলার সিংহাসনে নবাবেরা আরোহণ করিবার পূর্বে দিল্লীর ঈশ্বরকে নজরানা দিয়া সন্তুষ্ট করিত। কিন্তু রঙ্গদেশ তো কাহারো নিকট তাহার সার্বভৌমত্বের জন্য দায়ী নহে তবে কেন তাহাকে উত্তর শক্তিকে সন্তুষ্ট করিতে হইবে। নিন্দুকেরা বলিয়া থাকে, "ওহে বাপু জমানা বদলাইয়াছে। সময় এখন ঘোর কলিকাল, মেষশাবক চাটিয়া থাকে বাঘ্রের গাল, এখন দিল্লীশ্বরে নজরানা নেয় না, উলটা দিয়া থাকে। বিনিময়ে তাহাকে তোমার চারণভূমির তলদেশের অধিকার দিতে হইবে।

" আমি বলি,"তা নিকনা তলদেশের অধিকার, তাতে আমার কি? আমি আমার উপরদেশে ধান চাষ করিব আর গবাদী পশু চরাইব। " নিন্দুক বলে,"এই জন্যই তো আমরা আজও গবাদী পশু রয়ে গেলাম, আর গোয়ালঘরে বসিয়া ধানের খেড় চর্বন করিতে লাগিলাম। উত্তর শক্তি আর হইতে পারিলাম না। বড়জোর তাহার পা চাটিতে পারিলাম। " আমি বলি,"কথা বেশী ঘোলা করিও না।

আমি গাধা নহি। " ছোটলোকে বলে কিনা,"তোমাকে দেখিলে গাধাও লজ্জা পাইবে। ভাবিবে, এত ভার বহন করিবার শক্তি পায় কোথা থেকে এই গবাদী পশুটা?" আমি বুঝিলাম এই ছোটলোকের সহিত আর কিয়ৎক্ষণ ব্যয় করিলে আমি শিষ্টতার সীমা ছাড়াইয়া যাইব। আমি ভদ্রলোকের ছেলে, মানে মানে সরিয়া যাই। তো একদিন শুনি সুন্দরী বেগম নাকি দিল্লীশ্বর না উত্তর শক্তি কার নিকট হইতে নজরানা গ্রহণ করিয়া সিংহাসনে উপবেশন করিয়াছিলেন।

বিনিময়ে তিনি নাকি আমাদিগের চারণভূমির তলদেশের অধিকার উত্তর শক্তিকে উপহার দিয়াছেন। তা বেশ, বেশ। আমরা রঙ্গদেশের বাসিন্দারা নিরতিশয় ভদ্রলোক বটে। কেউ একটা উপহার প্রদান করিলে তাহাকে যে বিনিময়ে কিছু দেওয়া উচিৎ এই ভদ্রতাজ্ঞানটুকু আমাদের আতিশয় টনটনে। একবার মীর জাফর সাহেব তাহার আসামান্য ভদ্রতার নিদর্শনস্বরুপ দ্বীপ শক্তিকে পুরো রঙ্গদেশের চারণভূমিই উপহার দিয়া বসিয়াছিলেন।

তা সুন্দরী বেগম তাহার ন্যায় ভদ্র না হইলেও একেবারে অভদ্র নহে। কিন্তু বাধ সাধাইল নিন্দুকের দল। তাহারা কহিতে লাগিল, রঙ্গদেশের চারণভূমির উপরদেশ, তলদেশ, মোদ্দাকথা সকল দেশটাই এই রঙ্গদেশের অধিবাসীদের। কাহাকেও এইখানে অনুপ্রবেশ করিতে দেওয়া হইবে না। কিন্তু সুন্দরী বেগমের আত্মায় ঘা পড়িল।

এ যে তাহার ভদ্রতার প্রকাশে কলুষিত ছায়া। তাই তিনি এই ছায়ার আড়ালের কায়াদিগকে বোধড়ক পিটাইয়া তক্তার ন্যায় বা জলের ন্যায় সোজা করিতে লাগিলেন। কিন্তু ইহারা সকলেই দেশাত্মবোধ নামক পাকনা কঞ্চির অধিকারী। প্রায়ই ইহাদিগের কঞ্চির বাড়ী গিয়া সিংহাসন এবং এর আশেপাশের এলাকায় গিয়া পড়ে। ইহা সহ্য করা অতিশয় দুঃসহ।

আমি ভদ্রলোক মানুষ। এই নামীদামী ব্যাক্তিদের কষ্ট সহ্য করা আমার পক্ষে সম্ভব নহে। বিশেষত ইহার কঞ্চির বাড়ি সিংহাসনে পড়িলেও তাহার বাতাস আমার এবং কিছু গরীব লোকের গায়ে গিয়া পড়িবে। আমাদের তলদেশ গেলে যাউক দুঃখ নাই, তবু এই কঞ্চির বাড়ি সহ্য করা সম্ভব নহে। উহারা নাকি কিছুকাল পরেই একটি বিরাট কঞ্চির বাড়ি নিয়া হাজির হইতেছে।

দুঃখে আমার প্রাণ ওষ্ঠাগত। আমি রঙ্গদেশের বাসিন্দা। আজকের পাঁচটাকা আমার নিকট আগামীকালকের একহাজার টাকা হইতে উত্তম। বহু সাধনা করিয়া আমরা খড়ের সুশীতল গৃহকোন পাইয়াছি। আমাদিগের শক্তিশালী পাঁচতলা দালান দরকার নাই।

ঝড়ে আমাদের গৃহ উল্টাইলে উল্টাক। আবার মাসব্যাপি বেগাব খাটিয়া কুটির তৈরী করিব। নইলে আমি গবাদি পশু কিসের। না না এ অন্যায়। আমি আজকের পাঁচটাকা চাই।

আমার আগামীকল্যের একহাজার টাকা উত্তর শক্তি নিলে নিক, আমার তাতে মাথা ব্যাথা নাই। তোমরা আমার অপকার করিও না, অন্যায় করিও না। আমার এক হাজার টাকা বাচানোর জন্য তোমরা এত সংগ্রাম করিও না। এতে যে আমার আজকে পাঁচটাকা নষ্ট হইয়া যাইতেছে। তুমি কি জাননা, আমি ফ্রী পাইলে আলকাতরাও খাই ।

তোমার কঞ্চির বাড়ি বন্ধ কর হে নিন্দুক। সকলে একস্বরে গেয়ে ওঠ, "ও হাসিনা জুলফেওয়ালী জানে যাহা,....................

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.