আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লিচু খেয়ে রামসাগর

দিনাজপুরের লিচু
এ জেলার সব জায়গাতেই আছে লিচু বাগান। সাধারণত জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝি থেকে লিচু পাকা শুরু হয়। সবার আগে পাকে দেশি জাতের লিচু। এরপরে একে একে পাকতে থাকে বোম্বাই, বেদানা, মাদ্রাজি, চায়না থ্রি ইত্যাদি।
দিনাজপুর সদরের মাশিমপুর লিচুর জন্য সবচেয়ে বিখ্যাত।

এখানকার বাগানগুলো অপেক্ষাকৃত পুরান। এছাড়া সদরের দক্ষিণ কোতয়ালী ও আউলিয়াপুরেও বর্তমানে প্রচুর লিচুর চাষ হচ্ছে। এ জেলার বিরল, বোচাগঞ্জ, চিরিরবন্দর, পার্বতীপুর, ফুলবাড়ি, বিরামপুর, ঘোড়াঘাট প্রভৃতি উপজেলায় আছে অনেক লিচু বাগান। দিনাজপুরে প্রায় দুই হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে লিচু চাষ হয় প্রতি বছর।
এখানকার যে কোনো বাগান ঘুরে দেখা যায়।

ইচ্ছে করলে অনুমতি নিয়ে কোনো বাগানে তাবুও ফেলতে পারেন। সব বাগানেই দিনরাত লোকজন থাকে বলে এখানে থাকাটা নিরাপদ। চাইলে যে কোনো বাগান থেকেই লিচু কেনা যায়। দিনাজপুরের বাগানে প্রতি শত লিচু জাতভেদে দাম ২০০ থেকে ৮০০ টাকা। দেশি ও মাদ্রাজি লিচুর দাম সবচেয়ে কম।

আকারে বেশ বড় ও সুস্বাদু হওয়ায় বোম্বাই ও চায়না থ্রি লিচুর দাম সবচেয়ে বেশি।

রামসাগর জাতীয় উদ্যান
দিনাজপুর শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দক্ষিণে আউলিয়াপুর ইউনিয়নে অবস্থিত রামসাগর দিঘি। শহর ছেড়ে মাশিমপুর ও আউলিয়াপুরের লিচু বাগান দেখতে দেখতে চলে আসা যায় বিরাট এ দিঘিটি দেখতে।
১৭৫০ থেকে ১৭৫৫ সাল পর্যন্ত এটা খনন করা হয়। সেই সময় এ অঞ্চলে বেশ খরা আর দুর্ভিক্ষ হত।

তাই প্রজাদের সেচ সুবিধার পাশাপাশি খাবার পানি আর খাদ্যাভাব পূরণের লক্ষ্যে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির মাধ্যমে রাজা রামনাথ এ দিঘি খনন করেন। তার নামেই এর নামকরণ করা হয়।
জনশ্রুতি আছে, সে সময়ে দিঘিটি খনন করতে রাজার ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৩০ হাজার টাকা। মূল দিঘি অর্থাৎ জলভাগের দৈর্ঘ্য ১০৩১ মিটার আর প্রস্থ ৩৬৪ মিটার। তবে পুরো রামসাগর জাতীয় উদ্যানের আয়তন প্রায় ২৭ হেক্টর।


রামসাগর, বনবিভাগের দায়িত্বে আসে ১৯৬০ সালে। এরপরে ১৯৯৫-৯৬ সালে সরকার এটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলে। ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল রামসাগর এলাকাটি জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
রামসাগর দিঘি উত্তর-দক্ষিণে লম্বা আকৃতির। এর উত্তর দিকটি অপেক্ষাকৃত বেশি গভীর।

বেশ কয়েকটি পাকা ঘাট থাকলেও প্রধান ঘাটটি পশ্চিম পাড়ের ঠিক মাঝ বরাবর অবস্থিত। যেটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫০ ফুট আর প্রস্থ ৬০ ফুট। দিঘির উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব পাশেও একটি করে ছোট ঘাট রয়েছে।
দিঘিটির চারপাশ গাছে গাছে ঢাকা। মাঝ দিয়ে হাঁটার জন্য আছে ইট বাঁধানো পথ।

আর রয়েছে ছোট ছোট কয়েকটি টিলা। পশ্চিম পাশে ছোট্ট একটি চিড়িয়াখানাও আছে।
দিঘির উত্তর দিকে প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত লাল ইটের একটি প্রাচীন স্থাপনা দেখা যায়। এটি নিয়ে নানা কথা প্রচলিত আছে স্থানীয়দের কাছে। কারও মতে এটি একটি মন্দির আবার কারও মতে এটি ছিল রাজাদের বিশ্রামাগার।


নানারকম গাছপালা সমৃদ্ধ জাতীয় এ উদ্যানের দেখা মেলে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।
সপ্তাহের প্রতিদিনই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকে রামসাগর জাতীয় উদ্যান। প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ২ টাকা। নির্দিষ্ট মূল্য পরিশোধ করে গাড়ি নিয়েও জায়গাটিতে প্রবেশ করা যায়।
রামসাগরে বিভিন্ন বাহনের প্রবেশ মূল্য রিকশা ৫ টাকা, গাড়ি ৩৫ টাকা, সাধারণ মাইক্রোবাস ৬০ টাকা, বড় মাইক্রোবাস ৭৫ টাকা।


নিজস্ব বাহন না থাকলে দিনাজপুর শহর থেকে ব্যাটারি চালিত রিকশায় রামসাগর আসতে সময় লাগে প্রায় ত্রিশ মিনিট। ভাড়া ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।

যাবেন যেভাবে
সড়ক ও রেলপথে সরাসরি দিনাজপুর আসা যায়। ঢাকা থেকে দিনাজপুরগামী বাসগুলো সাধারণত ছাড়ে গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে। এ পথে নাবিল পরিবহনের এসি বাস চলাচল করে।

ভাড়া ১ হাজার টাকা। এ ছাড়া হানিফ এন্টারপ্রাইজ, এস আর ট্রাভেলস, কেয়া পরিবহন, এস এ পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, নাবিল পরিবহনের নন-এসি বাসের ভাড়া ৫৫০-৬৫০ টাকা।
এছাড়া ট্রেনেও যাতায়াত করা যায়। ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে আন্তঃনগর ট্রেন দ্রুতযান এক্সপ্রেস ছাড়ে সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে। আর আন্তঃনগর একতা এক্সপ্রেস ছাড়ে সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে।


দিনাজপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে দ্রুতযান এক্সপ্রেস ছাড়ে সকাল ৮টা ১০ মিনিটে আর একতা এক্সপ্রেস ছাড়ে রাত ৯টা ৫০ মিনিটে।
ঢাকা থেকে একতা ও দ্রুতযান এক্সপ্রেস বন্ধ থাকে যথাক্রমে মঙ্গল ও বুধবার। আর দিনাজপুর থেকে বন্ধ থাকে যথাক্রমে সোমবার ও বুধবার।
ভাড়া শোভন সিট ৩৬০ টাকা। শোভন চেয়ার ৪৩০ টাকা।

প্রথম শ্রেণি চেয়ার ৫৭০ টাকা। স্নিগ্ধা শ্রেণি ৬৭০ টাকা। প্রথম শ্রেণি বার্থ ৮৫৫ টাকা এবং এসি বার্থ ১২৮৫ টাকা।
যেথায় থাকবেন
দিনাজপুর শহরে থাকার জন্য ভালো মানের হোটেল হচ্ছে পর্যটন মোটেল (ফোন ০৫৩১-৬৪৭১৮)। এ ছাড়া ঢাকায় পর্যটনের প্রধান কার্যালয় থেকেও এ মোটেলের বুকিং দেওয়া যায়।


এখানে দুই বিছানার এসি রুমের ভাড়া ১ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা। অপেক্ষাকৃত কম ভাড়ার রুম ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা।
এ ছাড়া দিনাজপুরের অন্যান্য সাধারণ মানের হোটেলে ৩০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় থাকা যায়। এরকম কয়েকটি হোটেল হল- মালদহ পট্টিতে হোটেল ডায়মন্ড। নিমতলায় হোটেল আল রশিদ, হোটেল নবীন, হোটেল রেহানা, নিউ হোটেল ইত্যাদি।


ছবি : লেখক

সোর্স: http://bangla.bdnews24.com     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।