আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রণোদনা ও বিজিএমইএ

প্রেম ছিল, আশা ছিল

৩ সেপ্টেম্বর বিজিএমইএ সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী এক সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন- আগামী ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাদের তিন হাজার কোটি টাকা দিতে হবে, তা না হলে অন্তত ৪০ শতাংশ কারখানা তাদের শ্রমিকদের ঈদের বেতন ও বোনাস দিতে পারবে না। তাদের দাবি বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে গার্মেন্টস মালিকরা অর্থকষ্টে পড়েছেন। তাই এই অর্থকষ্ট মেটাতে সরকারকে প্রণোদনার তিন হাজার কোটি টাকা দিতে হবে। এটা এক ধরনের ব্লাকমেইল। শ্রমিকদের বেতন বোনাসের সাথে প্রণোদনার সম্পর্ক কোথায়? আর সংবাদ সম্মেলন শেষ করেই সালাম মুর্শেদী সহ বিজিএমইএর অর্থকষ্টে থাকা বেশীরভাগ নেতা কেন গেছেন সৌদি আরবে ওমরাহ করতে? মাত্র তিন মাস পরে হজ।

এখন কেন তবে স্বদলবলে ওমরাহ করতে হবে? পৃথিবীর অন্যকোন দেশে গেলে এটাকে জনগন প্রমোদভ্রমণ বলতো সেই জন্যই কি সৌদি আরবকে বেছে নেওয়া হয়েছে? ২৫ লাখ গার্মেন্টস শ্রমিককে এইভাবে জিম্মি করার কারণ কি? আমরা দেশের দুই বড় রাজনৈতিক দলকেই বলতে শুনি ’ঘোলা জলে মাছ শিকারের কথা। ’ আর এবার সেই ঘোলা জলে মাছ শিকারের ধান্দা করছে বিজিএমইএ। বিগত দিনে তৈরী পোষাক শিল্পে অনেকবার শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনা ঈদের আগে বেড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। সারা মাস কাজ করার পর নিরীহ শ্রমিকদের খালি হাতে ফিরতে হয় ঈদের আগে।

ফলে বিভিন্ন কারখানায় সৃষ্টি হয় শ্রমিক অসন্তোষের। আর এই ঘটনায় সব সময় দায়ী করা হয় শ্রমিকদের এবং সরকারকে নিতে হয় আইন শৃংখলা পরিস্থিতি অবনতির জন্য দায় । সেই কারনেই বোধহয় বিজিএমইএ নেতারা সরকারকে আগে থেকেই বেকায়দায় ফেরার চেষ্টা করছে। অর্থমন্ত্রীর ভাষ্য মতে, তৈরী পোষাক শিল্পের মালিকরা সরকারকে কোন কর্পোরেট ট্যাক্স দেন না একমাত্র ব্যক্তিগত ইনকাম ট্যাক্স ছাড়া। দেশের যে কোন শিল্পের চেয়ে তারা সবসময় বেশী সুযোগ সুবিধা ভোগ করে সরকারের নিকট থেকে।

তৈরী পোষাক শিল্পের মালিকদের দাবি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সিংহভাগ কৃতিত্বই নাকি তাদের। বৈদেশিক মুদ্রার সিংহভাগ আসে ঠিকই আবার ব্যাক টু ব্যাক এলসির মাধ্যমে চলেও যায় অনেক। সব মিলিয়ে কত যেটা থাকে তার পরিমান খুব একটা বেশী নয়। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার আর একটা বড় যোগান আসে প্রবাসীদের মাধ্যমে যাদের পিছনে সরকারকে একটা কানাকড়িও ব্যয় করতে হয়না। কিন্তু আমার প্রশ্ন হল, এই বৈদেশিক মুদ্রার কৃতিত্ব কি শুধুই মালিকদের? শ্রমিকদের কি এখানে কোন ভুমিকা নেই? তৈরী পোষাক শিল্পের মালিকরা মাঝে মাঝে জিকির তোলেন তাদের অবস্থা ভালোনা।

খুব কঠিন সময় পার করছে এই শিল্প। তাই যদি হয় তাহলে গার্মেন্টস মালিক কিভাবে এফবিসিসিআই এর সভাপতি হয় ? মার্সিডিজ, বিএমডাব্লিউর মত বিশাল বহুল গাড়ী তারা কিভাবে হাকান এই গরীব দেশে? গুলশান বনানীর মত অভিজাত এলাকায় তারা বাড়ী তৈরী করেন কিভাবে ? প্রণোদনা যদি দিতেই হয় সেটা দিতে হবে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদেও, মালিকদের নয়। তৈরী পোষাক শিল্পের শ্রমিকদের নুন্যতম বেতন কাঠামো নির্ধারিত হলেও বেশীরভাগ কারখানাতেই তা মানা হচ্ছেনা। শ্রমিকদের কাজ করার জন্য যে ধরণের পরিবেশ দরকার তা বেশীরভাগ কারখানাতেই নেই। নোংড়া অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তাদের কাজ করতে হয়।

এদের নিয়ে একটা রিপোর্ট করতে গিয়ে দেখেছি শ্রমিকরা মালিকদের ভয়ে মুখ খুলতে পারেনা। একদিকে মাস শেষে বেতন দেয়া হয়না আর অন্যদিকে থাকে বাড়তি কাজের চাপ। বেশীরভাগ কারখানাতেই শ্রমিকদের বাড়তি কাজের জন্য কোন রেজিষ্টার মেইনটেন করা হয়না। যার ফলে মাস শেষে তাদের পাওনা টাকার হিসেব নিয়ে গড়মিল থেকেই যায়। আর এই সব নিয়ে কথা বলতে গেলেই শারিরিক এবং মানসিক নির্যাতন চালানো হয় এই নিরীহ শ্রমিকদের ওপর।

আজ যারা অর্থকষ্টের কথা বলছেন তারা কি বিগত দিনে যখন অধিক মুনাফা হয়েছে তার কোন অংশ তারা শ্রমিককে দিয়েছেন? ভুলে গেলে চলবে না এই গাড়ী-বাড়ী, বিত্ত-বৈভব সবই শ্রমিকদের বিন্দু বিন্দু ঘাম দিয়ে তৈরী। ০৮-০৯-২০০৯

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।