আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এবাদতঃ প্রত্যাশা বনাম প্রাপ্তি

আমি লিখতে চাই...................

এবাদতঃ প্রত্যাশা বনাম প্রাপ্তি সাইফুল বাতেন টিটো একবার এক শুটিং আমাকে এক অভিনেতা জিজ্ঞেস করেছিলেন তোমার চোখে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ অভিনেতা কে? আমি বললাম এটিএম শামসুজ্জামান ও হুমায়ুন ফরিদি। অভিনেতা বললেন- আমি একজনের নাম জানতে চেয়েছি, তুমি তো বললে দুই জনের নাম। আমি বললাম- আমি দুজনকেই যুগ্ম ভাবে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করি। যখন থেকে সিনেমা দেখা শুরু করেছি তখন থেকেই এই দুজন আমার দৃষ্টিতে যুগ্ম ভাবে শ্রেষ্ঠ হয়ে আছেন আর চিরদিনই থাকবেন। একদিন শুনলাম সেই এটিএম শামসুজ্জামান একটি সিনেমা বানাচ্ছেন, নাম এবাদত।

নাম যাই হোক না কেন অনেক আশা নিয়ে বসে আছি যে অনেক সুন্দর একটি সিনেমা দেখব বলে। এক সমসয় খবর পেলাম যে ছবিটি বানানো শেষ, সেন্সর বোর্ডে পাঠিয়েছেন বিচারকদের সুচিন্তিত রায়ের জন্য। সেই ঝামেলা, কি এক ত্র“টির কারণে আটকে গেলো সিনেমাটি। আমরা বলাবলি করতে লাগলাম যেহেতু সিনেমাটি বানিয়েছে এটিএম শামসুজ্জামান তো তাতে অবশ্যই এমন কিছূ কঠিন সত্য কথা রয়েছে যা সরকার পক্ষ হজম করতে পারবে না এই জন্য বোধ হয় গরিমশি করছে সেন্সর বোর্ড। একদিন খবর পেলাম সম্পাদিত সিনেমাটির কিছূ অংশ বাদদেয়ার পরে সেটিকে বোর্ড প্রদর্শনির জন্য অনুমতি দিয়েছে।

যাক তারপরেওতো দিয়েছে। জানতে পারলাম ৩ জুলাই বলাকা সহ নগরীরর বেশ কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহে দেখানো হবে। আমি বেতন পাই পাঁচ তারিখ। কিন্তু শুক্রবার ছাড়া দেখার জো নেই। ভাবলাম শুক্রবারই দেখব।

এক বন্ধুর কাছথেকে টাকা ধার করে গেলাম বলাকায়। গিয়ে দেখি লোকে লোকারণ্য। একশ দশ টাকায় টিকেট কেটে ঢুকলাম। আমিই বোধহয় শেষ টিকেটটি পেয়েছিলাম। ছবি শুরু হলো।

দেখলাম শেষ পর্যন্ত। কিন্তু কি দেখলাম? আমি হতবাক! এটা কি সেই আলোচিতো এবাদত? তা কি করে সম্ভব? এটার নির্দেশনা কি সত্যিই এটিএম শামসুজ্জামান সাহেব দিয়েছেন? উনি একবার এক পেপারে এই ছবিটির ব্যাপারে বলেছিলেন সে তিনি তাঁর জীবনের সকল অভিজ্ঞতা নাকি এই ছাবিতে প্রয়োগ করেছেন। এই তার নমুনা? আমি প্রতিটি সিক্যুয়েন্স দেখছি আর বার বার বিস্মিত হচ্ছি। তিনি বাংলাদেশের নামি দামি অভিনেতা অভিনেত্রী এখানে কাষ্ট করেছেন, তারা অভিনয়ও করেছেন দুর্দান্ত। কিন্তু অন্যসব? আমি যে লেখাটা লিখছি সেটা কোন দিনই অন্য কেউ দির্নেশনা দিলে আমি লিখতাম না।

এমন একটা কাহিনীন উপর নির্ভর করে ছবিটি অগ্রসর হয়েছে যা আসলেই হাস্যকর। প্রপস এবং কষ্টিউমের কন্টিনিউটি ঠিক ছিলো না অনেক যায়গাতেই। সবমিলিয়ে যে যগাখিচুরি হয়েছে তা হলোঃ ১. আমরা দেখতে পাই যে শাবনুরের বাবা মারা গিয়েছেন রাতে, সকালে প্রবীর মিত্র এসেছেন শাবনুর কে তার মেয়ের বিয়ের দাওয়াত দিতে। শাবনুর বের হয়েছেন দেখা করতে তার চোখে গাঢ় কাজল আর ঠোটে লিপিষ্টিক। এটা কি সম্ভব? ২. শাবনুরের বাবাকে দাফন করা হবে, একজন কবর খুড়ছেন আর পাশে মুর্দাখাটে লাশ।

এমন কি কেউ কোথাও দেখেছেন যে লাশ পাশে রেখে কবর খোড়া হয়? ৩. গল্পের একপর্যায়ে নায়ক সঠিক পথে ফিরে আসেন। সে ভালো কাজ করা শুরু করে। সে আগে ভয়ংকর সন্ত্রাসী ছিলো। যখন তখন খুন খারাবী করে বেড়াতো। আমরা গল্পে দেখেছি ঐ থানায় একজন ভালো পুলিশ অফিসার এসেছেন।

কিন্তু এতো শান্ত হয়ে যাওয়ার পরও কেন ঐ সন্ত্রাসী কে ধরা হলো না? ৪. নায়ক ইমামের সন্তান। সে বেশ ভালো ছিলো এক সময়। ভালো লেখা পড়া করেছে এক সময়, অর্থাৎ বাবা মায়ের বাধ্য ছিলো সে। একজন ইমামের বাধ্য সন্তান এতো বড় বয়সেও কোরান শরীফ পড়তে পারে না এটা কি অযৌক্তিক নয়? ৫. গল্পে বলা হয়েছে এটিএম শামসুজ্জামান যে ভাষায় কথা বলেন ওটা নাকি যশোরের ভাষা। আসলে কি তাই? যদি তাই হয় তাহলে পাবনার ভাষা কোনটা? ৬. এক যায়গায় দেখতে পাই নায়ক আর তা সহোচর একটি নটি পাড়ায় যায়, সেখানে কে নাচে? সেই এফডিসির প্রপস নাসরিন, আর কি কেউই ছিলেন না যারা নাচ যানেন? নাকি বাজেটে ঘাটতি ছিলো? ৭. আমরা পুরো গল্পোটাই দেখতে পাই একটা গ্রামে।

এমনকি মফস্বলও না। কিন্তু এক রাতে সেই গ্রামে সিএনজি চালিত টেক্সিক্যাব ঢুকে গেলো। তা কতটা যুক্তিযুক্ত? ৮. শেষে আমরা দেখলাম নায়ক আর নায়িকা দুজন একত্রে খুন হয়, এতে কি দর্শক বিয়োগাত্মক কাহিনীর মজা পেয়েছে? আমি তো দেখলাম সবাই হাসতে হাসতেই বের হলো হল থেকে। ৯. এটা আসলে কি ধরনের সিনেমা ছিলো? একশ ধর্মী? প্রেমের ছবি? কমেডি? ট্রাজেডি? সামাজিক? একজন সাধারণ দর্শক হিসেবে আমি কিন্তু কোনটাই পাইনি। এরকম হাজারো কমোন ভুলে ভরা সিনেমাটি জানিনা কতোটা ব্যাবসা সফল হবে।

তবে ক্যামেরার পিছনের লোক হিসেবে আমি অবশ্যই ইচ্ছা ছবিটা ব্যাবসা করুক। হয়তো নির্মাতাদের অনেক সীমাবদ্ধতা থাকার কারণে আমার মতো এক নাদান এই ধৃষ্টতা দেখাতে পেরেছে। আসা করছি এটিএম শামসুজ্জামান সাহেব তার পরবর্তী সিনেমায় সকল সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে পারবেন। এবং আমাদের প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হবেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.