আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আব্দুল আলীম

মানুষ আর প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য হলো-চেতনাগত ও সংস্কৃতিগত।

আব্দুল আলীমঃ লোকসঙ্গীতের অমর শিল্পী এই যে দুনিয়া/ নাইয়া রে নায়ের বাদাম তুইলা/ সর্বনাশা পদ্মা নদী/ হলুদিয়া পাখী/ মেঘনার কূলে ঘর বাঁধিলাম/ দোল দোল দুলনি/ দুয়ারে আইসাছে পালকি/ কেন বা তারে সঁপে দিলাম দেহ মন প্রাণ/ মনে বড় আশা ছিল যাবো মদীনায় ইত্যাদি। বাংলা গানে বিষেশ করে লোকসঙ্গীতের ক্ষেত্রে আব্দুল আলীমের নামটি সর্বাগ্রে চলে আসে। গ্রাম-বাংলার সহজ-সরল মানুষের কথা-ব্যাথা এবং তার সাথে যুক্ত পার্থিব ও আধ্যাতিক মর্মানুভূতি অনুভব করে তিনি গান রচনা করতেন এবং গাইতেন। আগ্নিযুগের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে যে সমস্ত শিল্পী, সাংবাদিক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী ও কবি-সাহিত্যিক মানুষের পার্থিব ও আধ্যাতিক মুক্তির জন্য অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে লোকসঙ্গীতের অমর শিল্পী আব্দুল আলীম অন্যতম।

আব্দুল আলীম তাঁর আধ্যাত্মিক ও মরমী মুর্শিদী গানের জন্যই আমাদের এই বাংলা ভাষা-ভাষী অঞ্চলে অমর হয়ে আছেন এবং থাকবেন। আবদুল আলীমের জন্ম ১৯৩১ সালের ২৭ জুলাই। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের তালিবপুর গ্রামে। বাল্যকাল থেকেই তিনি সঙ্গীতের প্রবল অনুরাগী ছিলেন। বাবার নাম ছিল মোহাম্মদ ইউসুফ আলী।

পারিবারিক অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতার কারণে কোনো সঙ্গীত শিক্ষকের কাছে গান শিখতে পারেননি। গান শুনে শুনে নিজে নিজে গান করার চেষ্টা করতেন। এ চেষ্টা চলতে থাকলো অবিরাম। বন্ধুদের কে বিভিন্ন গান গেয়ে শুনাতেন। বন্ধুরা অনেকে উৎসাহ-অনুপ্রেরণা যোগাতো।

আবার অনেকে টিটপনি কাঁটতেন। বিভিন্ন পালা-পার্বণে তিনি গান গাইতেন। এভাবে গান গেয়ে তিনি বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। প্রাইমারী স্কুলে পড়বার সময় গ্রামোফোন রেকর্ডে গান শুনে শুনে গান গাইবার জন্য তাঁর আগ্রহ সৃষ্টি হয়। সেই সময় তাঁর সঙ্গীতগুরু ছিলেন সৈয়দ গোলাম আলী।

মাত্র ২৩ বছর বয়সে ১৯৪৩ সালে তাঁর দুটি গান প্রথম রেকর্ড হয়। ‘তোর মোস্তফাকে দে না মাগো’ এবং ‘আফতাব আলী বসলো পথে’। এতো অন্প বয়েসে এটা নিশ্চয়ই একটা বিস্ময়কর ব্যাপার। শুরু হয় শিল্পী জীবনের পথচলা। পরবর্তীতে তিনি কলকাতায় যান।

সেখানে তিনি আব্বাসউদ্দিন ও কাজী নজরুল ইসলামের সাক্ষাৎ পান। ধীরে ধীরে তাঁদের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। তাঁরা শিল্পী আলীমকে নানাভাবে সহযোগিতা করেন। তাঁরাবিভিন্ন স্থানে একত্রে গান করেছেন। আব্দুল আলীম লোক ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ওপর দীক্ষা নিয়েছেন_ বেদার উদ্দিন আহমেদ, ওস্তাদ মোহাম্মদ খসরু, মমতাজ আলী খান, আব্দুল লতিফ, কানাই লাল শীল, আব্দুল হালিম চৌধুরী প্রমুখের কাছে।

তিনি লেটো দলে, যাত্রা দলে কাজ করেছেন অনেক দিন। ১৯৪৭ পরে আব্দুল আলীম ঢাকায় চলে আসেন। শুরু হল কর্ম জীবন। তখন তিনি রেডিওতে স্টাফ আর্টিস্ট হিসেবে গান গাইতে শুরু করেন। তিনি পরে বাংলাদেশ টেলিভিশন চালু হলে সেখানেও সঙ্গীত পরিবেশনের কর্মে যুক্ত হন।

এছাড়াও আবদুল আলীম ঢাকা সঙ্গীত কলেজের লোকগীতি বিভাগের অধ্যাপনা করতেন। বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’সহ বিভিন্ন বাংলা চলচ্চিত্রে আব্দুল আলীম গান করেছেন। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রটি হলো ‘লালন ফকির’। সব মিলিয়ে প্রায় ৫০০টির মতো গান রেকর্ড হয়েছিল তাঁর। আব্দুল আলীম বেশ কয়েকটি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন।

এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-একুশে পদক, পূর্বাণী চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার। পাকিস্তান মিউজিক কনফারেন্স ও লাহোরে সঙ্গীত পরিবেশন করে আব্দুল আলীম পাঁচটি স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন। বাংলাদেশ সরকার তাঁকে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করে। ১৯৭৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.