আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সংবাদপ্ত্র ও সাংবাদিকদের উপর নির্যাতনের পথ পরিহার করুন

আমি বাংলার গান গাই আমি বাংলায় গান গাই আমি আমার আমাকে চিরদিন এই বাংলায় খুঁজে পাই

৩ সেপ্টেম্বর যশোরের দড়াটানা চত্বরে এক সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্র লীগের নেতারা দৈনিক প্রথম আলো প্রতিনিধি আরিফুর রহমানকে যশোর থেকে প্রত্যহারের দাবি জানিয়েছেন। তা না হলে তাকে হাত-পা ভেঙ্গে ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি প্রদান করেন নেতৃবৃন্দ। যশোর জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং যশোর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান জনাব শাহিন চাকলাদারের বিরুদ্ধে চরমপন্থী, সন্ত্রাসী, চোরাচালানীদের মদদ দানের অভিযোগে প্রথম আলোয় ধারাবাহিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের প্রতিবাদে যুবলীগ এই সমাবেশের আয়োজন করেছিল। এর একদিন আগে চুয়াডাঙ্গা শহরে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে রীতিমত তান্ডব চালিয়েছে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীরা। তারা দৈনিক প্রথম আলো এবং দৈনিক আমার দেশ এর প্রতিনিধিদের বাড়ি বাড়ি হামলা চালিয়ে তাদের না পেয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছে।

এই দুই সাংবাদিকের ‘অপরাধ’ তারা তাদের পত্রিকায় জেলা আওয়ামী লীগ নেতা সাংসদ সেলুন জোয়ার্দার এবং তার ভাই উপজেলা চেয়ারম্যানের চরমপন্থী সংশ্লিষ্ঠতা ও চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। এই দুটি ঘটনাই প্রমাণ করে দেয় আওয়ামী লীগ যত পুরোনো রাজনৈতিক দল হোন আর গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সমৃদ্ধ হোক না কেন বিরুদ্ধ মতকে তারা কখনোই পাত্তা দিতে চায় না। প্রয়োজনে কঠোরভাবে সেগুলোকে দমন করতেও পিছপা হয় না। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এ ধরনের একটি ঘটনায় ফেনির অপরাধ জগতের গডফাদার ও সে সময়ের সাংসদ জয়নাল হাজারীর নির্দেশে তার সন্ত্রাসী বাহিনী প্রথম আলোর জেলা প্রতিনিধি টিপু সুলতানকে হত্যার উদ্দেশ্যে নির্মমভাবে নির্যাতন করে। তাদের সে নির্যাতনে টিপু সুলতান এক প্রকার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছিলেন।

একই সময় ফরিদপুরে জনকন্ঠের তৎকালীন জেলা প্রতিনিধি প্রবীর শিকদারকেও হত্যার উদ্দেশ্যে নির্মমভাবে নির্যাতন চালিয়েছিল আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। তাদের ক্ষমতাকালীন হত্যার শিকার হন সাহসী সাংবাদিকতার প্রথিকৃৎ যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক রানার সম্পাদক আরএম সাইফুল আলম মুকুল, সাতক্ষীরা থেকে প্রকাশিত পত্রদূত সম্পাদক সম আলাউদ্দীন এবং ঝিনাইদহ থেকে প্রকাশিত দৈনিক বীরদর্পণ সম্পাদক রাজনীতিক মীর ইলিয়াস হোসেন দীলিপ। আলামউদ্দীন আওয়ামী লীগ রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকলেও তার দলের লোকেরাই তাকে হত্যা করে বলে এলাকার মানুষ মাত্রই জানেন। শুধু এগুলোতেই যে তারা ক্ষান্ত ছিল তা নয় সারা দেশেই এভাবে সাংবাদিকদের উপর হত্যা নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়ে সত্য প্রকাশের স্বাধীনতাকে কণ্ঠরোধ করতে চেয়েছিল তারা। এ সময়রে আরো একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হয় জাতীয় প্রেসকাবে পুলিশি হামলার মাধ্যমে।

তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতাদের ইশারায় পুলিশ প্রেসকাবে হামলা চালিয়ে সেখানে অবস্থানরত জাতীয় সংবাদপত্র এবং ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকদের সিনিয়র জুনিয়র নির্বিশেষে লাঠিপেটা করে। এটি জাতীয় প্রেসকাবের ইতিহাসে প্রথম এবং এর পদাঙ্ক অনুসরণ করে দ্বিতীয় ঘটনা ঘটে বিএনপি সরকারের আমলে। আওয়ামী লীগের সংবাদপত্র দমনের এই ইতিহাস নতুন কিছু নয়, বরং বেশ পুরনো। ১৯৭৪ সালে বাকশাল কায়েমের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘Press and Publication Act' এর মাধ্যমে সংবাদপত্র দলননীতির সূচনা করেছিলেন। সেসময় মাত্র চারটি পত্রিকা রেখে দেশের সকল সংবাদপত্রের প্রকাশনা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

যে চারটি পত্রিকার প্রকাশনা বাঁচিয়ে রাখা হয় তারাও বাকশালের গুনকীর্তন ছাড়া বিরুদ্ধ কোন মত বা সংবাদ প্রকাশ করেনি। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, এরশাদ সামরিক শাসনামলেও আমরা সংবাদপত্র দলননীতির কলঙ্কিত ইতিহাস দেখেছি। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সংবাদপত্র অফিসে ছবক পাঠানো হত কি লেখা যাবে আর যাবে না। কিন্তু, দেশের প্রতিটি সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকেরা একযোগে এর প্রতিবাদ করেন। এরশাদ উত্তর ‘গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’য় আওয়ামী শাসনামলে সাংবাদিকদের উপর হত্যা-নির্যাতনের প্রতিবাদেও সোচ্চার হয়েছিল দেশের প্রায় সকল সংবাদপত্র।

এবং কি আশ্চর্যের ব্যাপার সামরিক স্বৈরাচার ও আওয়ামী স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনকে দ্রুত যৌক্তিকতার দিকে নিয়ে যায় সংবাদপত্রের এই ভূমিকা। প্রেক্ষিতটা ভিন্ন হলেও বিএনপি স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনকেও ত্বরান্বিত করেছিল সংবাদপত্রের সাহসী ও উদ্যোগী ভূমিকা। এসব দিক বিবেচনা করে আমরা আশা করেছিলাম, এবার অন্তত আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী সংগঠনের লোকজন অন্তত সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকদের ব্যাপারে যতœবান হবেন। কিন্তু, অন্যান্য সব বিষয়ের মত এই বিষয়েও তাদের যে কোন শিক্ষা হয়নি তার প্রমাণ তারা রাখতে শুরু করেছে। যার পরিণতি কোনভাবেই ভাল হতে পারে না।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।