আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মরির সাথে সময়গুলো... Tuesdays With Morrie

পথ বাঁধতে চেয়েছিল বন্ধনহীন গ্রন্থি...

মিচ এলবম-এর সাথে মরির দেখা হয়নি ১৬ বছরেরও বেশি সময়। হয়তোবা তাদের দেখাও হতো না আর। মরি মারা যেতেন, যেভাবে সবাই চলে যায়, সেভাবেই তাঁর সৎকার হতো, পত্রিকার পাতায় শোকবার্তায় তাঁর নাম দেখে মিচ দুঃখ পেতেন, স্ত্রীকে ডেকে হয়তোবা ছবিটা দেখিয়ে বলতেন তার প্রিয় শিক্ষকের কথা। এরকম কিছুই হবার কথা ছিল হয়তো, কিন্তু হলো না। টিভি চ্যানেল পাল্টাতে গিয়ে এক রাতে টেড কপোলের 'নাইটলাইন' শো-এ মরি শোয়ার্টজ-এর নাম শুনে একই সাথে সব স্মৃতি হুড়মুড়িয়ে মনে পড়ে গেল মিচের।

এই গল্পের শুরু তখনই। মিচ এলবম লিখেছেন তার ৭৮ বছর বয়েসী সমাজবিজ্ঞান শিক্ষক মরি শোয়ার্টজকে নিয়ে এই 'Tuesdays with Morrie' বইটিতে তার অভিজ্ঞতাগুলো। মরি তাঁর মৃত্যুর ঘণ্টাধ্বনি শুনতে পান ১৯৯৪ এর গ্রীষ্মে। একজন উচ্ছল মানুষ মরি যেই বুধবারে গীর্জার 'ড্যান্স ফ্রী' অনুষ্ঠানে নাচতে পারলেন না, তখনই তিনি বুঝলেন তাঁর কিছু একটা খারাপ অসুখ হয়েছে। তারপরে আস্তে ধীরে তাঁর শরীরের অবস্থার অবনতি হলে, তাঁর চিকিৎসক জানালেন, তাঁর যে রোগটা হয়েছে সেটার নাম সংক্ষেপে ALS [amyotrophic lateral sclerosis] বা Lou Gehrig's disease।

স্নায়ুতন্ত্রের এই কঠিন রোগে একটা একটা করে মানুষের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এএলএস হলো একটা জ্বালানো মোমবাতির মতো, এটা আস্তে আস্তে শরীরের সব স্নায়ুগুলোকে গলিয়ে শরীরটাকে এক দলা গলিত মোমের মতো পদার্থে পরিণত করে। সাধারণত শুরু হয় পা থেকে, এবং আস্তে ধীরে পুরো শরীরটাকে ছিবড়ে বানিয়ে দেয়। শেষমেশ বেঁচে থাকা মানুষটি হয়তোবা নিঃশ্বাস নিবে গলায় ফুটো করে ঢোকানো নল দিয়ে, যখন তার সজীব সত্তাটা হাসফাস করবে অথর্ব শরীরটার ভিতরে, যেটা হয়তোবা শুধু চোখ নাচাতে আর জিভ নাড়াতে পারে। মরি প্রথমে ভয় পেলেও মেনে নিয়েছিলেন ভাগ্যকে।

কিন্তু আশা ছাড়েননি। যতদিন পেরেছেন শিক্ষকতা করে গেছেন Brandeis বিশ্ববিদ্যালয়ে। করে গেছেন স্বাভাবিক সব কাজই। চিকিৎসক সময় দিয়েছিলেন দুই বছর। মরি কাজে লাগিয়েছিলেন পুরো সময়টাকেই, প্রমাণ করেছেন 'মৃতপ্রায়' শব্দটা 'বাতিল' বা 'অকেজো'-এর সমার্থক নয়।

মরি জীবিতাবস্থাতেই তাঁর শেষকৃত্য করেন তাঁর প্রিয় আত্মীয় বন্ধুদের সাথে, কারণ তাঁর কাছে মনে হয়েছে তিনি যখন বেঁচে আছেন তখনই সবাই বলে যাক তাঁকে কতটুকু ভালবাসে তাঁর বন্ধুরা। তাঁর শেষ কাজ ছিল মিচ-এর সাথে তাঁর এই শেষ প্রজেক্ট, যার ফল এই বইটি। পুরো বইটি জুড়ে মিচ প্রতি চ্যাপ্টারের শেষে ১৯৭৬ সালে মরির সাথে তাঁর নিজের শিক্ষাজীবনের কেটে যাওয়া সময়গুলোকে নিয়ে লিখেছেন। ১৯৯৫ এর মরি আর ১৯৭৬ এর মরি। বইটির প্রতিটি পাতায় একজন অদ্ভুত মানুষ ফুটে উঠেছে, যে বাঁচতে জানতো, চারপাশের মানুষকে নিয়ে, সাদাকালো চারপাশটাকে রঙিন করে নেবার ক্ষমতা ছিল মরির।

তাঁর চারপাশের মানুষগুলোর জীবনে আক্ষরিক অর্থেই মরি ঘুরিয়েছেন 'জাদুর ছড়ি'। মিচের ভাই পিটার, যে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে জীবন থেকে, আত্মীয়-বন্ধুদের থেকে নিজেকে অনেক দূরে সরিয়ে নিয়েছিল, তাকেও মরি শিখিয়ে দেন যে জীবন পরাজিত হবার জন্যে নয়, জীবনে সবাই জয়ী হতে পারে, নিজের ভাবনাটাকেই পাল্টে ফেলে। এরকম জাদুর ছড়িওয়ালা মানুষ খুব অল্পই আসে পৃথিবীতে, তাই বা কেন হয়? কিছু কিছু অংশ পড়ে আমি চোখের পানি আটকাতে পারিনি, ভেবেছি, আমার নিজের যদি এমন একজন শিক্ষক থাকতেন তাহলে হয়তোবা আমি কখনও তাঁর সাথে যোগাযোগ ছিন্ন করতাম না। মরি কেমন পড়াতেন তা ব্যাখ্যা করার কিছু নেই, কিন্তু একজন শিক্ষক তাঁর ছাত্রের কাছে কতটুকু হতে পারে, তা এই বইয়ের প্রতিটা পাতায় পাওয়া যায়। আমি হয়তোবা বইয়ের রিভিউ ভালো লিখতে পারছিনা, কিন্তু একজন পাঠক হিসেবে আমি এই বইটা পড়ে শিখেছি অনেক কিছু।

মানুষের জীবনে কিছু বই থাকে, যা তার জীবনের মোড়গুলো পাল্টে দিতে পারে। আমার জীবনে এই সত্য কাহিনীটার গুরুত্ব ততখানিই। আগেই বলে দিচ্ছি, এখানে বইটার যেটুকু আমি তুলে ধরেছি সেটুকু কিছুই নয়। আর আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক বলে যে, এই বইটা অন্তত প্রত্যেক শিক্ষার্থীর একবার পড়ে দেখা উচিত। 'Tuesdays with Morrie' আমার সবচে' প্রিয় বইগুলোর একটা।

এর ট্যাগলাইনঃ 'An old man, an young man and life's greatest lesson' কথাটা আসলেই সত্যি। শুধু মনে হয়, যদি একবার মরির সাথে আমার দেখা হতো! আমি মূলত গল্পের বইয়ের পাঠক, ভাবগম্ভীর বইপত্র আমার খুব একটা পড়া হয়ে ওঠে না। পড়তে ভালো লাগে বলে যখন তখন বই নিয়ে বসে যেতে পারি, তা বাসেই হোক বা ক্লাসে! ব্যাগে সর্বক্ষণ একটা গল্পের বই আমার থাকবেই। তবু কখনও ভাবিনি, কোনও বই নিয়ে সেটার রিভিউ লিখব। লিখিছিনা বেশ কিছুদিন।

আর চারপাশের মানুষজনের লেখা পড়ে নিজের আবজাবগুলো আজকাল আর ফোল্ডার থেকেই নামাই না। তাই যখন খুব লিখতে ইচ্ছা করলো তখন ভাবলাম আমার প্রিয় বইগুলোর একটাকে নিয়েই নাহয় লিখি। তাই আজ এই পোস্ট। বইটা নিয়ে বলতে গেলে আসলে প্রতি পাতা থেকেই কিছু না কিছু বলতে হয়... আমি সেই দিকে গেলাম না... ঢাকায় এই বইটা আমি একবার দেখেছি "ওয়ার্ডস 'এন' পেজেস" এ। আর কোথাও দেখিনি।

হয়তো এখন 'ফ্রেন্ডস'-এ খুঁজলে বা আজিজ-এ পাওয়া যেতে পারে। আমার কাছে এক কপি আছে, তবে অনেক হাত ঘুরে সেটার অবস্থা বেহাল। নেটে পাওয়া যায়, আগ্রহীরা বইটা পাবেন এখানে। Tuesdays With Morrie

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.