আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পশু-পাখি-বৃক্ষ-বাড়িওয়ালা ভালবাসতে ভ্যালেন্টাইনের চিঠির দরকারটা কী? ভালোবাসা দিবসের উদ্দেশ্যটা আসলে কী?

কত কিছু যে করতে চাই, তবুও কিছু করতে না পারার দায়ে মাথা খুঁটে মরি । একটা মাত্র দিন, প্রেমিক প্রেমিকার ভালবাসাটাকে সেলিব্রেট করার জন্যে; সেইটাকেও পুলিশ-আসামী, বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়া, বড়ো ছোট, মানুষ পশু, প্রতিবেশীদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার মানেটা কী ভাই? ইতিহাসটা প্রতি বছর শুনে এখন সবাই জানেন। অতি শর্টে ২ লাইনে শেষ করি। ক্লডিয়াস ২য় চিন্তা করে দেখলো, বিবাহিত যোদ্ধার চেয়ে অবিবাহিত যোদ্ধারা ফাইটে ভালো হবে। তাই সে বিয়ে করতে মানা করে দিলো।

ত ভ্যালেন্টাইন এক মেয়েকে বিয়ে করতে যেয়ে ধরা খেয়ে গেলেন। ফাঁসীর আগে লাস্ট চিঠির শেষে উনি লিখেছেন, “তোমারই ভ্যালেন্টাইন”। আবার শোনা যায়, ওখানে জেলরক্ষকের মেয়েরই প্রেমে পড়েছিলেন উনি। সেই মেয়েকেই চিঠি দিয়েছিলেন। ত, ঘটনা শেষমেষ যাই হোক, এই যে বেচারা ভ্যালেন্টাইন চিঠিটা দিয়ে গেলেন, উনি কি গরু ছাগল, বৃক্ষ, পুলিশ, প্রতিবেশি, ভাই-ভাবী, বাবা মা, পৃথিবী গ্যালাক্সি এদেরকে চিঠি দিলেন? আরে, এই চিঠির উপর এই ভ্যালেন্টাইন’স ডে সেই চিঠিটাই ত প্রিয়তমার জন্য।

একটা মাত্র দিন প্রেমিক প্রেমিকাদের দেয়া যায় না? সেখানেও আঁতেলীয় বাণী দিতে হবে যে, এই ভালবাসা সবার ! বৃক্ষ রোপণ সপ্তাহে গাছের খবর নাই, এই দিনে বৃক্ষের জন্য প্রেম উথলে পড়ছে। ঈদে গরীব প্রতিবেশীকে মাংস দিতে মনে থাকেনা, মাংস দেয় দুই বিল্ডিং পড়ের “ভাবী” কে, আজকের দিনে তাদের প্রতিবেশির জন্য ভালোবাসা উথলে পড়ছে। প্রতিটা কাপল (বিবাহিত ও অবিবাহিত) নিজেরাই ডিসিশান নেক না যে তারা এই দিন কিভাবে উদযাপন করবে বা আদৌ করবে কী না। বহুদিন ধরে বলবো বলবো ভাবছি, বলা হয় না। এই দিন “ভালোবাসি” বলে দিলাম।

বা, অফিস নিয়ে ব্যস্ত বেশ। পাশের জেলা থেকে আসা হয় না। দেখা করব করবো ভেবেও করছি না। এই দিন না হয় ছুটি নিয়েই দেখা করলাম। অথবা, কখনও দেখাই হয় নি।

বুঝতেছিও না যে তাকে রাজি করাতে পারবো কী না। এই দিন দেখা করতে বললাম। অথবা, বছর পাঁচেক প্রেম করে রিলেশন বোরিং হয়ে গেছে। এই দিনকে টার্গেট করে আবার আগের মত গিফট দিলাম না হয়, লাভ কার্ড দিলাম। স্বামী স্ত্রী বা বিবাহিত কাপলের সংখ্যাই ত সবচেয়ে বেশি।

এই দিন টার্গেট করে তাদের রোমান্টিসিজম না হয় আরেকটু বাড়লো। সমস্যাটা কই ? আরে ভাই, প্রেম উদযাপণ মানে ডিস্কো না আবার বৃক্ষের প্রতি ভালোবাসাও না। আপনি বলতে পারেন যে, সারা বছরই ত প্রেম করতেছ, একদিন ন্যাকামি না করলে না? আরে ভাই, এইটা ত প্রেম করার দিন না। প্রেমকে উদযাপন করার দিন। গাছ কী ফেব্রুয়ারির ১৩ তারিখ বুঝে ফুল ফুটায়? ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক সেদিন ত পহেলা বসন্ত।

আপনার সামনে গরু জবাই করল, সেই মাংস খেলেন আর কুরবানীর ঈদে মাংস খেলেন দুইটা কী এক জিনিস নাকি? প্রত্যেকটা দিবসের আলাদা ইমেজ আছে। শুধু প্রেমিক প্রেমিকার দিন হিসেবে থাকলে ঢালাও প্রচারটা কম হবে। বিজনেস হয়ত কমে যাবে। তাই এসব পুঁজিবাদী টেকনিক। আরে ভাই, ১৪ ফেব্রুয়ারিকে “পবিত্র দিন” হিসেবে ত কেউ ঘোষণা করতে বলে নাই।

এটা না হয় বড়ো দের “ছিঃ ছিঃ দিন”, হুজুরদের “গজবের দিন” বা অপবিত্র দিন হয়েই থাকুক; তাও নর নারীর স্বাভাবিক ভালবাসার নামে একটা দিন দেন। এগুলা বললে যারা সিঙ্গেল (এখন আমি নিজেও) তারা ক্ষেপে যায়, “তবে রে, ভালোবাসা দিবসে আমরা কি ভেসে আসলাম? আমাদের কিছু না?” আহা, বৃক্ষ রোপণ সপ্তাহে কারও চিন্তা নাই যে কয়টা গাছ লাগালাম, কিন্তু ভ্যালেন্টাইনস ডে তে কী করবে সে তা নিয়ে ক্ষেপে অস্থির। কাকে প্রপোজ করা যায়, কার সাথে ঘুরা যায়- উহ, কি দক্ষ যজ্ঞ। সুস্থ স্বাভাবিক প্রাপ্তবয়স্ক বিবাহিত ও অবিবাহিত সকল প্রেমিক প্রেমিকাকে নিজেদের অনুভূতি উদযাপন করবে কীনা য়ার করলে কীভাবে; সেই ডিসিশান নেয়ার জন্য ১৪ই ফেব্রুয়ারিটা আসেন তাদের নামে ছেড়ে দেই। পশু-পাখি-বৃক্ষ, পুলিশ-আসামী, প্রতিবেশি, বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়া, আত্মীয় স্বজনকে আমরা রেগুলার স্বাভাবিক ভাবে ভালবেসে যেতে পারি।

যে কোন দিন উদযাপন করতে পারি। সেটার জন্য বেচারা ভ্যালেন্টাইনের চিঠির দরকার নেই আমাদের। সেই ভ্যালেন্টাইনের চিঠির ভালোবাসাকে আসেন তার জায়গাতেই বরং রেখে দেই। এবারের ভালোবাসা দিবসে কাপলরা ঠিক করলো তারা উদযাপন করবে শাহবাগে যেয়ে, রাজাকারদের বিরুদ্ধে যেয়ে। এই উদযাপনটাই ত এই ভালোবাসা দিবসের লক্ষ্য।

 ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।