আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঢাকা শহরের পরিচ্ছন্নতা : কার কী করণীয়ঃ

সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............

ঢাকা শহরের পরিচ্ছন্নতা : কার কী করণীয়ঃ পরিচ্ছন্ন ঢাকা শহর কে না চায়? ঢাকা শহরে যারা বসবাস করে তারা তো চায়ই, এমনকি বাংলাদেশের অন্যান্য শহরের লোকও পরিচ্ছন্ন ঢাকা দেখতে চায়। ঢাকা তাদের রাজধানী, তাই রাজধানীকে পরিচ্ছন্ন দেখার সাধ কার না হয়! অন্যদিকে বাংলাদেশের সকল শহর থেকেই বিভিন্ন সময়ে মানুষকে বিভিন্ন কাজে ঢাকা আসতে হয়। তাই পরিচ্ছন্ন ঢাকা শহর তাদের কাম্য হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু এ কথা সকলেই স্বীকার করবেন যে, ঢাকা শহর মোটেও পরিচ্ছন্ন নয়। আমি আজকের লেখায় শুধু পরিবেশগত দিকই আলোকপাত করছি।

ঢাকার অন্যান্য সমস্যা অর্থাৎ ক্রাইম রেট, ছিনতাই-রাহাজানি ইত্যাদি কোন কিছুই আজকের বিষয়বস্তু নয়। পরিবেশের মূল তিনটি দিক নিয়েই আজ লিখতে চাই। প্রথমতঃ ধূলাবালি, দ্বিতীয়তঃ কালো ধোঁয়া, তৃতীয়তঃ ময়লা-আবর্জনা। এই তিন প্রকারের বিশেষভাবে চিহ্নিত পরিবেশ দূষণ বস্তু ঢাকাকে করে রেখেছে অসহায়। এই তিন প্রকারের বস্তু ঢাকার জন্যে নতুন কোন দ্রব্য নয়, পৃথিবীর সকল শহরের জন্যেই অবধারিত এই তিন বিশেষ উপাদান।

আমি একে একে এই তিন প্রকারের বস্তুর সমাধানের লক্ষ্যে এবং পরিচ্ছন্ন ঢাকাকে ফিরিয়ে আনার কৌশলগত ও প্রায়োগিক দিক বিশ্লেষণ করব। প্রথমেই ধূলাবালি নিরসনে সমাধানের দিক-নির্দেশনা। খুব সহজেই ধূলাবালির হাত থেকে ঢাকা শহরকে এবং একই সূত্রে অন্যান্য বড় শহরগুলোকে রক্ষা করা যেতে পারে। ঢাকা শহর একটি ঘনবসতিপূর্ণ শহর। খালি জায়গা এখানে খুব একটা নেই বললেই চলে।

শহরে ধূলাবালি পরিষ্কার করার কাজটি সহজেই সম্পন্ন করা যেতে পারে। ধূলাবালির উৎপত্তির স্থান খোলা জায়গা- যেখানে শুধু মাটি থাকে। শহরের বড় বড় রাস্তার পাশে একচিলতে করে খালি রাখা হয়েছে, যেখানে আছে শুধু মাটি। অন্যদিকে মানুষের বাড়ির আঙ্গিনায় এবং আশেপাশে খালি মাটি রয়েছে। আর এই খালি জায়গা থেকেই ধূলাবালির জন্ম।

সরকার এদিকে একটু নজর দিলে এবং ঢাকা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন কার্যকরী ব্যবস্থা হাতে নিলেই এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। শহরে দু'ধরনের সম্পত্তি আছে- প্রথমটা ব্যক্তি মালিকানায় এবং পরেরটা সরকারী মালিকানায়। ব্যক্তিমালিকানায় যেসব খালি জায়গা আছে, সেসব জায়গাগুলোকে সম্পত্তির মালিক নিজ খরচে ঘাস লাগিয়ে অথবা পাকা করে ঢেকে দিতে পারে। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি তার জায়গাতে খালি মাটি খোলাভাবে রাখতে পারবে না এমন একটি আইনের প্রয়োজন হবে। প্রত্যেকে যদি তার নিজ বাড়ির খোলা আঙ্গিনায় খোলা মাটি না রেখে সেখানে ঘাস অথবা ইটা-বালু দিয়ে পাকা করে রাখে, তবে তার সম্পত্তি থেকে ধূলা ছড়াবার পথ পাবে না।

এরপর সরকারী জায়গায়ও একইভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। পাকা রাস্তার পাশে যে জায়গাটুকুতে খোলা মাটি আছে, তা ঘাস দিয়ে ভরে দিতে হবে অথবা কংক্রিট দিয়ে পাকা করতে হবে। এছাড়া সরকারী সম্পত্তির যেসব খোলা জায়গা আছে তা সরকারী খরচেই ঘাস লাগাতে হবে। এভাবে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল খোলা জায়গা যদি খোলা না রেখে ঘাস দিয়ে মুড়ে দেয়া যায়, তবে ঢাকা শহর একদিন ধূলাবালির হাত থেকে রক্ষা পেতে পারে। এতে শুধু প্রয়োজন মিউনিসিপ্যালিটির উদ্যোগ এবং প্রয়োজনীয় সংশোধনী আইন।

ধূলাবালির উৎপত্তিতে হাত দিতে পারলেই এই সমস্যার সহজ সমাধান হতে পারে। বিষয়টি খুব কঠিন কাজ নয়। সমস্ত উন্নত দেশেই এমন ব্যবস্থা করে ধূলাবালির হাত থেকে তাদের শহরকে রক্ষা করেছে। এমনকি বালির দেশ মধ্যপ্রাচ্যের শহরকে রক্ষা করেছে ধূলাবালি থেকে এমন পদ্ধতিতে। তাদের বসবাস করার জায়গাগুলোর চারপাশে ঘাস লাগিয়ে তারা শহরকে পরিচ্ছন্ন রেখেছে।

বালির দেশ মধ্যপ্রাচ্য যদি এমন ব্যবস্থায় সফলকাম হতে পারে, তবে সুজলা-সুফলা বাংলাদেশ কেন ধূলাবালির অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে না? এজন্য দরকার একটি উদ্যোগ এবং একটি সদিচ্ছা। সরকারের কঠিন একটি সিদ্ধান্ত এবং তার বাস্তবায়ন। ব্যাস, ধূলাবালি কেউ আর দেখবে না। রাস্তায়, মাটে-ঘাটে যেখানে খুশি সেখানেই খোলা খাবার খেতে আর কারো কোন অসুবিধা হবে না। শখের চটপটি খাওয়ার জন্যে আর মানুষকে পাঁচতারা হোটেলে যেতে হবে না।

রাস্তার পাশের দোকানে দাঁড়িয়ে নির্বিঘ্নে সকলেই চটপটি খেতে পারবে। এবার আসুন আমরা দ্বিতীয় সমস্যা সমাধানের কথা চিন্তা করি। কালো ধোঁয়ার হাত থেকে রক্ষা পেতে ঢাকা শহরের মধ্যে যেসব কল-কারখানা তৈরি হয়েছে, সেগুলোকে কোন শিল্প স্থানে স্থানান্তর করতে হবে। ইটের ভাটাই হোক, স্টিল বা কাঠের কারখানাই হোক- ঢাকা শহর থেকে এগুলো দূরে পাঠাতে হবে। বিশেষ করে যেসব কারখানায় ধোঁয়া নির্গত হয়, সেসব কল-কারখানা ঢাকা শহর থেকে সরাতে হবে।

সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে ঢাকা শহর কল-কারখানা শূন্য হবে- শহরের বাইরে চলে যাবে গার্মেন্টস, চামড়াসহ সকল কল-কারখানা। তবেই হতে পারে ঢাকা শহর কালো ধোঁয়ামুক্ত একটি পরিচ্ছন্ন শহর। টঙ্গী, সাভার, নারায়ণগঞ্জ, জিঞ্জিরা, শ্রীপুর ইত্যাদি অনেক এলাকায়ই ঢাকা শহরে অবস্থিত কল-কারখানাগুলো স্থানান্তর করা যেতে পারে। সরকারকে বিষয়টি অনুধাবন করতে হবে এবং ঢাকা শহর বাই-ল হিসাবে সমস্ত কল-কারখানা স্থানান্তর করার ব্যাপারে কার্যকরী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কল-কারখানার মালিকগণ নিজেদের ইচ্ছায় এসব স্থানান্তর করতে সম্মত নাও হতে পারে।

কিন্তু সরকার আইন করে সকলকে বাধ্য করলে বিষয়টি গতি পাবে এবং যথাযথভাবে কার্যকরী হবে। কালো ধোঁয়ার হাত থেকে শহরকে রক্ষা করার অর্থই হবে স্বাস্থ্যকর ঢাকা শহর, শ্যামল ঢাকা শহর, পরিবেশগত উন্নত ঢাকা শহর। লাভটা শুধু শহর নামে ভূ-খন্ডের নয়, পুরো লাভটাই উপভোগ করবে শহরে অবস্থিত মানুষগুলো। তাই সরকারের এমন মনোভাব এবং আদেশ-নির্দেশকে বাস্তবায়িত করার স্বার্থে শহরবাসীদের সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। তবেই তারা সুস্থ পরিবেশে বাস করতে পারবে।

পরিচ্ছন্ন পোশাক দীর্ঘ সময় ধরে পরিচ্ছন্ন রাখতে পারবে। তৃতীয় সমস্যার সমাধান সম্পূর্ণভাবে ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটির হাতে। পৃথিবীর অন্যান্য উন্নত অথবা উন্নয়নশীল যে কোন দেশের আবর্জনা পরিষ্কার করার যে কোন একটি আধুনিক পদ্ধতি অবলম্বন করলেই এই সমস্যার সহজ সমাধান সম্ভব। মিউনিসিপ্যালিটির গাড়ি এবং লোকজন শহরের কয়েকটি জায়গা থেকে নয় বরং প্রতিটি বাড়ির আঙ্গিনা থেকে ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করতে পারে। প্রতি সপ্তাহে একবার প্রতিটি এপার্টমেন্টের সামনে থেকে এবং সকল বাড়ির সামনে থেকে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করতে পারে মিউনিসিপ্যালিটির গাড়ি এবং শ্রমিকদল।

তাহলে আর পাড়ার সকল বাড়ির লোকজন রাস্তার পাশে এক জায়গায় প্রতিদিন ময়লা ফেলে রাস্তার লোকদের দুর্গন্ধ উপহার দিতে পারবে না। মিউনিসিপ্যাল সপ্তাহের সাতদিনই কাজ করবে, তবে পূর্ব থেকে নির্দিষ্ট করে দেবে কোন দিন কোন এলাকার ময়লা নিয়ে যাবে। সেই অনুযায়ী ঐ অঞ্চলের লোক নির্দিষ্ট দিনে ময়লা-আবর্জনা বাইরে রাখবে। তবে মিউনিসিপ্যালিটির আরো একটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে- বাড়ির বা এপার্টমেন্টের লোকজনকে সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনের সকালেই খোলাভাবে নয় বরং কোন ব্যাগে ভরে বাড়ি বা এপার্টমেন্টের সামনে রাখতে হবে। ব্যাগের মুখ বন্ধ করে রাখতে হবে যাতে ময়লার গন্ধ বাইরে যেতে না পারে।

প্রতিটি দেশেই ময়লা ভরার অনেক রকম ব্যাগ আছে। মিউনিসিপ্যাল কর্তৃপক্ষের ঠিক করতে হবে জনসাধারণ ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্যে কোন ধরনের বা কি প্রকারের ব্যাগ ব্যবহার করবে। মিউনিসিপ্যাল কর্তৃপক্ষ সতর্ক বিবেচনায় নিলে, প্রয়োজনীয় ট্রাক এবং লোকবল বৃদ্ধি করলে, প্রয়োজনীয় নির্দেশ আইন অনুসারে জনসাধারণের মাঝে পৌঁছে দিলে এবং সর্বোপরি সঠিক কাজের তদারকি করতে পারলে ঢাকা শহরকে দুর্গন্ধময় করার সবচেয়ে বড় উপাদান এই ময়লা-আর্জনার দুর্গন্ধ ও জঞ্জাল থেকে শহরের মানুষকে রক্ষা করতে পারবে। কাজটি মোটেও শক্ত নয়, তবে পরিকল্পনাটি শক্ত এবং বাস্তবায়নটি তদারকিও করতে হবে শক্ত হাতে। তবে এক্ষেত্রে একটি বাড়তি খরচের প্রশ্ন উঠবে।

খরচ যোগাবে জনগণই। মিউনিসিপ্যাল ট্যাক্স সঠিকভাবে জনগণের কাছ থেকে আদায় করতে হবে। দুর্নীতি না করে সততার পথে এই ট্যাক্স আদায় করতে পারলে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের বাড়তি খরচ মেটানোর পথ পাওয়া যাবে। ঢাকা শহরের পরিচ্ছন্নতা রক্ষা বা ফিরিয়ে আনার বিষয় নিয়ে এতক্ষণ আলোচনা করলাম। ঢাকা শহরের পরিচ্ছন্নতা রক্ষার বিষয়টি সফলতা লাভ করলে সেই উদাহরণ কাজে লাগিয়ে দেশের অন্যান্য শহরগুলোও পরিচ্ছন্নতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

আমরা পরিচ্ছন্ন ঢাকা শহর চাই, পরিচ্ছন্ন সকল শহর চাই- এই হোক আমাদের আজকের শ্লোগান এবং দৃপ্ত শপথ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.