আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কেমন আছি সৌদি আরবে –দশম পর্ব

স্বাগতম

কুয়েত ও ইরাক বর্ডারে কাজ করতে গিয়ে বেশ কয়েকটা নুতন অভিজ্ঞতা হয়েছিল। আমাদের এক সিমেন্ট বালু সাপ্লায়ার ছিল স্থানীয়লোক বা বেদুঈন। তার ছিল অনেক উট,তারা উটকে বলে জামাল। একদিন আমাকে সে উটের দুধ খাওয়ার আমন্ত্রন জানালেন। প্রথমে আমি অরুচিকর বলে প্রত্যাহার করলাম,কিন্তু সে নাছোর বান্দা আমাকে খাওয়াবেই।

সে বলে এই হালিব(দুধ)খেলে নাকি দেহের শক্তি ও সেক্স বেড়ে যায়!তখনো বিয়ে করিনি তাই চলে গেলাম হালিব জামাল খেতে!সকালের দিকে ওর বাসায় গিয়ে দেখি আমার অপেক্ষায় বসে আছে। আমাকে দেখেই তাদের রীতি অনুযায়ী আহলান ইয়া মোহনদিস বলে দুই গাল ও নাকে নাক ঠেকালো। তারপর বসতে দিয়েই খেজ়ূর ও দুই জগ দুধ সামনে রাখলো। সে আমার দিকে খেজুর এগিয়ে দিল আমি দুতিনটা খেলাম। তারপর পুরো একটি জগ আমার হাতে ধরিয়ে দিল!আমি অবাক,গ্লাস নেই মানে পুরোটাই কি আমাকে খেতে হবে!সত্যিই বুড়ো বললেন দুটোই তোমার জন্য!! আমি অনেক কষ্ট করে দেড় জগ খেলাম,দুধটা কাচা মানে জ্বাল না দিয়ে ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করা।

স্বাধ মোটামুটি তবে গন্ধটা অন্যরাকম,মনে মনে ভাবলাম উটের মতো শক্তি হয়ে গেলে কি করবো?তারপর বুড়োকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিয়ে চলে গেলাম সাইট ভিজিটে। হু ,মাত্র ত্রিশ মিনিটও পার করা গেলনা,খবর হয়ে গেল। টয়লেটে বসে মনে হলো নাড়ীভুরি সবই বেরিয়ে আসছে। পেটের ভেতরে সেদিন তরল জাতীয় কোন পদার্থ আর বাকি ছিলনা। যাই হোক সরকারী ক্লিনিকে দৌড়ালাম, সেখানে সুদানী ডাক্তার আমার কথা শুনে কোন ঔষধই দিলনা।

বললেন একবার হয়েছেতো আর হবেনা। তোমার পেট এখন সম্পূর্ন ক্লিন হয়ে গিয়েছে। কাল থেকে আরো খাবে কিচ্ছু হবেনা। সত্যিই তাই,আমি আরো অনেকবার সেই কাচা হালিব খেলাম,কিন্তু আর পেট খারাপ হয়নি। সেই আল-রোকি এলাকায় থাকতেই আমার বন্ধুত্ব হয়েছিল দিরদিরি নামের এক সুদানী স্কুল টিচারের সঙ্গে।

তিনি আমার সঙ্গে অবসরে অনেক গল্প করতেন,এক রোজাতে তিনি আমাকে ইফতারের দাওয়াত করলেন। সময়মতো তার কোয়ার্টারে পৌছে গেলাম। প্রায় ত্রিশ চল্লিশ জন সুদানী বাসার বাইরে কার্পেট বিছিয়ে বসেছে,আমি একাই হয়তো ভিনদেশী!আমি সেখানে বসে থাকা সবগুলো লোকের সঙ্গে একে একে হাত মিলিয়ে পরিচিত হয়ে এক স্থানে বসে গেলাম। তাদের মধ্যে চার পাচজন দৌড়াদৌরি করে হরেক রকমের বাহারি খাবার সামনে সাজিয়ে রাখছিল। সেখানে তিন চার রঙের সরবতসহ অনেক খাবার।

আমি যে কাউকে জিজ্ঞেস করবো কোনটা কি খাবার,সেই মানুষটাও নেই। দিরদিরি কাজে ব্যস্ত,পাশের দুজন গরিলার মতো দেখতে তাই কথা বলতে মন চাইলোনা। অবশেষে আজান শোনা গেল। ইফতারের জন্য আমার সামনে রাখা সাদা রঙের সরবত(ভাতের ফেনের মতো) মুখে দিলাম,কোন স্বাধ পেলামনা,লাল রঙ্গেরটা(রুহু আফজার মতো) নিলাম একটূ টক টক লাগোলেও স্বাধ লাগছে। সঙ্গে খেজুরটাই বেশি খাচ্ছি।

দিরদিরি দূর থেকে এসে বেশ মোহাব্বতের সঙ্গে এগিয়ে দিল দুম্বার ছোট ছোট টুকরা করা কাচা কলিজা সঙ্গে লবন। আমি দূর থেকে আগেই লক্ষ্য করছিলাম এই জিনিষটা তারা লবন মাখিয়ে খুব মজা করে খাচ্ছিল। হয়তো আমার চাহনি দেখে ভেবে থাকবে আমি ওটা খেতে চাচ্ছি!অবস্থা দেখে আমার বমিবমি লাগা শুরু হলো,দিরদিরেকে বললাম আমি মসজিদে নামাজ পড়তে যাচ্ছি,ফিরে এসে বাকিগুলো খাব। ওখানে বাকি আর কি কি অখাদ্য ছিল তা না দেখেই ভাগরে মামা ভাগ!!! গিরগিট ধরার জন্য দৌড় গিরগিটের গর্ত শিকার ধরে ফেলেছে আল-খুবার থেকে কোম্পানীর এক সৌদি কর্মচারী এলো দু তিনদিন থেকে কাজ দেখে যাবে বলে। তার নাম খাফের মজা করে তাকে আমি কাফের বলতাম।

তিনি এসেই খোজা শুরু করলো গূইসাপের মতো ছোট ছোট প্রাণী। জিজ্ঞেস করে জানলাম এর মাংস খেলে নাকি সেক্স বেড়ে যায়!!তাই সে এসেছে এগুলো শিকার করে খেয়ে যেতে!এই প্রাণীগুলো সাধারনত মরুভূমির মাটির নিচে বাসা করে থাকে, খুব গরমে বাইরে চলে আসে। তখন দৌড়ে দৌড়ে এই গিরগিটকে ধড়তে হয় এছারা রাতের বেলা মাটির নিচ থেকে ধরে আনাও বেশ সহজ। এই শিকার মিশনে তার সঙ্গে যোগ দিলেন কিছু ইয়ং আর্মী,যাদের ক্যাম্পে আমাদের লেবাররা থাকতো। একদিন সকালে ক্যাম্পে গিয়ে দেখি প্রায় বিশ পচিশটা গিরগিট ধরে এনে বেধে রেখেছে।

এগুলো তারা পরেরদিন রাতে নাকি রান্না করে খাবে! আমি তখনই মালিকের নিকট ফোনে বিস্তারীত জানিয়ে দিলাম যে, খাফের এখানে এসে কি কাজ করছে!ব্যস পরদিনই খাফের আমাকে দোষারোপ করতে করতে আল-রোকি ত্যাগ করলেন! আল-রোকির মরুভুমিতে আলু জাতীয় একটা ফল পাওয়া যায়। শীতের দিনে যখন বৃষ্টি হয় তারপর মাটিতে একটু একটু সবুজ ঘাস দেখা যায়। ঠিক তখন এগুলো মাটি ফুরে উপড়ে চলে আসে। আর এই আলু(স্থানীয় নাম ভুলে গেছি)উঠানোর জন্য কুয়েতী ও সৌদিরা নো মেন্স ল্যান্ডে প্রচুর ভীর করে। তারা হাতে একটা কাঠি নিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে মাটির নিচ থেকে আলু খুজে বেড়ায়।

এই আলু যত বড় হবে ততোই নাকি ভাল। আল-রোকির ফুটপাতে এই আলু অনেককেই বিক্রি করতে দেখেছি ২০০ রিয়াল কিলো!ঘটনা কি?হ্যা এখানেও সেই আলুর দোষ!এটা খেলে নাকি –বেড়ে যায়!! পাদটীকাঃ ঘটনাকাল ছিল ১৯৯২ সাল। আজও তারা এগুলো খুজে বেড়ায় কিনা জানিনা। কারন ইতিমধ্যে ভায়াগ্রা এসে গিয়েছে তাই নো মেন্স ল্যান্ডের তারকাটার বেড়া ডিঙ্গানোর চেয়ে ঔষদের দোকানে লাইন দেয়াই হয়তো ভাল মনে করে!মানি যেখানে নো প্রবলেম!! (চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.