আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্রেনড্রেন, মেধাপাচার, অত:পর বুয়েটের পোলাপাইনের ব্লগানি বন্ধ করা হোক

Let the wind blow out the candles
পোস্টে কথায় কথায় কেন বুয়েটের আমদানী হল, সেটা পোস্টের শেষের দিকে বোঝা যাবে। পোস্ট ঈষৎ এডিট করা হোল। আর মোটামুটি সবাই মন্তব্য করে ফেলেছেন - তাই আর মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না। মন্তব্যের বিষয়বস্তু অফটপিকে চলে যাচ্ছে বুয়েট সহ দেশের অন্য সরকারী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রছাত্রীরা যেই বেতনে পড়ে আসছে সেটা পুরোপুরিই সরকারী খরচে। বলা যায় দেশের জনগণের টাকায় এইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছেলেমেয়েরা পাশ করে বের হচ্ছে।

প্রতিবছর এইচ.এস.সি পরীক্ষার পরই ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যে ভর্তিযুদ্ধ নামক মানসিক যন্ত্রণাটা শুরু হয় তার মূলে কি তাহলে সরকারী খরচে এইসব প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগের জন্য? নাকি ছোটবেলার ইচ্ছা/ সত্যিকার অর্থেই কিছু জানার জন্য? এটা মোটামোটি সবাই স্বীকার করবে প্রাইভেট ভার্সিটির চেয়ে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় গুণগত মানে অনেক এগিয়ে। এজন্য দেখা যায় এইচ. এস.সি পাশ করা ৮০% ছেলেমেয়েই ভর্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির সময় সরকারী মেডিক্যাল/ইন্জিনিয়ারিং কে প্রথম চয়েজে রাখে। তাহলে মেডিক্যাল আর ইন্জিনিয়ারিং- এই ভেদাভেদটা কেন তৈরি হোল? দুইটাই তো সরকারী! দুটোতেই পড়লে নামমাত্র বেতনে পড়া যাবে। আসল কথাটা হল এতে টাকার ভূমিকাটা গৌণ, নিজের/পরিবারের ইচ্ছাটাই সবসময় বড় হয়ে দেখা যায়। এমন অনেক পোলাপান আছে ইন্জিনিয়ারিং পড়াটাই শখ, সরকারী ভার্সিটিতে চান্স পায়নাই, তাতে কি? প্রচুর টাকা দিয়ে হলেও প্রাইভেটে পছন্দের সাবজেক্ট পড়ছে।

এমনকি এই লিস্টে আছে গ্রাম থেকে জমিজমা বিক্রি করে এন.এস.ইউ তে পড়তে আসা অনেকেও! তাহলে উচ্চতর লেভেলে পড়াশোনার আসল নিয়ামক কোনটা? অবশ্যই নিজের শখ/ইচ্ছা। এসব কথা এই পোস্টের মূল বিষয়বস্তু নয়। শিরোনামে ব্রেনড্রেনের কথা আছে, তাই ঐদিকাটায় একটু যাই। স্কুলে যখন পড়তাম, ব্রেনড্রেন নিয়ে লিখতে হত। তখন অবাক হতাম, আসলেই তো! দেশের মানুষের টাকায় শিক্ষিত মেধাবীগুলো কেমন অবলীলায় (নিজের ইচ্ছাতেই) মেধা পাচারের শিকার হচ্ছে! ওদের কি দেশপ্রেম বলে কিছু আসলেই নেই! মেজাজ খারাপ হত বিদেশ পালানো ওদের ওপর।

স্কুল-কলেজের পাট চুকিয়ে আসলাম। সামনে ভার্সিটি এডমিশন। টেনশনে আর চিন্তায় মাথার চুল সব পড়ে যাবার অবস্থা। আমার চয়েজ ছিল ইন্জিনিয়ারিং পড়া। বুয়েট ছিল পছন্দের লিস্টে প্রথমে।

কেন? কারণ- বুয়েট ইন্জিনিয়ারিং এর বড়ভাই (আমার মতামত না - Click This Link) আসল কথা সেটা না। সবচেয়ে ভালোটায় পড়ার ইচ্ছা সবারই থাকে, আমারো ছিল। টেনশন ছিল - ৬০০০ প্রতিদ্বন্ধীকে কাটিয়ে কিভাবে ৮০০ জনের মধ্যে জায়গা করে নেব। মেডিক্যালের স্বপ্ন আগেই বাদ দিয়ে দিয়েছি, কারণের মধ্যে একনাম্বারটা হল মেডিক্যালের পড়াশোনার অমানুষিক চাপ, দ্বিতীয়টা হল মেডিক্যালের প্রতিদ্বন্ধীদের সংখ্যা দেখে হার্টফেল করার অবস্থা। ব্রেনড্রেনে ফিরে আসি।

আল্লাহর রহমতে বুয়েটে টিকে গেলাম। একদিন এক বড়ভাই এর বাসায় কথাবার্তা হচ্ছিল। ভাইয়া বলল পাশ করে যত তাড়াতাড়ি পারো ভাগো এদেশ থেইকা! আমার মেজাজ খারাপ হোল। ভাইয়াকে ধরলাম, এইডা কি কন! দেশের মানুষের টাকা দিয়ে পড়াশোনা করে ........ কাহিনী অন্যখানে। বাইরে যাবে না কেন! আসলেই তো।

ইন্জিনিয়ারিং থেকে পাশ করা ছেলেমেয়েদের কয়জনের চাকরির নিশ্চয়তা সরকার দিচ্ছে? আর যাদের চাকুরী দিচ্ছে তাদের চাকুরীগুলোর মানও তো দেখতে হবে? কম্পিউটার ইন্জিনিয়ারিং এ পাশ করার পর কাওকে যদি নেটওয়ার্ক এডমিনিস্ট্রেটরের জব দেওয়া হয়, তার চার বছরের মাথার চুল উপড়ে ফেলে শেখা প্রোগ্রামিং, ডেটা স্ট্রাকচার, কম্পাইলার আর অপারেটিং সিস্টেমের জ্ঞান কি কাজে আসবে? এখানে যেইটা উদাহরণ দিলাম সেটা কথার কথা। কম্পু সাইন্সে পড়ি দেইখা এটার উদাহরণ দিলাম, সেটা অন্যান্য সব ডিপার্টমেন্টের জন্যও সত্য। আর বুয়েটের (পড়ুন ইন্জিনিয়ারিং) পোলাপান দেশকে কি দিল? এদের তো ব্লগেই দেখা যায়! মুভি দেখে। আজব! দেশের মানুষের টাকা দিয়া এই করতে পোলাপাইন গুলারে বুয়েটে পাঠানো হৈছে! আরে ভাই মুভি দেখে ঠিক আছে, বুয়েটের (পড়ুন ইন্জিনিয়ারিং) পোলাপান দেশকে কি দিল সেটা কয়জন জানার সুযোগ পাচ্ছে? আবার কম্পুতেই ফেরত আসি, (নিজের ডিপার্টমেন্ট তো, এইডা নিয়াই ভালোমত জানি আর কি) টানা ১১ বছর ধরে এ. সি এম এর ওয়ার্ল্ড ফাইনালে যাবার মত ভার্সিটি কয়টা আছে? বুয়েট। এই রেকর্ড আমার জানামতে ৫ টা ভার্সিটির বেশি নাই।

সঠিক তথ্যটা জানাতে পারলে আরো ভালো হত। এসিএম এর প্রবলেম সেটারের মধ্যে বাংলাদেশি কয়জন সেটা দেখলেও গর্বের বিষয়। এখন এইসব প্রোগ্রামাররা দেশে থেকে কি তাদের লেভেলের চাকুরী করতে পারবে আপনিই বলেন? তারচেয়ে বাইরে গিয়ে দেশের মান উজ্জ্বল করুক (যেমন রাগিব ভাই), সেটাই কি ভালো নয়? মেধা দেশে থেকে পচে নষ্ট হবার চেয়ে বাইরে গিয়ে কাজে লাগুক। এটাই এখন বিশ্বাস করি। তবে বাইরে গিয়ে যারা দেশকে ভুলে যায়, দেশের নাম শুনলেই বলে দেশ তো গোল্লায় গেল, পালায়া বাচছি - এদের নিমকহারাম ছাড়া অন্য কিছু বলার নাই।

এখন একটু অন্যদিকে ঘুরান দিয়া আসি! পোস্টের লেখকের কিছু কথা কোট করলাম- উদাহরন হিসাবে এই সামুর হাটের কিছু বুয়েট পড়ুইয়া পোলাপানের কথা কওন যায়। "হাম কি হনুরে" নামক একটা বোঁটকা গন্ধ এগো লেখা ব্লগ আর এগো করা মন্তব্যে সব সময়ই দেখা যায়। পড়ালেখা এখনো শেষ হয় নাই, তার পরেও কত দেমাগ। ঠিকমত পাশ কৈরা বাইড় হৈলেতো আর আশ পাশ দিয়া যাওন যাইবো না। এইটাই কি এগো শিক্ষিত হওনের নমুনা? পড়ালেখা এখনো শেষ হয়নাই, তার পরেও কত দেমাগ তাইতো, বুয়েটে পড়, আবার ব্লগিং কি? পড়তে বয়! ব্লগে ভাব মারা যাইবো না।

ব্লগে ভাব মারুম খালি আমরা প্রগতিশীলরা, তথাকথিত নাস্তিক, অখাদ্য কোবতের জন্মদাতা কাক ও কবি আর লুল - ফুলবানুরা, বুয়েটের পোলাপাইন দুরে গিয়া পড়! এই প্রসঙ্গে বেশি কিছু কইতে চাইনা। ব্লগে তো হামবড়া'র অভাব নাই, তার মধ্যে দু'একটা লজিকালি বুয়েটের হৈবই। এরা বুয়েটে পড়ে দেইখা ভাব মারে তা না, MIT (মগবাজার ইনস্টিটিউট অব টেখনোলঝি) থেইকা পড়লেও ভাব মারত। যেমন মারে আমাদের ব্লগের প্রগতিশীলেরা, নাস্তিকতার মুখোশে ঢাকা কিছু কীটবিশেষ, আর স্বঘোষিত পোস্ট-মর্ডার্ন কবিবৃন্দ। এরা হক্কলেই বুয়েঠ থেইকা বারহৈছে নাকি? জানতাম নাতো শেষে কয়েকটা রিয়েল-লাইফ কাহিনী, প্রথমটা বন্ধুর, পরেরটা নিজের।

যা বুঝার কাহিনী থেইকাই বুইঝা লন। ঐ পোস্টের লেখকের জন্য বিশেষভাবে প্রযোজ্য। বন্ধু'র সাথে একলগে পড়ছি স্কুল, কলেজে। শেষে দুর্ভাগ্যক্রমে ভার্সিটিতে আসার পর একসাথে আর থাকা হোলনা। বন্ধু বলে, দোস্ত, বুয়েটের পোলাপাইন পাইলেই পিটাইতে ইচ্ছা করে তোর লগে কারো গেন্জাম হৈলে খবর দিস।

আমি জিগাইলাম, ক্যান। যদিও কারণটা আমার জানা। দোস্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলে কয়, জানস-ইতো। সেই দোস্ত টানা একবছর আসেনাই বুয়েটে। শেষে জোড় করে একটা কনসার্টে নিয়া আসছি।

এখন সে স্বাভাবিক। একদিন বুয়েটে আর্কির সামনে সবাই মিল্লা আড্ডা দিচ্ছিলাম। একজোড়া কাপল দেখে মেজাজ খারাপ হল (আঙ্গুর ফল টকজনিত কারণে) । জিগাইলাম, কিরে পিটাইবিনা বুয়েটের পোলাপান? দোস্ত চোয়াল শক্ত কইরা কয়, আবার জিগায়! শেষ কাহিনী নিজের। এটা ভার্সিটি প্রিপারেশনের সময়।

আই.বি.এ তে ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে গেলাম। আই.বি.এ পোলাপাইনের ভাবসাব দেখে টাশকি! পরীক্ষা দিলাম, চান্স পাইলাম না। (প্রিপারেশন নেই নাই সেটা বড় কথা না, চান্স পাইনি সেটা ফ্যাক্ট। ) এখন আইবিএ'র সামনে দিয়ে গেলে আমারো মেজাজ খারাপ হয়!
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।