আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাফ-প্যান্ট কালে :: শ্যাম দেশ ভ্রমণ (শুরু)

ঘুম
সে অনে---ক কাল আগের কথা। তখন বয়স আমার বাও কি তেও। আসলে আরো কম। পড়ি ৫ম অথবা ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে। ঢাকায় একটি বিদ্যালয়ে পড়তাম।

থাকতাম হোস্টেলে। বাবা, মা এবং আমার ছোট বোনেরা থাকত সৌদি আরবে। ৫ম শ্রেণীর আগ পর্যন্ত অবশ্য আমিও পরিবারের সাথে ওখানেই থাকতাম। হোস্টেল জীবন শুরু হবার পর থেকে ছুটিতে বছরে দু'বার সৌদি যেতাম এক মাসের জন্য। যাওয়া আসাটা হতো কখনো মা-বোনদের সাথে, কখনো পরিচিত অন্য কারো সাথে।

এরকম এক বারের কাহিনী... সৌদি গেলাম মা-বোনদের সাথে। ফেরার সময় একাই ফিরতে হবে। মুসকিল হলো কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তেমন যাঁর সাথে আমি আসতে পারি দেশে। অনেক খুঁজে শেষমেষ এক লোক পাওয়া গেল যিনি ওখানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। তার ডেরায় গিয়ে মুখোমুখি পরিচিত হলাম।

ঠিক হলো যে উনি বিমানবন্দরে গিয়ে আমার দায়িত্ব বুঝে নিবেন। এদিকে বাবা উনার উপর ঠিক ভরসা করতে পারছিলেন না। একে তো অপরিচিত, তার উপর একটু অশিক্ষিত মানুষ - কী করতে গিয়ে আবার কী করে বসেন। তো, পরে এক পরিবার খুঁজে পাওয়া গেল যারা একই বিমানে দেশে ফিরবেন। ঐ পরিবারের কর্তা ভদ্রলোক আমার বাবাকে বললেন, "আরে আমাদের সাথে দিয়ে দেন, আমারও ছেলে পিলে যাচ্ছে সাথে, বাচ্চারা একসাথে মজা করতে করতে যাবে"।

শুনে আমিও খুশি। মনে হয় কাছাকাছি বয়সের দুজন পিচ্চি ছিলো। আমার যাত্রাকালীন অভিভাবক যে বদলে গিয়েছে সেটা আর ঐ শ্রমিক আংকেলকে বলা হয়নি। ( শুদ্ধ ভাষায় আর পারছি না গুরু। মাফ করবেন।

মোড বদলায়া ক্ষ্যাত ভাষায় হৈলো এইবার শুরু। ) (গোধূলী বেলায় কিং খালেদ বিমানবন্দরের ভেতরের ছাদ) বিমানবন্দরে গিয়া আর ঐ পরিবাররে পাইলাম না। কিন্তু ভাগ্যক্রমে সেই শ্রমিক আংকেল পাইলো আমগোরে। বাবা-মা-বোনদের কাছ থেকে বিদায় নিয়া উনার লগে ভিতরে ঢুকলাম। ওয়েটিং জোন-এ আমি বৈসা বৈসা উনার সাথে গল্প করতেসি আর এদিক ওদিক চোখ ঘুরায়া খুজতেসি সেই পরিবার টারে।

পিচ্চিগুলার সাথে খেলতে মঞ্চায়তেসিল। মাগার ভাগ্য সহায় হৈলো না। ছাতার এই বিমানবন্দরটা (উপরে তাকালে তো খালি ছাতাই দেখা যায় বিরাট বিরাট ) যেমন সুন্দর তেমনি বিশা-আ-ল। ঘোষণা আসলো সৌদি বিমানে উঠার জন্য। কী আর করা, ঐ আংকেল এর সাথেই হাঁটা দিলাম।

(খুব সুন্দর একটা (নাকি কয়েকটা? মনে নাই!) ঝর্ণা আছে) পেলেনে উঠার বোর্ডিং ব্রিজে ঢুকার আগে কাগজপত্র পরীক্ষা করার জায়গায় সেই পরিবারটিকে হঠাৎ দেইখা চিল্লায় উঠলাম - "আংকে-এ-ল!!!"। উনারা ঢুকে পরতেসে ততক্ষণে। খালি বললেন, "আসো, তাড়াতাড়ি আসো। "। বইলাই ভিতরে চইলা গেলেন।

সাথের আংকেল রে কৈলাম, উনাদের সাথে আমার যাবার কথা ছিলো, আমি উনাদের সাথেই যাবো। এদিকে চেকার ভদ্রলোক ইয়া মুটা এক কাললু। তারে দেইখাই আমার হাতে যা ছিলো সব কাগজই দিয়া দিলাম। উনি দেইখা কয়, "Are you alone? Nobody with you?"। বিপদ!!! আমি তাত্তারি পাশের আংখেল রে দেখায় কৈলাম, "I am with him. He is my uncle!"।

ব্যাটা মনে হয় আমার কতায় ভরসা করতে পারলো না। একটু আগে তার সামনে আইসাই তো একজনরে চিল্লাচিল্লি কৈরা ডাকাডাকি করসি। এখন আবার আরেকজনরে দেখায়া কৈতাছি, "আররে, আমি তো হের লগে, আমার চাচ্চু লাগে!"। তাই শিওর হবার লাগি উনি আমার নতুন চাচ্চু রে জিগাইলো, "Do you KNOW him?" আমি তখন ঐ আংকেলের দিকে তাকায়া নিজের মাথা আসমান-জমিন বরাবর জোরে জোরে ঝাকাইতেসিলাম যাতে উনি বলেন, 'Yes!'। উনি আমারে দেইখা এমন একটা ভাব কর্লেন যার মানে বুঝলাম, 'বাছা, তুমি ভয় পাইয়ো না।

আমি সব ম্যানেজ করতেসি!'। তো, উনি ঠিকঠাক মত তার নিজের মাথা উপর-নিচ জোরে জোরে ঝাকায়া কৈলেন, "Know, Know!" - মানে উনি বুঝাইলেন যে "চিনি, চিনি (আমি ইহারে চিনি)"। কিন্তু ইয়েস না বৈলা ইংরেজিতে চিনি চিনি কওয়াতে খটকা লাগলো। মনে মনে যা আশংকা করছিলাম তাই ঘটলো, ঐ মডু অফিসার বুঝলেন, "No! No!" মানে "না, না (আমি ইহারে চিনিই না!!!)"। আরে মর জ্বালা! কিয়ের মই্দ্যে দিয়া কী হৈলো!! মডু কাল্লু অফিসারও ক্যান জানি আমার দিকে তাকায়া হাইসা দিলেন।

(দিনের বেলায় ভেতরের ছাদ, ছোট ছোট ফাঁক দিয়ে আকাশ দেখা যাচ্ছে) এরপর, আংকেল এর কাগজ চেক কইরা তারে ছাইড়া দিয়া আমারে সৌদি অফিসার আংকেল কয়, "Please wait here."। আমি পড়লাম ফ্যাসাদে। ঐ দিকে আমার "Know No" চাচ্চু আমার অসহায়ত্বের দিকে চাইয়া কিছু কইতে গিয়াও কিছু না কইয়া নিজেই অসহায়ভাবে চইলা গেলেন। আমি এ কূল, ও কূল দু'কূল হারায়া এখন কোন কূলে গিয়া যে পড়মু সেটাই ভাবতেসি। মনে ভয় হৈলো আমারে ধৈরা এখন না আবার জেলে ঢুকায় দেয়।

একজনরে চিল্লায় ডাকসি, সে আমারে নেয় নাই। আরেকজনরে দেখায়া কৈসি আমি এর লগে কিন্তু সেই লোক কৈসে সে আমারে চেনে না। বিশাল এক ক্যারা কৈরা ফালায়সি। কোনও এক দিকে যে দৌড় দিয়া পালামু সেই উপায়ও নাই, কাগজ যে সব মডুর হাতে। কী হয় না হয় এই চিন্তায় তখন আমার সত্যিই কান্না আসতেসিল।

(এখন মাঝে মাঝে ভাবি, যদি সময় টা হৈতো ২০০১ এর পরে, আর যদি হৈতো আম্রিখার কোথাও, আর যদি আমার একটুশ খানি দাড়ি থাকতো!! তাইলেই হৈসিলো কাম। পরথম বাংগালী শিশু ধর্মীয় সন্ত্রাসী হিসেবে শহীদ হৈয়া বেহেস্ত নসীব হৈতে পারতো। ) (বেশি বড় হয়ে যাচ্ছে মনে হয়। এখানেই ইতি টানলাম। বাকিটা হয়ত আগামী পর্বে সমাপ্য।

) (চলবে ... ?)
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।