আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রথম পোষ্ট: “উনারা কি রাষ্ট্রদূত না রাষ্ট্রনায়ক”



নিকট অতীতে ভারতের প্রস্তাবিত টিপাইমুখী বাঁধ নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণীর বিশেষজ্ঞ, রাজনীতিবিদ তথা আপামর জনসাধারণের আশংকা ও অতি স¤প্রতি ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনে আগত ভিসা প্রার্থী বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণ সম্পর্কে ভারতীয় হাই কমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তীর উদ্ধত্তপূর্ণ ও দাম্ভিক বক্তব্য আমাদের সবাইকে মর্মাহত করেছে। উপরোক্ত দুইটি ঘটনাতেই আমাদের দেশের সরকার মৃদু প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেও একজন বিদেশী কুটনৈতিক এর এ ধরনের উদ্ধত্তপূর্ণ আচরণের প্রেক্ষিতে একটি দেশের সরকারের তাৎক্ষণিক যে মাত্রায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা বা বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত ছিল িঠক েস মাত্রায় প্রতিক্রিয়া আমাদের সরকার েদখায়িন। এই আচরণ যেন কুটনীতির বাইবেল “ভিয়েনা কনভেনশন” এর প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন। পিনাক বা অন্যান্য বিদেশী কূটনৈতিকদের পর্যায়ক্রমে এ ধরনের উদ্ধত্তপূর্ণ আচরণ প্রকাশের মনোভাব বা মনোবৃত্তির ক্ষেত্র কিন্তু হঠাৎ করেই গড়ে উঠেনি। আমার মতে এর জন্য আমরাই দায়ী।

আমি ব্যাপারটা একটু বিশ্লেষণ করতে চাই। প্রথমেই দৃষ্টি ফেরানো যাক, কূটনীতি বলতে আমরা কি বুঝি? “ভিয়েনা কনভেনশন”- এ কূটনীতিকে নিুোক্তভাবে সজ্ঞায়িত করা হয়েছে ঃ “Diplomacy is the art and practice of skillful handling of a situation without offending the citizens and governments of receiving countries. Diplomacy is a mechanism of formal, regularized communication that allows states to peacefully conduct their business with each other, leaving them to deal with their internal affairs without outside interference for promoting and defending their national interests”. One fundamental rule is diplomatic agents in the receiving states have to understand and appreciate that their purported activities must not interfere in internal affairs of a country. উপরের সংজ্ঞাটি থেকে আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন কূটনীতি কি বা একজন কূটনীতিবিদ এর কাজের এখতিয়ার কোন মাত্রায়। কিন্তু তাজ্জব ব্যাপার আমাদের দেশে কর্মরত বিদেশী রাষ্ট্রের কূটনীতিবিদদের কর্মকান্ড পর্যবেক্ষন করলে মনে হওয়া খুবই স্বাভাবিক যে, তাদের ক্ষেত্রে এটা হয়তোবা প্রযোজ্য নয়। রাষ্ট্রদূত ও রাষ্ট্রনায়ক এই শব্দ দুটির মধ্যে প্রায়োগিক ও অর্থগত উভয় ক্ষেত্রেই পার্থক্য বিস্তর। যেমন তফাত মূখ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রে।

কিন্তু আমাদের দেশে বিভিন্ন রাষ্ট্রদূতের আচরণ ও কর্মকান্ডের ক্ষেত্রে এই দুটি শব্দের মধ্যে কোন ভিন্নতা নেই বলেই মনে হয়। বাংলাদেশে অন্তত ৪৪ বা ততোধিক দেশের দূতাবাস বা কনসূল্যট দপ্তর রয়েছে। এ সকল দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত বা হাই কমিশনারদের সর্বোচ্চ পদমর্যাদা আমাদের দেশের সিভিল সার্ভিসের অতিরিক্ত সচিব এর সমপর্যায়ে। এদের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতের পদমর্যাদা অতিরিক্ত সচিব আর বাকী অধিকাংশ দেশের রাষ্ট্রদূতদের পদ মর্যাদা যুগ্ম সচিব। অথচ বাংলাদেশে এদের আচার আচরণ বা কার্যকলাপ দেখলে মনে হয় এরা সংশ্লিষ্ট দেশের রাষ্ট্রদূত নয় বরং রাষ্ট্রনায়ক।

বিশেষ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূত বা হাই কমিশনারদের কার্যকলাপ খুবই দৃষ্টিকটু। চিন্তা করা যায় অতিরিক্ত সচিব বা যুগ্ম সচিব-এর পদমর্যাদার হওয়া সত্ত্বেও এরা সার্বক্ষনিক পুলিশী স্কট নিয়ে চলাফেরা করে। স্বীকার করি বেশ কয়েক বছর আগে সিলেটে তৎকালীন বৃটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর উপর বোমা হামলা হয়েছিল। তাই বলে আমাদের বাংলাদেশের অবস্থা তো আর আফগানিস্তান, পাকিস্তান বা ইরাকের মতো নয় যে এখানে বিদেশীদের অবাধ চলাচল চরম ঝুঁকিপূর্ণ। ঐ সমস্ত দেশে রাষ্ট্রদূতেরা ঢাকা তথা সারাদেশে প্রতিনিয়ত দাব্রে বেড়াচ্ছে এমন এক ভাব নিয়ে যেন তারা সংশ্লিষ্ট দেশের “রাষ্ট্রনায়ক”।

এমনকি ভারতীয় হাইকমিশনার পিনাকও পুলিশী স্কট নিয়ে চলাচল করে। বর্তমানে পৃথিবীর একমাত্র সুপার পাওয়ার হিসেবে পরিচিত একটি দেশের রাষ্ট্রদূতের ব্যবহারকৃত বাহনটি খালি অবস্থাতে রাস্তা দিয়ে গেলেও পুলিশী স্কটসহ সাইরেন বাজিয়ে যায়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় যেন খোদ ঐ মুলুকের রাষ্ট্রপতি নিজেই যাচ্ছেন। চিন্তা করা যায়...........আমাদের দেশে তাদের গুরুত্ব কত উচ্চস্তরে। বলা বাহুল্য যে, এ পুলিশী স্কট নিয়ে চলাচলের অনুমতি আমাদের সরকারই তাদেরকে দিয়েছে।

তাছাড়া এ সকল রাষ্ট্রদূত প্রায়শঃই বিভিন্ন সভা, সেমিনার বা প্রেস সেশনে আমাদের দেশের রাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি বা আমাদের একান্ত আভ্যন্তরীন বিষয়ে যেভাবে মতামত বা কিছু ক্ষেত্রে সরাসরি নির্দেশনা প্রদান করেন যে, তাতে মনে হয় আমাদের দেশের নীতি নির্ধারক, রাজনীতিবিদ তথা আপামর জনসাধারণের মতামত বা ইচ্ছার কোন মূল্যই নেই। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় তারা যেভাবে বলবে আমাদের সেভাবেই চলতে হবে। তাদের এ ধরনের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে আমাদের যেন শুধু মাত্রই “জো হুকুম জাহাপনা” বলার অধিকার আছে। তাদের এই ধরনের আচরণ কূটনৈতিক নিয়োগের মূল সনদ “ভিয়েনা কনভেনশন” এর সরাসরি লঙ্খন। ভিয়েনা সনদে-এ পরিস্কার দিক নির্দেশনা দেয়া রয়েছে তা নিুরপ: Under the Vienna Convention, a diplomatic agent includes the head of the mission and the functions of diplomatic agents are described in Article 3 of the Convention which, among others, includes the following: 1. Promoting friendly relations between the sending state and the receiving state and developing their economic, cultural and scientific relations (লক্ষনীয় “রাজনীতি” শব্দটি বাদ দেয়া হয়েছে). 2. Ascertaining by all lawful means conditions and developments in the receiving state and reporting thereon to the government of the sending state. Further Article 41 of the Vienna Convention has specifically mentioned that diplomats "have a duty not to interfere in the internal affairs" of the receiving state” সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে এসব কূটনৈতিকদের মুখ থেকে নিঃসৃত উক্তি (প্রলাপ!) আবার আমাদের বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াতে খুব ফলাও করে প্রচার করে ।

কোন কোন অতি উৎসাহী প্রিন্ট মিডিয়া তাদের এই সব প্রলাপ “লিড নিউজ” আকারে ছাপায় আবার কোন কোন ইলেকট্রনিক মিডিয়া তাকে স্থান দেয় জাতীয় সংবাদের মূল শিরোনাম-এ। একজন বিদেশী কূটনৈতিক কি বললো তা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে না কখনই। জাতীয় সংবাদের প্রধান শিরোনাম থাকবে আমাদের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বা ঘটনাবলী। “সত্যি সেলুকাস- কি বিচিত্র এই দেশ”। যেখানে আমাদের দেশে সিভিল সার্ভিসে অতিরিক্ত বা যুগ্ম সচিব-এ সংখ্যা অর্ধ সহস্রাধিক যাদের কোন কর্মকান্ড বা মতামত-এর খবর আমারা কেউ রাখিনা সেখানে একই পদ মর্যাদার কূটনৈতিকদের (শুধুমাত্র বিদেশী বলেই) শিষ্টাচার বির্বজিত বক্তব্য বা বাক্যালাপকে আমরা কতই না প্রাধান্য বা গুরুত্ব দেই।

অথচ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নিয়োগকৃত আমাদের দেশীয় কূটনৈতিক বা রাষ্ট্রদূতদের কোন সংবাদ জাতীয় সংবাদের মূল শিরোনাম বা জাতীয় সংবাদ পত্রের লিড নিউজ হওয়া তো দূরের কথা বিভিন্ন প্রাদেশিক বা স্থানীয় সংবাদ পত্রেও স্থান পায় না। আমরা প্রায়শইঃ দাবী করি আমাদের দেশের মিডিয়া অনেক এগিয়ে গেছে। মিডিয়ার বদৌলতে যে কোন খবরই খুবই দ্রুততার সাথে আমাদের দেশের প্রতিটি আনাচে কানাচে পৌঁছে যাচ্ছে। এই মিডিয়াই দাবী করে সমাজ গঠনে এরা অগ্রদূত। অথচ আপনারা কখনও দেখেছেন বা শুনেছেন আমাদের দেশের কোন সাংবাদিক কখনও একটি বারের জন্য হলেও এসব কূটনৈতিক নামধারী বিদেশী বেনিয়াদের মনে করিয়ে দিয়েছে তারা যা বলছে বা করছে তা কূটনৈতিক শিষ্টাচার বর্হিভূত বা ভিয়েনা সনদের পরিপন্থি।

বাংলাদেশের আভ্যন্তরীন ব্যাপারে নাক গলানো তাদের এখতিয়ারভূক্ত নয়। শুধু সাংবাদিক কেন? আমাদের দেশের রাজনীতিবিদ, নীতি নির্ধারক মহল, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় তথা সরকার স্বয়ং তাদের এ ধরনের অযাচিত রাষ্ট্রনায়ক সুলভ আচরনের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করাতো দূরের কথা, উচ্চ বাচ্যও সচরাচর করে না। আমরা অতীতেও দেখেছি আমাদের দেশের অনেক রাজনীতিবিদ তাদের স্বীয় স্বার্থের জন্য এ কূটনৈতিকদের লেজুরবৃত্তিতে লিপ্ত হয়। কেন? কিসের ভয়??? আমাদের পূর্বসূরীরা এই দেশকে স্বাধীন করেছিলেন একটি রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। স্বাধীনতার ৩৮ বছর পরেও আমরা কি মেরুদন্ড সোজা রেখে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে অক্ষম? আমাদের মেরুদন্ড ভেঁঙ্গে গেছে কি? তাহলে কি পৃথিবীর বুকে মেরুদন্ড সোজা রেখে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে এ জাতির মেরুদন্ডে অস্ত্রপচার প্রয়োজন?? বিঃ দ্রঃ লেখালেখি অভ্যাস অনেক দিন ধরে, তা অবশ্যই নিজের ডায়েরীতে একাšতই নিজের জন্য।

কখনই লেখা অন্য কেউকে দেখানো বা কোথাও প্রকাশ করার ইচ্ছা জাগেনি বা ছিল না। কিšত্ত সামহোয়ার ইন ব্লগ-ই আমাকে উৎসাহিত করেছে আমার লেখা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে। তাই আজকে আামার এই প্রয়াস। -অপ্রিয়, ২৮ জুলাই ২০০৯

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.