আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার প্রথম খন্ডকালীন চাকুরীর প্রচেস্টা

সমাধান খুজছি

ঘটনাটি ছয় বছর আগের। ভার্সিটির নতুন ছাত্র। টিউশন তখনও যোগার করা হয় নাই। হঠাৎ একদিন পত্রিকায় নজরে আসলো একটি ডাটা এন্ট্র অপারেটর নয়োগ বিজ্ঞপ্তি। একটি ঠিকানা দিয়ে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তির শেষে অনভিজ্ঞদের বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। যেন আমাকেই খুজছে তারা! দ্রুত সেটি ছিড়ে নিলাম, চলে গেলাম বন্ধু বাপ্পি কে দেখাতে। সেও দারুন খুশী হলো। পরদিনই আমরা যাব ঠিক করলাম। খুব খুশী লাগছিল।

আমার ধারনা ছিল আমাদের চেয়ে যোগ্য কোন লোক তারা খুজেই পাবে না। তাছাড়া, এরা অনভিজ্ঞ লোক চেয়েছে, ঘাগু লোকেরা বাগড়া দিতে আসতে পারবে না। পরদিন দুপুরে খেয়েই রওয়ানা দিলাম। ঢাকার অলিগলি ভালভাবে চিনতাম না তখন। তাই রিক্সা থেকে আগেই নেমে বিভিন্ন দোকানে খোজ নিয়ে নিয়ে এগোচ্ছিলাম।

সর্বশেষ একটি চায়ের ঝুপরিতে জিজ্ঞেস করতে গিয়ে দেখি আরেকজন মাঝবয়সী লোক একই ঠিকানার খোজ করছে। বুঝলাম প্রতিদ্বন্দী। বাপ্পীর সাথে চোখে চোখে কথা হয়ে গেল। এই লোকের আগেই আমাদের পৌছতে হবে। কোন কথা না বলে দ্রুত হাটা দিলাম।

ঐ লোকের আগেই পৌছে গেলাম, ইয়াহু! প্রকাশিত ঠিকানাটি দেখলাম কোন অফিসের না, একটি ফ্ল্যাট বাড়ি, আসবাব পত্রও তেমন কিছু নেই। এত তাড়াতাড়ি এসেও দেখলাম প্রায় ৫০-৬০ জন লোক উপস্থিত। একটি টেবিলে নিয়োগকর্তার এক প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি নাম-ধাম জমা নিচ্ছিলেন। আমরাও নাম জমা দিলাম।

একটু পর দেখলাম দুইজন লোক বেশ উত্তপ্ত গলায় তর্ক করছে নিয়োগকর্তার প্রতিনিধির সাথে। সেখানে গিয়ে জানতে পারলাম, এই কোম্পানী(!) দুই পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এক পত্রিকায় লিখেছে অভিজ্ঞদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, অন্য পত্রিকায় লিখেছে অনভিজ্ঞদের অগ্রাধিকার। ব্যাপরটা বুঝলামনা, তাই বেশী মাথা ঘামালাম না। দশ জন দশ জন করে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ভিতরের একটি রুমে ডাকছিল।

আমাদের পালা আসলে আমরাও পরীক্ষা দিলাম। শিশুতোষ কিছু প্রশ্ন ছিল, যা সবাই পারবে। পরীক্ষার ফি হিসেবে ১০ টাকা নিল। ফি এর কথা শুনে একজন বললো এই কোম্পানী নিশ্চত ভুয়া। সে তার ফাইল খুলে ৮/১০ টা অভিজ্ঞতা সনদ দেখালো এবং বললো যে এসব ভুয়া কোম্পানীতে সে কাজ করতে আগ্রহী নয়।

যাই হোক, লিখিত পরীক্ষার পর ১০ জন ১০ জন করে এবার কোম্পানীর এম.ডি. এর সাথে দেখা করতে আরেকটি রুমে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এম.ডি.-এর রুমে ঢুকে দেখি এক মহিলা বড় সড় গদি ওয়ালা চেয়ারে আসীন। পাশে শুকনো এক ভদ্রলোক। তারা আমাদের বললো, আমরা খুবই ভাগ্যবান। তাদের হাতে লক্ষ লক্ষ টাকার কাজ।

তাদের প্রচুর লোক দরকার। আমাদের সবাইকে তারা নিয়োগ দিতে পারে। তবে, ওদের কাজগুলো একটু কঠিন, তাই বিশেষ কোর্স না করলে পারা যাবেনা। আমাদের ভাগ্য আরো ভাল, কারন, তারই এই কোর্স করায়। এই কোর্স করতে তাদেরকে দুই দিনের মধ্যে অগ্রীম ৩০০০ (তিন হাজার) টাকা দিতে হবে।

টাকা দেওয়ার সাথে সাথে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার দেওয়া হবে। শেষ পর্যন্ত আমরা আশাহত হলাম। আমি তখন পুরো মাস ২৫০০ (আড়াই হাজার) টাকায় চালাতাম। নিজের ৩০০০ টাকা বৃত্তির টাকা তুললে বা নতুন সেশনে ভর্তির সময় ছাড়া কখনই থাকতো না। খুবই মর্মাহত হয়েছিলাম।

পুরো রিক্সা ভাড়াটাই লস, তার উপর ১০ টাকা পরীক্ষার ফি। এর পরে আর কখনও এধরনের বিজ্ঞপ্তি দেখে আবেদন করিনি। তবে এই শিক্ষাটা পরে কাজে এসেছে। তখন শিক্ষাটা না পেলে পরে হয়তো আরও বেশী ঠকতাম।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।