আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

Where father is a fictitious character.....

মানুষ তো না... আমি জানোয়ার... মানুষ যেদিন হব ফিরে আসব সেইদিন...

রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে শুনছি, পাশাপাশি হাঁটতে থাকা দুটো পিচ্চি মেয়ে কথা বলছে.... "জানিস আমার বাবার কাছে আগে যেটাই চাইতাম, সেটাই দিত".... "হুমমম, আমার বাবাও... হ্যাঁ, আমাকে এখনো দেয়, যেটা চাই সেটাই...। " একেবারেই বাচ্চা ওরা, ওরা সেভাবেই কথা বলছে যেভাবে আমাদের তানু বলত... ওদের মতই বাচ্চা ছিল তানু তখন... ক্লাস ওয়ানে পড়ে..... ফর্সা সিল্কি চুলের মোটা-সোটা গালের গাপ্পু গুপ্পু মেয়েটা.... " আমার বাবা যখন বেঁচে ছিলেন তখন আমার গায়ে কেউ চিমটিও কাটতে সাহস করেনি, এমনকি দাদাও (ওর ভাই) না".... আমরা শুনতাম, তানুর স্বপ্নালু চোখে ওর বাবার ছবি দেখার প্রাণপন চেষ্টা করতাম আমরা..... তানুর পুলিশ ইন্সপেক্টর বাবা গাড়ি একসিডেন্ট করেছিলেন, তানু কল্পনায় সেই গাড়িটাই ছোটায়... " আমার বাবা যখন গাড়ি নিয়ে যেত, সবাই ভয়ে কাঁপত" বলতে বলতে তানুর ফর্সা গালগুলো লালচে হয়ে যেত,গাড়ির ভয়ে কাঁপা জনতার মতই উত্তেজনা আর আবেগে কাঁপত তানুও...। তানু বড় হতে থাকে। খালার বাড়ির পাশেই ওদের বাসা, খালার চার মেয়ের চেয়েও বয়সে ছোট ও, খালুজিকে ডাকে আব্বু.....। ওই বাড়িতে তানুর আদরের অভাব নেই, ঈদে সবচেয়ে সুন্দর জামাটা ও-ই পায়, মাথায় তুলে রাখা তানুকে ছোট্ট খালাত বোনটাও হিংসে করে একটু একটু..... তারপর.... তানু আরো বড় হয়.... সবাই এবার বলতে থাকে মেয়েটার ব্রেইন খুব ভাল, কিন্তু মোটেই লেখাপড়া করেনা, উশৃঙ্খল হয়ে উঠছে দিন দিন; বেশি আদর দিয়ে ওর মাথাটা খেয়েছে সবাই.... সবাই আক্ষেপ করে " তানু সময় আছে, মানুষ হ।

" তানু শোনেনা, তার অবাধ স্বাধীনটায় বাঁধা পড়তে দেয়না সে, জেদি তানু অবধ্য হয়ে ওঠে.... তারপর..... একদিন..... ঈদের দিন, তানুর বাড়ি ফিরতে রাত দশটা বেজে যায়, বন্ধুর বাড়িই গিয়েছিল, বন্ধুর জন্যই দেরি হল; বাড়িতে মা বলেন না কিছুই। আবার পরেরদিন ..... পাশেই আরেক বন্ধুর বাড়ি যায়, ওদের বাড়ি থেকে দুই কদম দূরেই হবে বাড়িটা। তানুর ফিরতে আজও রাত দশটা বাজে। বাড়িতে পা দিয়েই তানু বুঝল বাড়ি থমথম করছে, দাদা আর আব্বু, মানে খালুজি দাঁড়িয়ে আছে.... দাদার হাতে স্টিলের স্কেল। কথা শুরু করল দাদাই,"তো, তুই কী ঠিক করলি, বাইরে যাওয়া বন্ধ করবি নাকি পড়ালেখা, কোনটা?" ঘাড় ত্যাড়া তানু বলে আমি লেখা পড়াও করব বাইরেও যাব..... পরদিন সকালে..... বেল বাজাতেই তানু দরজা খুলে দিল হাসিমুখে, ফোলা ঠোঁট নিয়ে হাসতে কষ্ট হচ্ছে, কানের পেছনে এখনো চপচপে রক্ত, কপালের কাছটায় অনেকটা ফোলা।

অবাক হলাম আমি,"কি হইছে তর??"বুঝলাম কাল দেরি করে ফেরার ফল...."কে করল এমন, দাদা??" তানু আবার হাসল, "হুমম, সাথে ফামির আব্বা। " আমি কোনদিন শুনিনাই সে খালুজিকে আব্বু ছাড়া আর কিছু ডেকেছে কিংবা খালুজি ওকে মেরেছে....আজ তাই অবাক হয়ে বললাম,"ফামির আব্বা??ফামির আব্বা হাত তুলছে তর গায়!!!????" হুমমমম..... বলেই দীর্ঘশ্বাস ফেকে তানু ওপরে তাকায়। তানুর চোখে জল ছিলনা কখনো, আজও নেই। সম্ভবত ওপরে তাকিয়ে অভিযোগ জানায় সেই বাবার প্রতি, যিনি কখনো তানুর গায়ে আঁচড় লাগতে দিতেন না কিংবা তানুকে নিয়ে গাড়ি হাঁকাতেন তেপান্তরের মাঠে.... কিন্তু সেটাও... শুধুই তানুর কল্পনায়..... ** তানু, মাফ কইরা দিস দোস্ত।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।