আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

underground bands এবং আমরা..



একটি কেসস্টাডি.... অন্তুকে ইদানীং প্রায়ই দেখা যায় একটা অ্যাকুস্টিক গীটার নিয়ে ছুটাছুটি করতে এদিক ওদিক। বেশিদিন আগের কথা না, এইতো গত বছরই ইন্টার পরীক্ষা শেষ করে দুই বন্ধু একসাথে প্ল্যান করলো গীটার শিখবে। ব্যস, পরেরদিন বাবার কাছে বাজেট উত্থাপন, বিল পাশ, অত:পর একদিনের মধ্যেই হাতে গীটার। ওদের এলাকার এক বড় ভাইয়ের কাছে গীটার শেখা শুরু পরের সপ্তাহে। চার মাস হবে হয়তো, অন্তু এরপর ঠিক করলো ব্যান্ড করবে।

যেই কথা সেই কাজ, ওর আরও দুই বন্ধুকে রাজী করালো। একজন ড্রাম বাজানো শিখবে আরেকজন বেজ গীটার। কিছুদিনের মধ্যেই অন্তু ব্যান্ড গঠন করবে, আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ড। অন্তুর কথায়, "...তেমন কঠিন কিছু না, নেট-এ তো সবকিছু আছেই .... আর এখন যেই অবস্থা, অনেকের চেয়েই আমরা ভাল বাজাই। " এভাবেই বেড়ে চলেছে আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ডের সংখ্যা।

একদিকে যেমন ‘অন্তু’রা ইচ্ছে হলো গীটার কিনে ফেলছে, অন্যদিকে অনেকে হয়তো টাকা না থাকায় ইনস্ট্রুমেন্টও কিনতে পারছে না, ধারদেনা করেই চালিয়ে নিচ্ছে প্র্যাকটিস। তবু থেমে নেই ব্যান্ড। আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ডগুলো যে কতটা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে আমাদের দেশে তা এখনকার ব্যান্ডের বৃদ্ধি দেখলেই বোঝা যায়। এরকম শত শত ব্যান্ডের মধ্য থেকেই বেড়িয়ে আসছে অসম্ভব প্রতিভাবান কিছু মিউজিশিয়ান। আগে যেখানে মাসে একটা কনসার্ট করাও হয়তো সম্ভব হত না, এখন অনেক সময় দেখা যায় একদিনেই হয়তো বেশ কয়েকটি কনসার্ট।

এদের বেশির ভাগই নতুন। কারো কারো গান শুনলে হয়তো আমাদের অন্তুদের কথাই মনে আসবে যে এরা বুঝি সর্বনাশ করলো। আবার হঠাৎ করে এদেরই কেউই আপনার ভুল ভাঙাতে বাধ্য করবে। আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ড কোনটাকে বলব আর কোনটাকে মেইনস্ট্রীম ব্যান্ড বলব এই বিতর্কের বোধহয় শেষ নেই। অনেক আলোচনা অনেক তর্ক চলে আসছে অনেকদিন ধরে এটা নিয়ে।

কেউ কেউ হয়তো আন্ডারগ্রাউন্ড নামে কোন আলাদা অস্তিত্বকেই মানতে রাজি না। আবার কেউ জনপ্রিয়তার তুমুল পর্যায়ে গিয়েও আন্ডারগ্রাউন্ড নামেই স্বচ্ছ্ন্দবোধ করছে। আমরা সেই বিতর্কের আগুনে আর ঘি না ঢেলে বরং আমাদের চেনা আন্ডারগ্রাউন্ড দৃশ্যপটের উত্থান এবং বর্তমান নিয়েই কথা বলি... এখন যেটাকে আমরা আন্ডারগ্রাউন্ড মিউজিক সিনারিও বলি, ১০ বছর আগেও ব্যাপারটা এমন ছিল না। এখনকার মত হাতের মুঠোয় গান তোলার সব রিসোর্স, সফটওয়্যার, ট্যাবস এসব কিছুই ছিলনা। ছিল না পছন্দমতো কোন প্র্যাকটিস প্যাড, আর সবচেয়ে বড় যে ব্যাপারটি সেটা ছিল music taste. নব্বইয়ের শুরুর দিকে বাংলাদেশে হেভি মেটালের যাত্রা শুরু হয় রকস্টারটা, জলি রজার্স, ওয়ারফেইজ, ইন ঢাকা ইত্যাদি ব্যান্ড এর হাত ধরে।

একটা সময়ে এসে ৯৫-৯৬ এর দিকে cryptic fate,deathrow,phsycodeath etcএরা খুব অল্প কিছু অডিয়েন্স নিয়ে, যাদের বেশিরভাগই ছিল ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল কলেজের স্টুডেন্ট, কনসার্ট করতে থাকে। বাংলাদেশের কোন ভেন্যুতে বাংলাদেশের কোন ব্যান্ড Iron Maiden, Black Sabbath, Led Zepplin, Manowar Metallica কভার করছে এতটা নিঁখুত ভাবে এটা একটা দেখার মত ব্যাপার ছিল তখন। আস্তে আস্তে শ্রোতা বাড়তে থাকে এই কনসার্টগুলোতে। একে একে জন্ম নেয় Artcell, Black, Reborn থেকে Artcell শুরু করে হালের Nemesis, Mechanix, Powersurge ইত্যাদি। আন্ডারগ্রাউন্ড মিউজিকের জনপ্রিয়তা এখন এমন এক পর্যায়ে পৌছেছে যে অনেক ব্যান্ডই আন্ডারগ্রাউন্ডের গন্ডি পেরিয়েও নিজেদের আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ড বলে পরিচয় দিতেই বেশি ভালবাসে।

একটা বড় ঘাটতি ছিল মিডিয়া সাপোর্ট। এখন প্রায় সবগুলো চ্যানেলই কমপক্ষে একটা প্রোগ্রাম দেখাচ্ছে আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ড নিয়ে। প্রতিদিনই যেন বাড়ছে এর জনপ্রিয়তা। আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে চ্যানেল আই সিটিসেল এওয়ার্ড-এ যুক্ত হযেছে বেস্ট আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাটাগরি। ২০০৭ এর সবচেয়ে জনপ্রিয় টিভি-শোগুলোর মধ্যে একটা ছিল drockstars-2. যেখানে সবাইকে অবাক করে দিয়ে থ্র্যাশ মেটাল ব্যান্ড ‘পাওয়ার সার্জ’ প্রথম পুরস্কার জিতে নেয়।

ভাল কাজ করলে মানুষ যে সব genre কেই মূল্যায়ন করবে পাওয়ার সার্জেরDRockstars বিজয়ী হওয়া এর এক জ্বলন্ত উদাহরণ। গত কয়েকবছরের মধ্যে আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ডগুলার অ্যালবাম বের হওয়ার হার বেড়ে গেছে অনেক। শুরুরদিকে বিভিন্ন মিক্সড অ্যালবামই ছিল আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ডগুলার মেইন পাবলিকেশন, কিন্তু আস্তে আস্তে সবাই নিজেদের অ্যালবামের দিকে মনোযোগ দিতে থাকে। একটা সময় পর্যন্ত হেভী মেটাল, অল্টারনেটিভ, জাজ ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের গান শোনার জন্য ইংলিশ অ্যালবামগুলোই ছিল ভরসা। কিন্তু দিন বোধহয় সত্যিই বদলে বদলে গেছে! শুধু যে অ্যালবাম বের হচ্ছে তা না, এক এক ব্যান্ড এক এক genre এর গান করছে এবং সবার কাজই প্রশংসার দাবি রাখে।

আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ড নামটা শুনলেই নাক ছিটকানোর মত লোকের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। কারো মতে এটা আমাদের সংস্কৃতির জন্য হুমকি। তবে আজকের এই আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ডগুলোই যখন সামনের দিনগুলোয় বাংলাদেশের মেইনস্ট্রীম ব্যান্ড হবে, তখন পৃথিবীর যেকোন দেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি বা আরও সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে ব্যান্ড এরেনা এর সাথে প্রতিযোগিতা করার জন্য আমাদের আমাদের ইন্ডাস্ট্রিকে যে যোগ্য করে তুলবে এতে কোন সন্দেহ নাই। চাই শুধু ধৈর্য্য, আগ্রহ আর সত্যিকারের passion. জয় নিশ্চিৎ। copyright- http://www.theoffstage.com


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।