আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অর্থমন্ত্রীর ক্ষমা প্রার্থনায় আমি লজ্জিত



গতকাল সিপিডি আয়োজিত একটি বাজেট প্রতিক্রিয়ায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত সাহেব মোবাইলের সিমের কর না কমানো এবং মোবাইল সেটের উপরে বাড়তি করারোপ করবার জন্য ব্যক্তিগত ভাবে ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন। ২০১৩ সালে সরকারের রাজস্ব আয় ৫০০০ কোটি টাকা হবে- এমন একটা ভবিষ্যতবানীর প্রেক্ষিতে কি এমন নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা? কর্পোরেট সংস্থার চাপে যখন জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি ব্যবসায়ীদের সামনে নির্লজ্জের মতো ক্ষমা প্রার্থনা করেন, তখন নাগরিক হিসেবে আমি অপমানিত বোধ করি। আমার নিজের অভিমত মোবাইল যারা ব্যবহার করে তাদের সংখ্যা রাতারাতি এতটা বেড়ে যাবে না যে মোবাইল ফোন খাত থেকে বাংলাদেশের রাজস্ব আয় হুট করেই ৪ বছরে ৫০০০ কোটি টাকা ছুঁবে। ১৪ই জুন বাংলাদেশের মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংঘ ঘোষিত বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় বলেছে যদি সরকার সিম এবং মোবাইল সেটের উপরে করের বোঝা না কমায়, তবে বাংলাদেশের মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩৭% এর বেশী হবে না। গ্রামীণ ফোনের নতুন সিইও বলেছেন যদি মোবাইলের সিম এবং সেটের উপরের ট্যাক্স কমানো হয় তবে সম্ভবত ২০১৩ সালে বাংলাদেশের সরকারের এ বাবদে প্রাপ্ত করের পরিমাণ হবে ৫০০০ কোটি টাকা।

তাদের দাবী তারা যা উপার্জন করে তার ৫০ শতাংশই সরকারের বিভিন্ন মাপের কর হিসেবে তারা প্রদান করে থাকে। অবকাঠামোগত খাতে এই মোবাইল অপারেটররা মোট ৩০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। সূত্র Click This Link বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার অনুপাতে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২৯ %। সেটা অবশ্য বৈশ্বিক বিবেচনায় অনেক কম, তবে জনসংখ্যার বিবেচনায় সেটা অনেক অনেক বেশী। আমাদের মোট জনসংখ্যা ১৫ কোটি, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ৪ কোটির মতো "সিম" বিক্রি হয়েছে।

কিন্তু বিশ্বে মোবাইল প্রতি ১০০ জনে সর্বোচ্চ মোবাইল ব্যবহারকারী বাস করে তাইওয়ানে- Click This Link বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার কত শতাংশ আসলে মোবাইল নিয়মিত ব্যবহার করবার অর্থনৈতিক সামর্থ্য রাখে? মূলত এক একজন স্বচ্ছল যুবক, যুবতী, এবং বাংলাদেশের সকল অপরাধীই একাধিক সিম ব্যবহার করে। মোট মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যাটা এর অর্ধেক হলেও আমি আশ্বর্য হবো না। সম্ভবত বাংলাদেশের অধিকাংশ মোবাইল ব্যবহারকারী অন্তত ৩টা সিমের মালিক। সুতরাং সহজ অনুমাণ হলো বাংলাদেশে আদতে মোট মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৫ মিলিয়নের আশেপাশে কিছু হবে। গত এক বছরে কিংবা ৬ মাসে বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের গ্রাহক বেড়েছে মাত্র ৯ লক্ষ, তবে এ সংখ্যা নিয়েও আমার সংশয় আছে।

বিশেষত বিভিন্ন প্রণোদনা ও লোভের খাতিরে অনেকেই নতুন সিম কিনেছেন এ বছর। বিভিন্ন অফারের ভারে ভারাক্রান্ত মোবাইল ফোন খাতের ব্যবহারকারীগণ। বাংলাদেশের মোবাইল ফোনগ্রাহকদের অধিকাংশই একাধিক সিম ব্যবহার করেন, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হলো বন্ধ থাকা সিম চালু করলেই বিভিন্ন মাপের অর্থনৈতিক সুবিধা প্রদানের অঙ্গীকার। সেটা ১০% থেকে ১০০% পর্যন্ত বিভিন্ন মাপের অর্থনৈতিক সুবিধা। বাংলাদেশের মানুষ কথা ২০১৩ সালে ১০ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকার মূল্যবান কথা বলে ফেলবে এমনটা আমার নিজের বিশ্বাস হয় না।

এ খাতের প্রবৃদ্ধি কিংবা ব্যবহারকারীর সংখ্যাবৃদ্ধির হার হয়তো ১ থেকে ২ শতাংশই বাড়বে প্রতি বছর। আমাদের অর্থনৈতিক দৈন্যতা এমনই। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় অবদান রাখা মানুষগুলোর মোবাইল সেট কিনবার কোনো ক্ষমতাই নেই। এদের নিজেদের বছরের খোরাকী জুটে না। তারা মোবাইলের মতো বিলাসদ্রব্য ব্যবহার করতে অক্ষম।

আমাদের বাৎসরিক মাথাপিছু আয় এখনও সে মাপে পৌঁছায় নি যে অনেক রকম ইনসেনটিভ দিলে সবাই মোবাইল ফোন ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠবে। যেটা যত রকম বিজ্ঞাপনী প্রলোভন এবং চটক দেখিয়েই বিপনন করা হোক না কেনো।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.