আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্প: সুখের সন্ধানে

যখন আমি হবো শুধুই স্মৃতি, আমার এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা গুলো সবার সামনে আমাকে আরো স্মৃতিময় করে তুলবে।

’সুখ!’ শব্দটা কল্পনা করে আনমনেই হেসে ফেলে হাসান। ধূলিমাটির বিষণ্ণতায় ভরা এই পৃথিবীতে কি অধরাই রয়ে গেল সেটা? পরক্ষণেই কি যেন চিন্তা করে সে। মানুষ তো চিরস্থায়ী নয়। তাহলে কেন এত বিত্ত, বিভব আর ঐশ্বর্যের জাল বোনা? এগুলো পেলেই কি মানুষ সুখ নামের পায়রাকে পিঞ্জরাবদ্ধ করতে পারে? এলোমেলো চিন্তায় উতলা হয়ে ওঠে হাসানের মন।

চোখ মেলে তাকায় সে। নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে রয়েছে তার দুই ছেলে। তার মনে হয়, ছেলে দুটোকে মানুষের মত মানুষ করতে পারবে তো? হাসান বেবীট্যাক্সি চালায়। থাকে খিলগাঁও তালতলা বস্তির টিন শেডের এক ঘরে। নিরব নিস্তব্ধ রাত।

আকাশ তার কালো চাদর দিয়ে ঢেকে রেখেছে সারা পৃথিবীকে। মনকে সমস্ত দুশ্চিন্তা থেকে সরিয়ে শান্ত হয়ে বসল হাসান। আজ আয় খুব বেশি হয় নি। তাই দিয়েই যা পারা যায় পরিবারের জন্য কিনে এনেছে। গ্রামের বাড়ী ফরিদপুর।

বাবা ছিলেন একজন সাধারণ কৃষক। পরিবারটা ছোট ছিল বলেই হয়তো কোন রকমে চলে যাচ্ছিল সংসারটা। এক ভাই দু’বোন। হাসান মেজ। অপরিসীম স্নেহ মমতা আর ভালোবাসা দিয়ে পরিবারটিকে আগলে রেখেছিলেন তার মা।

ছাত্র হিসেবে ভাল ছিল হাসান। গ্রামের কলেজ থেকে পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়। একমাত্র ছেলে বলে দরিদ্র পিতা যেটুকু জমিজমা ছিল তা বিক্রি করে ছেলের পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। মনে বড় আশা ছিল ছেলেটা পাস করে ভাল চাকরী করবে। সচ্ছলতা নিয়ে আসবে পরিবারে।

হাসান ভাবে, সে আশার কি কোন মূল্য নেই? তার অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা চলার সময় পরীক্ষা হলে দু’তিন জন ছাত্র নকল করছিল। তারা ধরা পড়ে যায়। সে হলে থাকা হাসান সহ আরো বিশ জন পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা বাতিল করে দেওয়া হয়। ভাগ্যের চাকায় ঘুরছে জীবন, ঘটনার প্রতিচ্ছবি ছাড়া আর কিছুই নয়। মানুষ তার দর্শকমাত্র।

হাসান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সে বছরই তার বাবা মারা গেলেন। হাসানের ওপর সংসারের সব দায়দায়িত্ব এসে পড়ে। তার আর পরের বছর পরীক্ষা দেওয়া হলো না। হাসান জানে না তার জীবনের ভবিষ্যৎ।

বড় বোনটার বিয়ে হয়ে গেছে। এখন গ্রামের বাড়িতে মা আর ছোটবোন থাকে। হাসান যতটুকু পারে মাসে মাসে তা বাড়িতে পাঠায়। ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ে হাসান, নিজেও বুঝতে পারে না। একটা স্বপ্ন দেখে।

অসম্ভব সুন্দর এক বাগানের ভেতর দিয়ে চলেছে। সারি সারি ফুলগাছ, তাতে নাম না জানা কত রকমারি ফুলের সমাহার ! ফুলে ফুলে প্রজাপতি উড়ছে। একেকটা প্রজাপতি যেন সুনিপুণ কোন শিল্পীর বাহারি রঙের ক্যানভাস। সে একটা খোলা প্রান্তরে এসে উপস্থিত হলো। আশেপাশে জনমানবের কোন চিহ্নই নেই।

সেখানে দেখা হলো একজন সন্ন্যাসীর সাথে। তাকে দেখে সন্ন্যাসী বললেন,”তুমি কে বাবা, তোমাকে কিছুটা চিন্তাগ্রস্ত মনে হচ্ছে। বাবা, জগৎ সংসারে দুঃখ, শোক, জরা, ব্যাধির শেষ নেই। কখনো বিচলিত হয়ো না, বিপদে ধৈর্যধারণ করবে। জীবনটা খুব অল্প সময়ের।

একটা কথা মনে রাখবে, মনের সুখের চেয়ে বড় সুখ কেউ কখনো পায় না। সুখকে মনের উপলব্ধিতে নিয়ে আস। মনে হবে তুমিই সবচেয়ে ঐশ্বর্যশালী। ” চলবে....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.