আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আতেলের শ্রেনীবিন্যাশ - একটি আতেলেকচুয়াল প্রবন্ধ

ক খ গ ঘ ঙ

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বহুল ব্যবহৃত যে শব্দগুলোর সান্নিধ্যে আসিয়াছিলাম তাহার মধ্যে আতেল শব্দটি অন্যতম। বহুল ব্যবহৃত শব্দের তালিকায় চোথা শব্দের পরই বোধকরি ইহার অবস্থান। বিশ্ববিদ্যালয় হইতে পাশ করিয়া আসিয়াছেন, কিন্তু আতেল শব্দের সহিত পরিচিত নহেন এমন আতেল মনে হয় একটিও পাওয়া যাইবে না। তাহার পরও এই শব্দটার অর্থগত, ভাবগত এবং ব্যবহারগত ব্যপকতার কারনে তাহা বিস্তারিত আলোচনার দাবি রাখে। আতেল শব্দটির উৎপত্তি কোথা হইতে তাহা আমি বিশেষ অবগত নহি।

তবে তেল শব্দটির সহিত উহার নিবির সম্পর্ক হইতে অনুমান করিতে পারি, এক কালে আতেল চরিত্রের সাথে তেলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। প্রাচীন কালে কিছু ছাত্র মাথা ভর্তি সরিষার তৈল দিয়া শ্রেনীকক্ষে উপস্থিত হইতো এবং এইসব ছাত্রের বিশেষ ধরনের কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হইত। যেমন: প্রচুর পরিমানে পড়াশুনা করা, পড়শুনা ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে আলোচনা না করা, বন্ধুদের সাথে আড্ডা না দেওয়া ইত্যাদি। এই বিশেষ চরিত্রের ছাত্রদিগকেই এককালে আতেল বলিয়া গন্য করা হইত। সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের সহিত আতেলের বৈশিষ্ট্য যেমন পরিবর্তিত হইয়াছে, তেমনি এ শব্দটির ব্যপকতাও বৃদ্ধি পাইয়াছে যথেষ্ট পরিমানে।

তৈলের সহিত আতেলের সম্পর্ক এখন আর এতো গভীর নহে। এখন যে বিশেষ কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে আতেলকে সঙ্গায়িত করা যায় তাহার মধ্যে তৈল খুব বেশি গুরুত্ব বহন করে না। বন্ধুদের সাথে একটি ছাত্রের সম্পর্ক এবং লিখাপড়ার সহিত তাহার সংশ্লিষ্টতা সাধারনত নির্ধারন করে ঐ ছাত্রটি আতেল কিনা। ইহার পরিধি যেহেতু খুবই ব্যপক, তাই আলোচনার সুবিধার্থে আতেলের শ্রেনীবিন্যাস করাটা খুবই জরুরী মনে হইতেছে। নীচে বৈশিষ্ট্য সহকারে বিভিন্ন প্রকার আতেলের আলোচনা করা হইল: ১. একচুয়াল আতেল: ইহাদেরকে পারফেক্ট আতেলও বলা হইয়া থাকে।

এই শ্রেনীর আতেলগন পড়াশুনার জন্য প্রচুর পরিমানে সময় ব্যয় করিয়া থাকেন। প্রচুর পড়াশুনা করিবার কারনে ইহাদের চোখে সাধারনত সমস্যা দেখা যায় এবং চশমা পরিলক্ষিত হয়। শ্রেনীকক্ষে শিক্ষকদের সহিত ইহাদেরকে প্রায়সই জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করিতে দেখা যায়। সহপাঠিদের সহিত ইহাদের সম্পর্ক মূলত: চোথা এবং সাজেশান প্রদান জাতীয় কার্যাবলির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। পরিক্ষার ফল প্রকাশের দিন যথা নিয়মে উহারা ভালো ফল করে এবং ফলাফল লইয়া ইহাদের মধ্যে কোনরূপ আবেগের প্রকাশ লক্ষ্য করা যায় না।

২. ভাবের আতেল: ইহা দ্বিতীয় প্রজাতির আতেল। খুববেশি পড়শুনা না করিলেও ইহাদেরকে লাইব্রেরীতে বই লইয়া বসিয়া থাকিতে দেখা যায়। চোখে সমস্যা থাক বা না থাক, ইহাদের চোখে চশমা থাকিবই। ইহাদিগকে শ্রেনিকক্ষের প্রথম সারিতে বসিতে দেখা যায় এবং ইহারা জটিল জটিল প্রশ্ন করিয়া শিক্ষকদিগকে বিচলিত করিবার চেস্টা করিয়া থাকে। নিজেরা চোথা প্রস্তুত না করিলেও, সহপাঠিরা ইহাদের নিকট হইতে বিভিন্ন প্রকার চোথা পাইয়া উপকৃত হইয়া থাকে।

ইহারা বন্ধুদের সাথে খুব একটা আড্ডা দিতে চায় না। পরিক্ষার ফলপ্রকাশের দিন ইহাদের মধ্যে এক প্রকার হতাশা লক্ষ্য করা যায়। ৩. জিয়োগ্রাফিক আতেল: ইহারা প্রকৃতির নির্মম পরিহাশের স্বীকার। ইহারা প্রকৃত পক্ষে আতেল নয়, কিন্তু ইহাদের মুখায়োবয়োব দেখিয়া বেশির ভাগ সহপাঠিই আতেল বলিয়া ভুল করিয়া থাকে। ইহারা খুব বেশি পড়াশুনায় সময় ব্যয় করে না।

বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিবার সময় চুপচাপ এককোনায় বসিয়া থাকে যদিও ক্লাশ ফাকি দিয়া ইহারা আড্ডায় উপস্হিত হয়। চক্ষু পীরার কারনে ইহাদের চোখে চশমা থাকে। ইহাদের পরীক্ষার ফল বেশ খারপ হয়, তবে তাহা লইয়া ইহাদের মধ্যে তেমন কোন হতাশা লক্ষ্য করা যায় না। ৪. লুকায়িত বা হীডেন আতেল: ইহাদের দেখিয়া বুঝিবার উপায় থাকে না যে ইহারা আতেল, ইহার জন্য গবেষনা করিবার প্রয়োজন হয়। ইহারা সাধারনত ক্লাস ফাকি দিয়া বা ক্লাসের পিছনে বসিয়া আড্ডা দেয়।

কখনো কখনো শিক্ষকদের সাথে মসকরাও করিয়া থাকে। বন্ধুদের সাথে আড্ডার সময় পড়শুনার বিষয়টা সবসময় ইহাদের আলোচ্যসূচীর বহিরে থাকে। তবে ইহারা পড়াশুনাটা ঠিকমতোই চালাইয়া যায়, যদিও তাহা কেউই ঠিকমতো বুঝিতে পারে না। ইহাদের চোখে কখনোই চশমা দেখা যায় না। পরিক্ষার ফলাফল প্রকাশের সময়, ইহাদের অপ্রত্যাশিত রকমের ভালো ফল করিতে দেখা যায়।

৫. বন্ধুদের মতে পঞ্চম প্রজাতির আতেলের এক মাত্র সদশ্য আমি। যেহেতু প্রকৃতিতে উহার আর একটিও উদাহরণ নাই, তাই এই বিষয়ে পাঠকের বিস্তারিত না জানিলেও চলে। নিজের মান-সম্মান রক্ষার স্বার্থে আমি উহা চাপিয়া গেলাম। আতেল সম্পর্কিত উপরোক্ত আলোচনা মূলত: আজি হইতে ১২ হইতে ৭ বছর পূর্বেকার অভিজ্ঞতার আলোকে রচিত। সময়ের সাথে সাথে ইহাতে আরও নতুন নতুন বৈশিষ্ট্য যুক্ত হইয়াছে বলিয়া বিশ্বাস করি।

আশাকরি বিজ্ঞ পাঠক এই বিষয়ে তাহাদের মূল্যবান মতামত দিয়া এই রচনা আরও সমৃদ্ধ করিয়া তুলিবেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।