আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘুর্ণিঝড় আইলাঃ যে দুঃখের শেষ নেই

.
সাতক্ষীরা থেকে ঘুর্ণিঝড় আইলা কাভার করে ফেরা সাংবাদিক বন্ধুটিকে জিঙ্গেস করি মৃত সিদ্দিক গাজীর অসহায় বৌ বাচ্চার কথা। ওখানে থাকতেই এই মৃত্যুর খোঁজ সে দিয়েছিল। আর আইলার তাণ্ডব ও মানুষ মৃত্যুর করুণ ঘটনায় বিচলিত হয়ে পাঠানো আরেক বন্ধুর পাঠানো কিছু টাকা ওদের কাছে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করেছে। যদিও এই মৃত্যু বা এই পরিবারটির ঘটনাই আইলার তাণ্ডবে সৃষ্ট করুণ ঘটনাগুলোর মধ্যে করুণতম নয়। কিন্তু সবচে করুণ ঘটনাটির অনুসন্ধান করার মতো তাগিদ রাখি কই! আইলার পর , পত্রিকায় ছাপানো রিপোর্ট থেকে , মায়ের হাত থেকে স্রোত্রের টানে শিশু সন্তান ভেসে যাওয়ায় উন্মাদ প্রায় মাএর কথা, নিজ সন্তানের পঁচে ফুলে ওঠা লাশ খুঁজে পেয়ে পানিতে ভাসিয়ে টেনে আনাসহ শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষের লাশের সারি কাকে না বিচলিত করে রেখেছে।

সরকারী হিসেবেই এই ঘুর্ণিঝড়ে ৫৪ উপজেলার ৬৮ ইউনিয়নের ৫ হাজার ৯০টি পরিবারের প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আজ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ১ শ ৭২। ঘেরের মাছ ও গবাদী পশু ভাসিয়ে নেয়ার পাশা পাশি দীর্ঘ বণ্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ধ্বসে দেয়ার খবরতো আছেই। কিন্তু সব ছাপিয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমার এখন আইলায় নিহত সিদ্দিক গাজীর পথে বসা ও অনাহারে থাকা পরিবারের সদস্যদের শোকাহত মুখ মনে পড়ছে। হয়তো শুধু এই পরিবারটির অবস্থাই শুধু বিস্তারিত শুনেছি বলেই! সাংবাদিক বন্ধুটি ওদের ছবি এনেছে।

তা দেখি আর ওর মুখে পরিবারটির কাহিনি শুনি। গ্রাম: বাইনতলা, পো: পদ্মপুকুর থানা: শ্যামনগর জেলা সাতক্ষীরা। এই গ্রামেরই বাসিন্দা দিন আনি দিন খাই ধরনের আর্থিক অবস্থার মানুষ সিদ্দিক গাজী । পরিবারে বৌ ছাড়াও বয়স ৫৮ বছর বয়সী সিদ্দিক গাজীর ৩ ছেলে এক মেয়ে। অভাবে পড়ে বড় ছেলে মো. নূরে আলম লেখাপড়া বন্ধ করে সংসার চালাতে কাজ করত ইটের ভাটায়।

ছোট ছেলে ৯ বছর বয়সী মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান মানসিকভাবে প্রতিবন্ধি। মেঝ ছেলে মো. নুরুজ্জামান (১২) স্থানীয় একটি হাফিজি মাদ্রাসার ছাত্র। ৬ পাড়া কোরআন শরীফ মুখস্ত হয়েছে। আর ছোট মেয়ে সাবিকুন্নাহার (৬-৭) প্রথম শ্রেনীর ছাত্রী , স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। সিদ্দিক গাজীকে পেশায় জেলে বলা যায়।

অবশ্য পরের জালে, পরের নৌকায় ভাগে মাছ ধরতেন, ভিটা বাড়ী ছাড়া আর কোন জমি নেই। ২৫শে মে ঝড়ের দিন ছেলে মেয়ে আত্মীয়দের নিরাপদে রেখে নৌকা বাঁধতে গিয়েছিলেন বিকেল ৩টার দিকে। এর পরে আর ফেরেন নি সিদ্দিক গাজী। সে ফিরে না আশার উদ্বেগ উৎকণ্ঠা আর ঝড়ের তাণ্ডবে রাত কাটানোর পর অনেক খুঁজে পরের দিন দুপুরের পর নৌকা এবং লাশ পাওয়া যায় বাড়ী থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দুরে গড় কুমরাপুর এলাকায় বেরী বাঁধের পাশে। সেখানেই একটু উচু জায়গায় কবর দেয়া হয়।

সিদ্দিক গাজীকে। এদিকে সিদ্দিক গাজীর কুড়ে ঘরের কোন অস্তিত্যও রাখেনি বাতাসের তীব্র গতি। ঝড়ের পর থেকে সিদ্দিক গাজীর স্ত্রী ফরিদা বেগম, ৪ সন্তান নিয়ে উঠেছেন পদ্মপুকুর, থানা শ্যামনগরে ভাই নূর ইসলাম তরফদারের বাড়ি। নামেই ওটা এখন বাড়ি। দোচালা কুড়ে ঘর ঝড়ে ভেঙ্গে পড়েছে।

চার পাশে এখনো পানি। ২৫শে মে’র ঘুর্ণিঝড়ের পর ২৮ মে পর্যন্ত সরকারী কোন ত্রাণ পায়নি এই পরিবার। সেই পর্যন্ত সরকারের কোন সংস্থার পক্ষ থেকে খোঁজ নেয়া হয়নি এই পরিবারের। সাংবাদিক বন্ধুটি জানায় ওদের খুঁজে পেতে সারা দিন প্রায় খুঁজতে হয়েছে ওকে। কবরের পাশে ওরা গত তিন দিনে আর যাওয়ার সুযোগ পায়নি।

কোথায় ত্রাণ দেয়া হচ্ছে এটার পাত্তা করতে সারা দিন এখানে ওখানে ৩ সন্তান নিয়ে ছুটোছুটি করেছেন ফরিদা। কিন্তু ছোট বাচ্চাদের নিয়ে পানি ভেঙ্গে যেতে হয় । লবন পানিতে শরীরে ঘা হয়ে গেছে বাচ্চা গুলোর। গত কাল পর্যন্ত কোন স্থানে ত্রাণ থাকতে থাকতে পৌঁছতে পারেনি ফরিদা ও তার সন্তানরা। ছবিগুলো দেখলে মন যেন কেমন করে ওঠে! ওরা কেমন থাকবে?বাঁচবে? কত কষ্ট করে? কিভাবে? ওদের ঠিকানাটা টুকে রাখি।

কখনো ওদিকে কেউ গেলে কেমন আছে জেনে আসতে বলবো। নিজে গেলেও দেখে আসবো একবার। ঠিকানাঃ ফরিদা বেগম । প্র/ সিদ্দিক গাজী(মৃত)। গ্রাম: বাইনতলা, পো: পদ্মপুকুর থানা: শ্যামনগর জেলা সাতক্ষীরা।

নোট: (সংযুক্তি:৩০/৫, বেলা ২.৫৫)এই পোস্টের মন্তব্যে অনেকে আইলার জন্য ব্লগারদের সমন্বিত উদ্যোগের আকাঙ্খা প্রকাশ করেছেন। এক্ষেত্রে আগে এধরনের বড় উদ্যোগ ব্লগে নিয়েছেন এমন কেউ বা আন্তরিক ও সাহসী নতুন কেউ এগিয়ে আসলে কাজটা শুরু হতে পারতো। দুঃখের বিষয় আমি এর কোনটাই না। ভেবে দেখলাম, আমি যা করতে পারি তা হলো কেউ সুনির্দিষ্ট কোন এলাকা বা অসহায় ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করতে পারি। এটা করার মতো মানুষের সাথে যোগাযোগ করা যাবে।

এর ফলোআপও করতে পারবো। এ জন্য দুর্গত এলাকার বা আশে পাশের এলাকার ব্লগাররা হেল্প করতে পারেন। যে কেউ ব্যক্তিগত যোগাযোগ থেকে এটা করতে পারেন। এইলেখার মন্তব্যের ঘরে বা আগেই এই নিয়ে আহ্বান জানানো চাচামিঞার সংশ্লিষ্ট লেখার মন্তব্যের ঘরে নাম ঠিকানা ঘটনা জানালে চেষ্টা করবো। চাচামিঞার লেখাটির লিংক Click This Link এখানে দিয়ে দিলাম ।

এর বাইরে কেউ উদ্যোগ নিলে খুবই খুশির সাথে যথাসাধ্য করার চেষ্টা অবশ্যই করবো।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।