আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইতিহাস জানে এই বোকামীর প্রয়োজনীয়তা...বোকারাই সমাজ পাল্টায়...(উৎসর্গ: আরিফ জেবতিক)

কখনো চাই নাই দূরে থাকি...তবু দূরগুলো বারে বারে আসে...

পরিস্থিতি ১ প্রাপ্তি নামের ফুটফুটে মেয়েটার ক্যান্সার ধরা পড়লো...সামহোয়্যার ইন ব্লগের তখন ৬ মাসের মতোন বয়স। এই ছয় মাসেই তার ঘটনাবহুল সময় যায়। কিন্তু এতো ঘটনাবহুলতার মধ্যে সবচাইতে বড় ঘটনাটা ঘটলো প্রাপ্তির অসুস্থতারে কেন্দ্র কইরাই। মতাদর্শ কিম্বা ব্যক্তিগত আক্রোশের বাইরে গিয়া সামহোয়্যার ইনের ব্লগাররা এক হইলো প্রাপ্তির চিকিৎসা তহবিল তৈরীতে। এই আয়োজনের বা ব্লগ এক্টিভিজমের এক পর্যায়ে এক অনুষ্ঠানে অমি পিয়াল কিম্বা ধানসিঁড়ি একই সাথে আড্ডা দ্যায়...ভেদাভেদ ভুইলা সকলে তখন এক... একবারো তখন প্রশ্ন উঠে নাই এই এক্টিভিজমের শুরু কোত্থেইকা।

কবে অমি পিয়াল প্রথম পোস্ট করলো...কবে সাদিক মোহাম্মদ আলম প্রথম আহ্বান জানাইলো...নেতৃত্ব ছিলো না, কোন কমিটি ছিলো না সংগঠিত কাঠামো ছিলো না, কিন্তু আজ পর্যন্ত সবচাইতে সফল ব্লগ এক্টিভিজম হিসাবে চিন্হিত হইয়া আছে প্রাপ্তি... প্রাপ্তি সোনামনি আমাদের প্রাপ্তির সবচাইতে বড় উপলক্ষ্য... পরিস্থিতি ২. ইয়াজউদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়কার প্রথম দিকে আরিফ জেবতিক পোস্ট দিলেন ভ্যালেরি টেইলররে নিয়া। সেইখানে এই ত্যাগী মহিলার বিরুদ্ধে সংঘটিত ষড়যন্ত্রের আভাষ আর তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান ছিলো...কোন কমিটি লাগে নাই, কোন নেতৃত্ব লাগে নাই। কেবল মানুষের সচেতনতারে জাগাইয়া তোলার গমক ছিলো সেই পোস্টে...ভুত থেইকা ভুতে ছড়ানো সেই কর্মসূচীর পরিণতি আমরা জানি...ক্ষমতাশালী ব্যুরোক্রেট শফি সামি আজ আর কোন উল্লেখেই নাই... পরিস্থিতি ৩. শ্বাশতরে নিয়া সম্ভবত মেহেরুল হাস সুজন প্রথম পোস্ট করে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই মেধাবী ছাত্রের জীবন ধ্বংসের মুখে তখন। ব্লগাররা আবার ঐক্যবদ্ধ হইলো...তারা উদ্যোগ নিলো সংগঠিত ভাবে।

কিন্তু এই সংগঠিত রূপ শুরুতেই ঝামেলা ডাইকা আনলো। রাবি নাকি বিভিন্ন ব্লগ নাকি ব্যক্তি কার অবদান বেশী, কার নেতৃত্বে চলবো এই কর্মসূচী সেই বিষয়ক তর্ক সামনে চইলা আসলো...তারপরেও এ যাবতকালের সবচাইতে বেশী অর্থ সংগ্রহ হইলো এই কার্যক্রমে...মাঝে পত্রিকায় কার নাম থাকবো কার নাম থাকবোনা, বা কার নাম আগে গেছে কার নাম পরে গেছে এইসব বিতর্ক...শেষ পর্যায়ে কার ট্রেন ভাড়া কে দিয়া দিছে জাতের নালিশ পাল্টা নালিশ... এইসব নিয়াই শ্বাশতের চিকিৎসা শুরু হইলো। নিস্পৃহ থাকলে কওয়া যায় শ্বাশতের জন্য নেওয়া উদ্যোগ সফল...কিন্তু ব্লগ এক্টিভিজমের বিরুদ্ধে কিছু কওয়ার থাকলে এই কার্যক্রমের উল্লেখই সবচাইতে উল্লেখ্য... পরিস্থিতি ৪. অমি রহমান পিয়াল যৌবন জ্বালা নামক এক ঘোষিত পর্ন ফোরামে নিয়মিত লেখালেখি শুরু করলেন। সামাজিক মূল্যবোধে এই লেখালেখি রীতিমতো অবৈধ...কিন্তু তিনি সেই সাইটের নাম পরিবর্তন করাইলেন...তারা যুদ্ধাপরাধীগো বিচারের দাবীতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচী শুরু করলো...এই বিষয়ের উল্লেখ কইরা যখন অমি পিয়াল ভিন্ন ব্লগ গুলিতে পোস্ট করেন বাঙালির সামাজিকতায় বলক পারা শুরু হইলো। তিনি কতো ঘৃণ্য কাজ করতেছেন সেইটা প্রমাণে সবাই ঝাপাইয়া পরলো...যুদ্ধাপরাধীগো বিরুদ্ধে দাঁড়াইতে হইলে শুদ্ধাচারী হইতে হইবো বইলা নীতিবোধ সামনে চইলা আসলো... পরিস্থিতি ৫. এমনই এক সময়ে আমার মাথায় আসে অমি পিয়ালের যৌবনযাত্রায় করা কাজের সমালোচনা করতে গিয়া তো মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীরা সামনে চইলা আসতেছে...কিন্তু অনেকেই আবার মনে করে এই কর্মসূচী যদি পর্ন ফোরামে না হইয়া অন্য কোন সামাজিক কম্যুনিটি থেইকা শুরু হইতো তাইলে তারে বেগবান করতে তারা অংশগ্রহণ করতেন...তাইলে কি করা যায়!? এই পর্যায়ে আমি ব্লগীয় অভিজ্ঞতা থেইকাই আহবানমূলক একটা পোস্ট লিখি...সেই পোস্টের ধারাবাহিকতায় আসে মিলিত হওনের পোস্ট... শুরু হয় একটা নেতৃত্ব বিহীন কার্য্যক্রম...যেই কার্য্যক্রমের নেতা এর সকল অংশগ্রহণকারী...ব্লগারগো সকলের লগে আলোচনার ভিত্তিতেই ঠিক হয় বর্তমান সংসদের প্রথম অধিবেশনের কোন একটা সময়ে প্রথম পর্যায়ে সংগৃহীত স্বাক্ষর প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হইবো...ধারাবাহিক ভাবেই চলবো দ্বিতীয় পর্যায়...টার্গেট নির্ধারণ করা হয় দুই লাখ, এই সিদ্ধান্ত কোন নেতার মুখ থেইকা নিঃসৃত হয় নাই...সকলের সিদ্ধান্ত এবং সম্মতিতেই এই সিদ্ধান্ত সামনে আসে মূখপাত্র হিসাবে এই ঘোষণাগুলি দেয় আইরীন সুলতানা।

দিকে দিকে এই কর্মসূচী ভুত থেইকা ভুতেই চলছে...কাটাসুরের মুক্তি মন্ডল...কিম্বা মিরপুরের মাহমুদুল হাসান রু্বেল অথবা কোরিয়ার আমি ও আমরা সকলেই যার যার অবস্থান থেইকাই স্বাক্ষর সংগ্রহ করতেছিলো...মূল সুর ছিলো যুদ্ধাপরাধীগো বিচার প্রক্রিয়া শুরু করানোতে সরকাররে চাপে রাখা...সাধারণ মানুষরে যোগাযোগের মধ্যে রাখা...আর তাই মাহমুদুল হাসান রুবেল যখন ফরমের প‌্যাডমতোন কিছু একটা ছাপাইতে আগ্রহী হয় তারে নিবৃত্ত করা হয় না...আবার একই সাথে উৎসাহও দেয়া হয় নাই...এই ভাবেই কর্মসূচীটা ধীরে ধীরে প্রত্যেক ব্যক্তির মৌলিকত্ব নিয়াই ছড়াইবো এইটাই ছিলো উদ্দেশ্য... কিন্তু রুবেল সক্রিয় ব্লগার...তার এই উদ্যোগ ধীরে ধীরে কেন্দ্রীয় উদ্যোগের রূপ পরিগ্রহ করলো...যদিও বাস্তবিক সেইটা সবসময় রুবেল বা তার দলের নিজস্ব উদ্যোগই ছিলো...প্রায় দুইলাখ স্বাক্ষর তারাই সংগ্রহ কইরা ফেললো। ভুত থেইকা ভুতেই ছড়াইয়া এই কর্মসূচীতে প্রায় তিন লাখ স্বাক্ষর সংগহ হইছে...আমি এখনো কনফিডেন্ট আমার অবস্থানে...ভুত থেইকা ভুতে ছড়াইয়াই মানুষরে একীভূত করা সম্ভব...কেউ যদি তার কার্য্যক্রমের সু্বিধার্থে কমিটি বা সেল করতে চায় সেইটা তাগো ব্যক্তিগত অবস্থান...কিন্তু তাতে ব্লগারগো এই উদ্যোগের সংশ্লিষ্টতা নাই...এই আন্দোলনের কেন্দ্রে আমরা সবাই আছি...কোন নির্দিষ্ট গ্রুপ এইখানে গুরুত্বপূর্ণ না...রুবেল ২ লাখ স্বাক্ষর সংগ্রহ করছে বইলা মুহিবের দশ স্বাক্ষর এইখানে অগুরুত্বপূর্ণ হয় না...তারা দক্ষতায় বা অন্তর্ভূক্তিতে পৃথক হইলেও সিদ্ধান্তমূলকতায় কেউ কারো চেয়ে ছোট কিম্বা বড় না...এই ছিলো এই এক্টিভিজমের মূল সূর, এখনো তাই আছে বইলা আমি মনে করি... প্রথম পর্যায়ের স্বাক্ষর আমরা জমা দিতে পারি নাই সঠিক সময়ে...এর দায় আমাগো আছে...সংবাদ সম্মেলনে ঘইটা যাওয়া অনভিপ্রেত ঘটনার পর আসলে অগোছালো হইছে পুরা কার্য্যক্রম, সেইটা মানি। কিন্তু সেইটা ঘটছে আসলে আমরা যেই প্রক্রিয়ায় এই কার্য্যক্রম শুরু করছিলাম তার ব্যত্যয় ঘটছে বইলাই... আমিই প্রথম ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের কথা অন্তর্ভূক্তির কথা বলি একজন ব্লগাররে...তারে এবং আরো কয়েকজনরে বলি এই বিষয়ে যাতে ব্লগে আলোচনা করা হয়, সকলের সাথে কথা কওয়া হয়। কিন্তু সেই ব্লগার এবং হয়তো আরো কয়েকজন আমার বানী নেতার বানীর মতোন ধইরা নিয়া তারে সংবাদ সম্মেলনের মূল পদবাচ্য বানাইয়া ফেলে অধিকাংশ ব্লগারগো সম্মতি না নিয়াই...শুরু হয় অজ্ঞতা আর হতাশার খেলা... ধর্ম শব্দটা শুনলেই আমরা মনে করি এই বোধহয় কোন মুসলিম নিগৃহীত হইলো...শিক্ষিত ধার্মিক সমাজে এইরম মানসিকতা আজ বিরাট সমস্যা হিসাবে আবির্ভূত...আর তাই ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিয়া সকলের অনাগ্রহ কিম্বা বিরোধীতা থাকলেও এক্টিভিজমের এই সময়ে সকলেই চইলা গেলেন ধর্মভিত্তিক রাজনীতির পক্ষে...আমি বিশ্বাস করি সংবাদ সম্মেলনের আগে সকলের সাথে আলোচিত হইলে এই সমস্যা এতো গভীর হইতো না...আমি বিশ্বাস করি কেউ নেতাসূচক না হইলে এই সমস্যা সামনেই আসতো না। আমি এখনো মনে করি গণ-স্বাক্ষর কার্য্যক্রমের প্রয়োজন ফুরাইয়া যায় নাই...এখনো মনে করি এই কার্য্যক্রম দাঁড়াইবো সকলের সম্মিলিত অঙশগ্রহণের মধ্য দিয়াই...উদ্যোগী দায়বদ্ধ মানুষের ভূমিকারে অনেকই বোকামী ভাবে, ইতিহাস জানে এই বোকামীর প্রয়োজনীয়তা...বোকারাই সভ্যতারে পাল্টাইছে অতীতে...বোকারাই স্মরণীয় হয়.. আরিফ জেবতিকের পোস্ট


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.