আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘এপ্রিল ফুল’ এর ইতিহাস মুসলমানদের সাথে চরম প্রতারণা ও নির্মমভাবে শহীদ করার ইতিহাস



“এপ্রিল ফুল” বাক্যটা মূলত ইংরেজী। অর্থ এপ্রিলের বোকা। প্রতি বৎসর ১লা এপ্রিলের নামে বাড়িতে-বাড়িতে, পাড়া-মহল্লায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, অফিস-আদালতে একে অপরকে ঠকিয়ে প্রতারণা করে ১লা এপ্রিল পালন করে থাকে। এ প্রতারণার আনন্দকে তারা ১লা এপ্রিলের আনন্দ মনে করে থাকে এবং মুখেও তা উচ্চারণ করে থাকে। হাদীছ শরীফ-এ রয়েছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন “যে ধোঁকা দেয় বা প্রতারণা করে সে আমার উম্মত নয়।

” ১লা এপ্রিলে যারা কৌতুক করে বা অপরকে ঠকানোর আনন্দে বিভোর হয় তারা শুধু মিথ্যা ও প্রতারণার মত হারাম ও শক্ত কবীরাহ গুনাহর দ্বারাই কঠিন গুনাহগারে পরিণত হয় না পাশাপাশি তারা মুসলমান নামধারণ করে মুসলমানদের শহীদ করাতে নিজেদের সমর্থন ও আনন্দ প্রকাশ করে। (নাঊযুবিল্লাহ) মুসলমান আজ জ্ঞান চর্চা হতে অনেক দূরে তাই মুসলমান নিজেদের ঐতিহ্য ও ইতিহাস সম্পর্কে বড়ই বেখবর। আজ মুসলমান নিজেদের স্বর্ণযুগ, সারা বিশ্বব্যাপী তাদের বিস্তীর্ণ জ্ঞান-বিজ্ঞানে অভূতপূর্ব উন্নতি ইত্যাদি সম্পর্কে কিছুই জানে না। আবার অপরদিকে ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে কাফির-বিধর্মীরা যে মুসলমানদের উপর কত মর্মান্তিক জুলুম করেছে, নির্মমভাবে শহীদ করেছে সে খবরও মুসলমান জানে না। এর ইতিহাস হলো- খলীফা ওয়ালিদ তৎকালীন সেনাপতিকে ৭১১ খ্রিস্টাব্দে স্পেন অভিযানের নির্দেশ দেন।

স্পেনে চলছিলো তখন চরম অত্যাচারী রাজা রডারিকের নির্যাতন, সামাজিক বৈষম্য ও ধর্মের নামে অনাচার। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনেকেই মুসলমান হয়েছিলেন। আবার অনেকে রাজার অত্যাচার থেকে মুক্তি পাবার জন্য মুসলমানদের আমন্ত্রণও জানিয়েছিলেন। কথিত আছে যে, অত্যাচারী রাজা রডারিক সিউটা দ্বীপের রাজা ফার্ডিনান্ড জুলিয়ানের দুহিতা ‘ফ্লোরিডার’ শ্লীলতাহানি করায় ক্ষুব্ধ হয়ে জুলিয়ান মুসলিম সেনাপতিকে স্পেন বিজয়ের আমন্ত্রণ জানান। সেনাপতি স্পেন বিজয়ের জন্য হযরত তারিক বিন জিয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহিকে নিযুক্ত করেন এবং মাত্র সাত হাজার সৈন্য দেন।

এত অল্প সৈন্য নিয়ে এত বিরাট কাজ কল্পনা করে হযরত তারিক বিন জিয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। তিনি আল্লাহ পাক, উনার দরবারে কান্নাকাটি এবং দোয়া-মুনাজাত করতে থাকেন। গভীর রাতে স্বপ্নে তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার জিয়ারত লাভ করেন। রহমতুল্লিল আলামীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আশ্বস্ত করে বলেন, “হে জিয়াদ! তুমি অগ্রসর হও। চিন্তিত হইওনা, তুমিই কামিয়াবী লাভ করবে।

” এই স্বপ্ন দেখে হযরত তারিক বিন জিয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে অগ্রসর হন। স্পেন পৌঁছা মাত্র তিনি আদেশ দেন তার সব নৌজাহাজ পুড়িয়ে ফেলতে। অতঃপর তিনি সৈন্যদের উদ্দেশ্য করে এক বিশেষ ঈমানদীপ্ত উদ্দীপনাপূর্ণ ও জ্বালাময়ী ভাষণ দেন। আরো বলেন, “হে মুসলমানগণ! তোমাদের এখন যাওয়ার আর কোনো উপায় নেই। কারণ সব জাহাজ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।

কাজেই আল্লাহ পাক, উনার উপর ভরসা করে অবশ্যই তোমাদের বিজয় লাভ করতেই হবে ইনশাআল্লাহ। ” মুসলমান সৈন্যরা উনার এ ঈমানদীপ্ত জজবাপূর্ণ ভাষণে উদ্দীপ্ত হয়ে উঠে এবং বিজয় লাভ করে। রডারিক শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়ে নদীগর্ভে নিমজ্জিত হয়। বিজয়দীপ্ত হযরত তারিক বিন জিয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি কারমোনার সিডোনিয়া, ইজিসা বিজয় করেন। মুসলিম সৈন্যবাহিনীকে চারভাগে ভাগ করে মালাগা, গ্রানাডা এবং টলেডোর দিকে প্রেরণ করা হয় এবং গথিক রাজ্যের বহু অঞ্চলে মুসলিম শাসন কায়িম হয়।

এরপর ৭১২ খ্রিস্টাব্দে একটি বিশাল মুসলিম বাহিনী স্পেনে আগমন করেন এবং সিডোনিয়া, সেভিল, মেরিডা, তালাভেরা অধিকার করেন। হযরত তারিক বিন জিয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, সম্মিলিত বাহিনীসহ পর্যায়ক্রমে গ্যালিসিয়া, লিওন, অ্যাস্টুরিয়াস, সারাগোসা, আরাগান, ফ্যাটালোনিয়া, বার্সিলোনা জয় করে উত্তরে পিরেনীজ পবর্তমালা পর্যন্ত অগ্রসর হন। ৭১২ খ্রিস্টাব্দ হতে ৭১৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে খ্রিস্টান স্পেনের প্রায় সমগ্র অঞ্চল মুসলিম পতাকাতলে আসে। ১৪৭০ খ্রিস্টাব্দের দিকে এ সুযোগকে চরমভাবে গ্রহণ করে খ্রিস্টান ফার্ডিনান্ড ও ইসাবেলা দম্পতি। তারা বিভিন্ন মসজিদ-মাদরাসায় তাদের খ্রিস্টান ব্যক্তিকেও ইমাম, মুয়াজ্জিন, মাদরাসার উস্তাদ পদে ঢুকাতে সক্ষম হয়।

সে সাথে তারা উলামায়ে ‘ছূ’দেরও হাত করতে সমর্থ হয়। তারা সবাই ইসলামী আদর্শের উপর অটলতা ছেড়ে ঢিলেঢালা চলার পক্ষে জনমত তৈরি করে। শরাব খাওয়া, বেপর্দা হওয়া, অবৈধ নারী সম্পর্ককে দোষের নয় বলে প্রচার করে। ফলত মুসলমান তাদের ঈমানী বল হারিয়ে ফেলে। উলামায়ে ‘ছূ’রা আরো প্রচার করে যে, খ্রিস্টানরা মুসলমানদের শত্রু নয়।

এরূপ ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে ফার্ডিনান্ড দম্পতি অবশেষে মুসলমানদের থেকে পর্যায়ক্রমে স্পেন ছিনিয়ে নেয়। তারা প্রথমে আল হামরা দুর্গের পতন ঘটায়। এরপর গ্রানাডা তুলে দিতে বলে। কিন’ দিশেহারা, ঈমানহারা মুসলমান তখন খুব সহজেই তাদের কাছে পরাস্ত হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় পরাজিত মুসলমান সৈন্যদের সন্ধির শর্ত দিয়ে অস্ত্রমুক্ত হতে বলা হয়।

কিন্তু তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন তৎকালীন মুসলিম সেনাপতি এ সন্ধিকে মরণ শর্ত বুঝতে পেরে সন্ধি শর্তে আবদ্ধ না হওয়ার জন্য স্বপক্ষীয় সেনাদল ও জনগণকে এক তেজস্বীনি ভাষণে ভয়াবহ ভবিষ্যৎ পরিণতির ইঙ্গিত দান করেন। কিন্তু উনার অবশ্যম্ভাবী পতনের আশঙ্কায় মুসলমানগণ উনার এ গুরুত্বপূর্ণ ভাষণের কোন মর্যাদা দেয়নি। তাই তিনি উপায়ান্তর না দেখে এলাভিরা তোরণ দিয়ে অশ্বারোহণে নগর ত্যাগের সময় ওঁত পেতে থাকা দশজন খ্রিস্টান অশ্বারোহীর দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়ে যুদ্ধ করতে করতে তাদের কয়েকজনকে হতাহত করেন এবং নিজেও মারাত্মকভাবে আহত হন। অবশেষে শত্রু হাতে বন্দী হওয়ার চেয়ে শেনিল নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে চিরশান্তি লাভের পথ বেছে নেন। এরপর ফার্ডিনান্ড আদেশ জারি করে মসজিদগুলোকে নিরাপদ ঘোষণা করে।

এ আদেশে আরো বলা হয় যে, যারা মসজিদে আশ্রয় নেবে তারা নিরাপদ থাকবে। অসংখ্য স্পেনীয় মুসলমান সরল বিশ্বাসে মসজিদগুলোতে আশ্রয় গ্রহণ করে আবদ্ধ হয়। শত্রুর দল মসজিদগুলিকে তালাবদ্ধ করে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ভস্ম করে দেয় অবশিষ্ট স্পেনীয় মুসলমানদের। আর বাইরে থেকে তারা উল্লাস ভরে কৌতুক করে সমস্বরে Fool! Fool!! বলে অট্টহাসি আর চিৎকারে মেতে উঠে। দিনটি ছিল ১লা এপ্রিল ১৪৯২ সাল।

অদ্যাবধি খ্রিস্টানরা তাদের সেই বিজয়ের স্মরণে পালন করে ‘এপ্রিল ফুল’। খ্রিস্টানদের জন্য এদিনটি আনন্দদায়ক হলেও মুসলমানদের জন্য ভাষাহীন বেদনাদায়ক। কেননা মুসলমানদেরই হাতে গড়ে উঠা একটি সভ্যতা খ্রিস্টানদের নির্মম প্রতারণায় সমূলে উৎখাত হয়ে ভেসে যায় লাখ লাখ মুসলমানদেরই বুকের তাজা রক্ত স্রোতে। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, ইসলামী দৃষ্টিকোণে সবচেয়ে ঘৃণিত হচ্ছে হাসি-মসকরাচ্ছলে মিথ্যা বলা। অনেকে ধারণা করে যে হাসি-রসিকতায় মিথ্যা বলা বৈধ।

আর এ থেকেই বিশ্ব ধোঁকা দিবস বা এপ্রিল ফুলের জন্ম। এটা ভুল ধারণা, এর কোন ভিত্তি নেই ইসলাম ধর্মে। রসিকতা কিংবা স্বাভাবিক অবস্থায় মিথ্যা সর্বাবস্থায় হারাম। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আমি রসিকতা করি ঠিক, তবে সত্য ব্যতীত কখনো মিথ্যা বলি না”। (তাবরানী ১২/৩৯১; ছহীহুল জামে হা/২৪৯৪)।

তাই ‘এপ্রিল ফুল ডে’ উদযাপন তথা একে অন্যকে বোকা বানিয়ে, মিথ্যা বলে আনন্দ লাভ করার প্রচেষ্টা ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শের পরিপন্থী। সুতরাং এ থেকে আমাদের বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে হবে।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.