আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুরুদ শরীফের বাংলা অনুবাদ পড়ি এবং ইসলামের আলোকেই নির্ধারণ করি মুহম্মদ পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব কিনা

সবকিছুই চুকিয়ে গেছে গালিব! বাকি আছে শুধু মৃত্যু!!

যারা ইসলাম ধর্মের অনুসারী তাঁদের বিশ্বাস যে, মুহম্মদ পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশেষ্ঠ মানুষ। মান-মর্যাদায় তার সমকক্ষ পৃথিবীতে কোন কালেই কেউ ছিলনা। ভবিষ্যতেও থাকবে না। কিন্তু এই বিশ্বাসটা কতটুক সত্য বা যৌক্তিক? আসুন, খোলা মন নিয়ে ইসলামের আলোকেই এ বিষয়টি আলোচনা করি। কারণ ধর্মকেন্দ্রিক কোন ভ্রান্তবিশ্বাস প্রচলিত থাকলে ধর্মের শুদ্ধিতার স্বার্থেই তা দূর করা অত্যাবশ্যক।

প্রতি নামাজে মোনাজাতের আগে আমরা আত্তাহিয়াতু, দুরুদ শরীফ এবং দোয়া মাছুরা পড়ি। এগুলো নামাজ এবং ইসলামী রীতি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এসব দোয়ার সততা বা এগুলোকে ভুয়া বলার কোন অবকাশ নেই। এগুলোকে ভুয়া বললে আপনার নামাজ এবং ইসলামের মুল ভিত্তিগুলোই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে যায়। উপরের প্যারা দুটিকে পর্যব্ক্ষেণের মধ্যে রেখে কোন আবেগ নয় বরং খোলা মন নিয়ে নামাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে পঠিত দুরুদ শরীফের বাংলা অনুবাদটি বুঝার চেষ্টা করিঃ আরবী উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন্ কামা ছাল্লাইতা আলাইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা, ইন্নাকা হামিদুম্মাজিদ।

আল্লাহুম্ম বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ। বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ! মোহাম্মদ (দঃ) এর উপর ও তাঁর বংশধরের উপর আশীর্বাদ পাঠাও, যেমন আশীর্বাদ ইব্রাহীম (আঃ) ও তাঁর বংশধরের উপর পাঠিয়েছিলে। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসনীয় ও জ্ঞানী। হে আল্লাহ! মোহাম্মদ (দঃ) এর উপর ও তাঁর বংশধরের উপর বরকত পাঠাও, যেমন বরকত ইব্রাহীম (আঃ) ও তাঁহার বংশধরের উপর পাঠিয়েছিলে। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসনীয় ও জ্ঞানী।

দুরুদের প্রথম অংশে মুহম্মদ ও তার উম্মতকে ইব্রাহীম ও তাঁর উম্মতের সমান আশীর্বাদ দেয়ার জন্য প্রার্থনা করা হয়েছে। একইভাবে দ্বিতীয় অংশে মুহম্মদ ও তাঁর উম্মতকে ইব্রাহীম ও তাঁর অনুসারীদের সমান বরকত দানের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। আমরা অবশ্যই একটি লোকের সমান তখনই হতে চেষ্টা করি যখন সে মর্যাদা বা ক্ষমতায় আমার উর্ধ্বে অবস্থান করে। এখানে স্বাভাবিক সেন্সেই বুঝা যায় মুহম্মদ মর্যাদার দিক দিয়ে ইব্রাহীমের সমান নয় বলেই তাকে ইব্রাহীমের সম পর্যায়ে উন্নীত করার জন্য বলা হচ্ছে। মুহম্মদ যদি মর্যাদার দিকে থেকে ইব্রাহীমের উপরে অবস্থান করত তবে আমরা কখনই তাকে ইব্রাহীমের সমান বরকত বা আশীর্বাদ দানের জন্য স্রষ্টাকে বলতাম না বা বলার কোন যৌক্তিকতা ছিলনা।

তদ্রুপ মুহম্মদের উম্মতরা যদি ইব্রাহীমের উম্মতের চেয়ে অধিক আশীর্বাদের হত তাহলে আমরা কখনই মুহম্মদের উম্মতদের ইব্রাহীমের উম্মতের সমান করার জন্য কান্নাকাটি করতাম না। এটা করার কোন প্রয়োজনও ছিলনা। গত চৌদ্দশত বছর ধরে আমরা এই প্রার্থনা করে আসছি। কেয়ামত পর্যন্ত করব। অর্থাৎ কেয়ামত পর্যন্ত মুহম্মদকে ইব্রাহীমের সমান আশীর্বাদ ও বরকত দানের অনুরোধ চলতেই থাকবে।

যদি মুহম্মদের মর্যাদা ইব্রাহীমের সমান বা উর্ধ্বে চলে যেত তবে এই প্রার্থনাটি আর কার্যকর থাকতনা। যেহেতু কেয়ামত পর্যন্ত এই প্রার্থনা কার্যকর থাকবে সেহেতু এর মানে দাড়াচ্ছে যে নিশ্চিতভাবেই মুহম্মদ কেয়ামত পর্যন্তও ইব্রাহীমের সমান হতে পারবে না। নামাজ ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ। দুরুদ শরীফ এই স্তম্ভের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। কাজেই একে ভূয়া বা মিথ্যা বললে প্রকারান্তরে তা নামাজকেই বলা হবে।

আর নামাজকে যদি আপনি সত্য বলে মানেন তবে এতে পঠিত সব অংশকেই আপনার সত্য বলে মেনে নিতে হবে। সেই নামাজেরই একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যেখানে মুহম্মদকে ইব্রাহীমের সমান মর্যাদা দেয়না সেখানে আপনি কীভাবে মুহম্মদকে পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ বলে স্বীকৃতি দেন? এই স্বীকৃতির মাধ্যমে কী আপনি প্রকারান্তরে ইসলামের মৌলিক কথাগুলোকেই অস্বীকার করছেন না? সময়ের ব্যবধানে চৌদ্দশত বছরের পুরনো একটি ধর্মে অনেক ভ্রান্তি যোগ হতেই পারে। এটাই স্বাভাবিক। তেমনি স্বাভাবিকভবেই ধর্মের শুদ্ধিতার স্বার্থে এগুলো দূরীভূত হওয়া প্রয়োজন। উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে ইসলামের মতেই এটা প্রতিষ্ঠিত যে ইব্রাহীম আল্লাহর থেকে যে আশীর্বাদ পেয়েছিলেন তা মুহম্মদ পাননি।

সে অর্থে মর্যাদার দিক থেকে মুহম্মদ ইব্রাহীমের সমকক্ষ নন। কাজেই মুহম্মদ পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব তা ইসলামের মতানুসারেই একটি ভ্রান্ত ধারণা। আশা করি, ইসলামের শুদ্ধিতার স্বার্থে প্রচলিত এই ভ্রান্ত ধারণাটি দূরীকরণে ইসলামের সাথে সংশ্লিষ্টরা ভূমিকা রাখবেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।