আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আত্মখন্ডনের নিরীহ দূর্ঘটনা - ১

যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে

ট্রেনে কাটা পড়লে সবাই ধরে নেয় সুইসাইড, আমার ক্ষেত্রে বিষয়টা তেমন ঘটেনি। নিছকই নিরীহ একটা দূর্ঘটনা। মহাখালী ক্রসিংটা এড়াতে ডিওএইচএস রেললাইনের সীমানা দেয়ালে ছোট্ট পকেট গেট সেঁধিয়ে রেললাইনে দাড়াতেই ঘটনাটা ঘটে গেল। দেয়ালের জন্য একদিকে ট্রেনের আর অন্যদিকে টোবাকো ফ্যাক্টরীর আওয়াজ মিলে এক হয়ে গেছিলো। ফলে রেললাইনের বাম অংশে যখন আমি দাড়ালাম তখনই সোজা দ্বিখন্ডিত করে দিয়ে চলে গেলো ঢাকা-চট্টগ্রাম আন্তঃনগর।

বিকাল চারটায় ছাড়ে কমলাপুর থেকে। সচরাচর যা হয় - খন্ডিত দুই অংশ একই মানবের। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে মনে হলো উল্টো। একটা অংশ নিজের বলে চিনতে পারলেও বাকী অংশটা আমার নয় মোট্টেও। ঐরকম নাক আমার হতেই পারে না, তারপর অর্ধেক কর্তিত মাথা জুরে রাজ্যের চুল - এ রীতিমত অবিশ্বাস্য।

কিন্তু সে দাবী করে বসলো যে সে আমারই বিচ্ছিন্ন অংশ। অবশ্য আমিও বা অবিশ্বাস করি কিভাবে। নিজের চোখেই তো দেখলাম দূর্ঘটনা; অতপর বিচ্ছিন্নতা। ট্রেনটা চলে গেলে সে লাফিয়ে দাড়িয়ে গেলো এবং আমার ঘাড়ে হাত রেখে চাপড়ে দিল পিঠ - বললো, বেশ বেশ ভালই হলো, এতদিন একলা ছিলাম, এইবার নিজেই নিজের কোম্পানী হলাম। দেখতে দেখতে আমার অংশ আবার পূর্ণ হয়ে উঠলো, নতুন একটা হাত গজালো, শরীরের কর্তিত অঙ্গগুলো সব একে একে গজিয়ে কমপ্লিট করে ফেললো পুনঃনির্মাণ।

তারও দেখলাম তেমন ঘটলো। পুরোপুরি দুজন মানুষ হয়ে গেলাম। সমস্যাটা দাড়িয়েছে এরপরে। সেকি আমার সাথে থাকবে, আমরা দুজন কি একত্রে থাকবো। সম্পূর্ণ ভিন্ন মানুষ হয়ে গেছে যখন আমার অন্য একটা অংশ, তখন তার পথ সে দেখুক।

কিন্তু তেমনটি হলো না। আমার সাথেই হাঁটতে শুরু করলো। জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কেন আমার পিছু নিচ্ছো? আশ্চর্য্য! তোমার পিছু নিচ্ছি কিভাবে? আমি তো আমার কাজেই যাচ্ছি! অবাক কান্ড। আমার কাজ সব তার হয়ে গেলো। ভিন্ন মানুষ অথচ অভিন্ন আত্মা।

স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি সে নিজের মনে করতে শুরু করবে নাকি। একটু বাজিয়ে দেখার জন্য জিজ্ঞেস করলাম, তোমার কাজ কি? এইতো – বাসার জন্য একটা ইজি চেয়ার কিনতে হবে! তোমার তো ভাল করেই জানার কথা! ঠিকইতো। এমনই হবার কথা। এটা আমারই অপভ্রংশ অথবা এক্স – এর সাথে আমার পার্থক্য কোথায়, ভিন্ন হবার আগ পর্যন্ত সবই যে অভিন্ন। বাম পাশে সে হাঁটছে, ডান পাশে আমি।

ফুটপথ থেকে নেমে গেলাম ব্যস্ত সড়কে। ফ্লাইওভারের নীচে মহাখালী মোড়ে যেমন ইচ্ছে তেমন পেড়ুতে হয়। সামনে একটা বাস দাড়ানো। সে বামে থাকায় বাসের সামনে দিয়ে ক্রস করে গেলো। আমি ডান দিকে, বাসের পেছনটা নিকটে বলে সেদিক থেকে পেড়ুনোই সহজ মনে হলো।

কিন্তু পেছনে আরেকটা বাস থাকায় আরো একটু ঘুরতে হলো, কিন্তু ততক্ষণে মিঃ এক্স ঐপাশে গিয়ে হাজির। আমার জন্য অপেক্ষা করছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.